‘সৃজনশীল ও কার্যকর বই বিক্রয় কৌশল’ নিয়ে কর্মশালা

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ : ২১ অক্টোবর ২০২৫, ০১: ০৯

দেশে সৃজনশীল বইয়ের বাজার খুবই ছোট। দেড় দশকেরও বেশি ফ্যাসিবাদী শাসনের কুফল সৃজনশীল প্রকাশনা খাতেও পড়েছে। প্রকাশকদের অর্থনৈতিক অবস্থা ও বর্তমান বইয়ের বাজার খুবই মন্দা যাচ্ছে।

এমন প্রেক্ষাপটে বৈষম্যবিরোধী সৃজনশীল গ্রন্থ প্রকাশক সমিতির উদ্যোগে সোমবার বিকাল ৩টায় ‘সৃজনশীল ও কার্যকর বই বিক্রয় কৌশল’ শীর্ষক কর্মশালার আয়োজন করা হয়।

বিজ্ঞাপন

পুরনো ঢাকার স্থানীয় একটি রেঁস্তোরায় কর্মশালার উদ্বোধন করেন ‘প্রতিদিনের বাংলাদেশ’ সম্পাদক মারুফ কামাল খান।

কর্মশালা পরিচালনা করেন প্রশিক্ষক ও মোটিভেশনাল স্পিকার রাজিব আহমেদ। সমিতির সভাপতি সাঈদ বারীর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হাসান, সহ-সভাপতি মো. হেলালউদ্দিন ও প্রকাশক ওয়াহিদ তুষার।

মারুফ কামাল খান বলেন, মানুষের সভ্যতা এবং বই- এ দুটোই সমান বয়সী। মানুষের সভ্যতার বিকাশের পথ ধরেই বইয়ের উদ্ভব ঘটেছে। এবং এই বই বা গ্রন্থ মানুষের সভ্যতাকে আরও আলোকিত এবং বিকশিত করেছে। বই হলো জ্ঞান ও আনন্দের প্রধান ধারক-বাহক। আমরা যদি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়তে চাই, মানুষকে আলোকিত করতে চাই, বর্বরতা থেকে সভ্যতার দিকে যাত্রা করতে চাই- সামনে এগিয়ে যেতে চাই-তাহলে আমাদের অবশ্যই বই পড়তে হবে। কেননা, যে জাতি বইয়ের দিক থেকে যত সমৃদ্ধ: সে জাতি অন্যান্য সকল দিক থেকেই সভ্যতার সোপানে আরহন করে।

তিনি বলেন, আমরা এমন একটা ভূ-খণ্ডের মানুষ। যেখানে মানুষ যে সমস্ত জ্ঞান অর্জন করেন তা আনন্দের মধ্য দিয়ে করেন। যে সমস্ত কাজ করেন তাও আনন্দের মধ্য দিয়ে করেন। এই দেশ কবিতার দেশ, গল্পের দেশ, গানের দেশ, শিল্পের দেশ ছন্দের দেশ। এখানে ধান কাটে গান গাইতে গাইতে। মাড়াইও করে গাইতে গাইতে। আলপনা আঁকে গানে-ছন্দে, ঘরে দরজা তৈরি করে শিল্পে-ছন্দে। সব কিছুর মধ্যেই এখানে শিল্প-ছন্দ জড়িয়ে আছে, আনন্দ জড়িয়ে আছে। আমাদের এখানের জারি-সারি, বাউল-ভাটিয়ালি, পুঁতি পাঠের মধ্যেও যেমন এখানে আনন্দ আছে: তেমনই এখান থেকে আমরা তাত্ত্বিক জ্ঞান অর্জন করি। এই আনন্দ এবং জ্ঞানের যে সম্পর্ক; এটা আমাদের বড় ঐতিহ্য। এই ঐতিহ্য এবং জ্ঞান ও আনন্দের প্রধানতম বাহন হচ্ছে বই। এই বইয়ের বিক্রি এখন কমে গেছে! কেন কমে গেছে-তা আমাদের এখনই খুঁজে বের করতে হবে। এ কাজটা প্রকাশকদেরই আগে করতে হবে। তা না হলে আমরা পিছিয়ে যাবো।

মারুফ কামাল খান সোহেল আরো বলেন, আয়তনের দিক থেকে না হলেও আমরা জনসংখ্যার দিক থেকে বিশ্বের সপ্তম কিংবা ষষ্ঠ দেশ। আমাদের এখন অর্থনৈতিক অবস্থা বিগত একশত বা ৫০ বছরের চেয়ে বেশ অগ্রসর হয়েছে। ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে, শিক্ষার হার বেড়েছে বইয়ের বিক্রি তো কমার কথা নয়। অনেকে বলেন ইন্টারনেট ও প্রযুক্তিগত সুবিধার কারণে বইয়ের বিক্রি কমে গেছে। এটা আমি বিশ্বাস করি না। কারণ, আপনি যদি পশ্চিমা বিশ্বের দিকে তাকিয়ে দেখেন; তাহলে দেখবেন তাদের হাতে হাতে, ঘরে ঘরে ইন্টারনেট এবং প্রযুক্তির বহুল ব্যবহার এবং সুযোগ সুবিধাও অনেক বেশি। কিন্তু তারা এখনও প্রায় সবাই বই পড়েন। রাস্তায় বের হলেই তাদের হাতে বই থাকে। বাসে-ট্রেনে বা অন্যান্য মাধ্যমে যাতায়াত করার সময় তারা বই পড়েন। এসব দেশে এখনও বইয়ের যথেষ্ট বিক্রি আছে। আমাদের দেশে কেন নাই? এটার একটা কারণ হলো আমাদের জ্ঞান অর্জনের সঙ্গে: শিক্ষার সঙ্গে আনন্দের যে সম্পর্ক আছে সেই জায়গা থেকে সরে এসেছি। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করতে হবে। এদিকে সংশ্লিষ্টদের আরও বেশি নজর দিতে হবে। শিক্ষার সঙ্গে আনন্দের যে একটা সম্পর্ক ছিল তা ফিরিয়ে আনতে হবে। শিক্ষাক্ষেত্রে জ্ঞান অর্জনের জন্য আনন্দময় পরিবেশ তৈরি করতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে সাঈদ বারী বলেন, দেশে সৃজনশীল বইয়ের বাজার খুবই ছোট। দেড় দশকেরও বেশি সময়কালের ফ্যাসিবাদী শাসনের কুফল সৃজনশীল প্রকাশনা খাতেও পড়েছে। প্রকাশকদের অর্থনৈতিক অবস্থা ও বর্তমান বইয়ের বাজার খুবই মন্দা যাচ্ছে। এরকম প্রেক্ষাপটে এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে।

বিষয়:

আমার দেশ
এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত