সংগীত ও ট্রান্সজেন্ডার শিক্ষকের কোটা বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৫: ৪৩
আপডেট : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৭: ৪৪

প্রাথমিক শিক্ষায় ইসলাম ধর্ম শিক্ষক নিয়োগের দাবি এবং সংগীত ও ট্রান্সজেন্ডার বা সমকামী শিক্ষকের কোটা বাতিলের দাবিতে বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছে মূল্যবোধ আন্দোলন নামে একটি সংগঠন।

বিজ্ঞাপন

মূল্যবোধ আন্দোলনের মুখপাত্র ইঞ্জিনিয়ার মুহাম্মাদ সাদাত বলেন, আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে, সরকার একদিকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ইসলাম ধর্ম শিক্ষক নিয়োগে জনগণের দীর্ঘদিনের দাবিকে উপেক্ষা করে অযাচিতভাবে সঙ্গীত শিক্ষক নিয়োগের ঘোষণা প্রদান করেছে, অন্যদিকে কোটার ভিত্তিতে তৃতীয় লিঙ্গ তথা ট্রান্সজেন্ডার বা সমকামীদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। জন্মগত লিঙ্গ প্রতিবন্ধী বা হিজড়াদের সাথে আমাদের কোনো বিরোধ নাই। কিন্তু, অসংজ্ঞায়িত 'তৃতীয় লিঙ্গ' কোটার মাধ্যমে ‘ট্রান্সজেন্ডার’ বা সমকামীদের সুযোগ প্রদান করা হবে বলে আমরা আশঙ্কা করছি এবং অবিবেচনাপ্রসূত এই সরকারি সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।'

তিনি আরো বলেন, 'সম্প্রতি ওয়েভ ফাউন্ডেশনের জরিপে দেখা গেছে, দেশের প্রাথমিক শিক্ষায় ভয়াবহ সংকট বিদ্যমান। ১ম ও ২য় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ১০.২৮% ছেলে ও ৮.৭১% মেয়ে বাংলা বইয়ের একটি বর্ণও পড়তে পারে না। ১৩.৬২% ছেলে-মেয়ে এক অঙ্কের সংখ্যা পর্যন্ত চিনতে অক্ষম। ১৬.৭৮% ছেলে ও ১৫.২২% মেয়ে ইংরেজি বইয়ের একটি বর্ণও পড়তে পারে না। এই ভয়াবহ চিত্র প্রমাণ করে যে, প্রাথমিক স্তরে মৌলিক শিক্ষা বাংলা, ইংরেজি ও গণিত অর্জনই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। অথচ এই অবস্থায় সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত শিক্ষক নিয়োগ দিচ্ছে।'

মূল্যবোধ আন্দোলনের সমন্বয়ক মুহসিনুদ্দীন মাহমূদ বলেন, '৬ অক্টোবর ২০২৪ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. শহিদুল ইসলাম মিলন দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করে নিয়োগ দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে সরকারকে আইনি নোটিশ পাঠান। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব, জনপ্রশাসন সচিব, অর্থ সচিব এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে এ নোটিশ পাঠানো হয়। বিগত একবছরেও সরকার এই বিষয়ে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। অথচ সাম্প্রতিক গেজেট অনুযায়ী সরকারি নিয়োগে ১% কোটা শারীরিক প্রতিবন্ধী ও ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ প্রার্থী তথা সমকামীদের জন্য সংরক্ষণ করা হয়েছে।'

তিনি বলেন, 'আমরা মনে করি, মৌলিক শিক্ষায় যখন ভয়াবহ ঘাটতি, তখন সংগীতের শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া শিক্ষানীতির সাথে সাংঘর্ষিক এবং অগ্রাধিকারভিত্তিক জাতীয় স্বার্থবিরোধী। ৯২% মুসলিমের ট্যাক্সের টাকায় তাদের সন্তানদের বাধ্যতামূলকভাবে সংগীতের নামে বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার শেখানো রাষ্ট্রের উগ্র ইসলামবিদ্বেষী সাম্প্রদায়িকতারই বহিঃপ্রকাশ।'

ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশের (আইইউবি) সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন বলেন, 'বাংলাদেশের ৯২% মুসলিম জনগোষ্ঠী থাকা সত্ত্বেও প্রাথমিক স্তরে ইসলাম শিক্ষার জন্য নির্দিষ্ট শিক্ষক নেই। অথচ সংগীতের মতো বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে শিক্ষক নিয়োগ স্পষ্টতই জাতীয় চাহিদা ও সাংস্কৃতিক বাস্তবতার সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। তৃতীয় লিঙ্গ কোটার মাধ্যমে, যার আইনগত সংজ্ঞাও এখনো অস্পষ্ট, শিক্ষাব্যবস্থায় সমকামিতার মতো সামাজ ও ঈমানবিধ্বংসী এজেন্ডার অনুপ্রবেশ ঘটানো হচ্ছে। এটি শিক্ষাক্ষেত্রে নতুন দ্বন্দ্ব ও বিভাজন তৈরি করবে।

মূল্যবোধ আন্দোলনের পক্ষ থেকে ড. মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন দাবি জানিয়ে আরো বলেন, প্রাথমিক স্তরে বাংলা, ইংরেজি ও গণিত শিক্ষার মানোন্নয়নকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া, ইসলামিক শিক্ষার জন্য নির্দিষ্ট শিক্ষক নিয়োগ নিশ্চিত করা, দেশের ৬৫ হাজার ৫০০ এর বেশী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত শিক্ষক নিয়োগ বাতিল করে মৌলিক বিষয়গুলিতে দক্ষ শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া এবং সরকারি নিয়োগে বিতর্কিত তৃতীয় লিঙ্গ কোটা বাতিল করা হোক।

জাতির ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শিক্ষা ও চরিত্র গঠনের স্বার্থে অবিলম্বে এই দাবিসমূহ মেনে নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।'

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত