ঢাকার বাসযোগ্যতাকে ধ্বংস থেকে বাঁচাতে পেশাজীবীদের ১৭ দাবি

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ : ০৪ নভেম্বর ২০২৫, ২০: ২০

ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) পুনঃসংশোধনের সাম্প্রতিক সরকারি উদ্যোগের বিরুদ্ধে পেশাজীবীরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, ব্যবসায়িক স্বার্থে ফ্লোর এরিয়া রেশিও (এফএআর), জনঘনত্ব ও আবাসন ইউনিট বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত ঢাকার বাসযোগ্যতাকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিবে। সেইসাথে নগর জীবনের প্রতিটি খাতে অসহনীয় চাপ সৃষ্টি করবে। সেজন্য ঢাকার বাসযোগ্যতাকে ধ্বংস থেকে বাঁচাতে তারা ১৭ টি দাবি জানিয়েছেন।

মঙ্গলবার রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সফিকুল কবির মিলনায়তনে পরিবেশকর্মী, আইনজীবী, শিক্ষক, পরিকল্পনাবিদ, স্থপতি, প্রকৌশলী, অর্থনীতিবিদসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার ব্যক্তিদের উদ্যোগে আয়োজিত ‘কার স্বার্থে আবারও পরিবর্তন ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ)’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন থেকে দাবিগুলো জানানো হয়।

বিজ্ঞাপন

ড্যাপ ও ইমারত নির্মাণ বিধিমালার ত্রুটিপূর্ণ পরিবর্তন প্রক্রিয়া বন্ধ করা, অগ্নি দুর্ঘটনার ক্ষয়-ক্ষতি কমাতে সরু রাস্তার পাশে বহুতল ভবন নির্মাণ অনুমোদন বন্ধ করা, গত তিন বছরে ড্যাপ এর বাস্তবায়নের অগ্রগতি ও চ্যালেঞ্জসমূহের মূল্যায়ন করা, বিভিন্ন সংগঠন কর্তৃক ড্যাপ ও ইমারত সংক্রান্ত প্রেরিত সকল প্রস্তাবনা যথাযথ বিবেচনা করা, ড্যাপ ও ইমারত নির্মাণ বিধিমালার যে কোন সংশোধন জনকল্যাণ ও শহরের বাসযোগ্যতাকে মাথায় রেখে করা,- কৃষিজমি-জলাভূমি-বন্যা প্রবাহ এলাকায় যে কোন ধরনের উন্নয়ন নিষিদ্ধ করে অবৈধ দখলদারদের আইনের আওতায় আনা, উচ্চ এফএআর মান কমিয়ে গ্রহণযোগ্য মানে আনা, এলাকাভেদে ভবনের উচ্চতার সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করা, ইমারত নির্মাণ বিধিমালায় ভবনের মধ্যবর্তী কৌণিক দূরত্ব বিবেচনায় নিয়ে সেটব্যাকের যথাযথ মান নিশ্চিত করা, পরিকল্পনা ও নীতি প্রণয়নে আবাসন ব্যবসায়ীসহ স্বার্থের সংঘাত আছে এমন কাউকে অন্তর্ভুক্ত না করা, এফএআর মান ও কাঠাপ্রতি পরিবারের সংখ্যা নির্ণয় করে সামাজিক আবাসন ও নিম্নবিত্তের আবাসনের জন্য প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা ও ঢাকার উপর ক্রমবর্ধমান চাপ কমাতে এবং বিকেন্দ্রীকরণ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা করাসহ দাবিগুলো উপস্থাপন করেন লেখক ও সংবিধান সংস্কার কমিটির সাবেক সদস্য ফিরোজ আহমেদ।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবান ও রিজিওনাল প্ল্যানিং বিভাগের অধ্যাপক নগর পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খান ও বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক আমিরুল রাজিব। তারা অভিযোগ করে বলেন, সাম্প্রতিক সংশোধনীতে ঢাকার অধিকাংশ এলাকায় এফএআর বাড়ানোর প্রস্তাবের কারিগরি ভিত্তি দুর্বল এবং এটি বাস্তবায়িত হলে শহরের অবকাঠামো, নাগরিক সেবা, পরিবহন ব্যবস্থা, জলাবদ্ধতা নিয়ন্ত্রণ ও বায়ু মান -সব ক্ষেত্রেই ভয়াবহ সংকট সৃষ্টি হবে। পেশাজীবী ও পরিবেশবিদদের মতামত উপেক্ষা করে ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে একাধিকবার ড্যাপ সংশোধন করা হয়েছে। এই সংশোধনগুলোর ফলে ঢাকা বসবাসযোগ্যতা হারাবে।

এছাড়াও জানানো হয়, ড্যাপ পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী। নগর পরিকল্পনার মূল চেতনা হলো অর্থনৈতিক উন্নয়ন, পরিবেশ সংরক্ষণ ও নাগরিক কল্যাণের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা। কিন্তু বর্তমান সংশোধন প্রক্রিয়া সেই চেতনার পরিপন্থি।

পেশাজীবীদের পক্ষ থেকে আরো বলা হয়, ঢাকা শুধু রাজধানী নয় -এটি আমাদের দেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। পরিকল্পনাহীন উন্নয়ন ঢাকাকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দিচ্ছে। এখনই সচেতন না হলে আগামী প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য ঢাকা আর অবশিষ্ট থাকবে না।

সংবাদ সম্মেলনে আরো বক্তব্য দেন, ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, সৈয়দ শাহরিয়ার আমিন, গাউস পিয়ারি ও ইবনুল সৈয়দ রানা প্রমুখ।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত