প্রতিনিধিত্ব ও স্থিতিশীল সরকারের জন্যই পিআর লাগবে: এনডিএফ

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ : ২৪ আগস্ট ২০২৫, ১৫: ২৮

বিদ্যমান প্রচলিত পদ্ধতিতে নির্বাচনে জনগণের প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব না থাকায় আকাঙ্খা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরামের (এনডিএফ) নেতারা।

তারা বলেন, গত ৫৪ বছরে যারাই ক্ষমতায় এসেছে মানুষের আকাঙ্খা পূরণ করতে পারেনি। কারণ, প্রচলিত পদ্ধতিতে জনগণের অধিকার রক্ষা হয়না। প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব ও স্থিতিশীল সরকার গঠন করতে হলে পিআর পদ্ধতি লাগবেই।

বিজ্ঞাপন

রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবে "পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন ও জুলাই সনদের আইনীভিত্তি" শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।

এনডিএফ'র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. রুহুল কুদ্দুস বিপ্লবের সঞ্চালনায় এতে পিআর পদ্ধতি নিয়ে মূল প্রবন্ধ তুলে ধরেন সংগঠনটির জেনারেল সেক্রেটারি অধ্যাপক ডা. মাহমুদ হোসেন। সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে মূল আলোচক ছিলেন, ডেপুটি অ্যাটোর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট সাইফুর রহমান।

মূল প্রবন্ধে এনডিএফ'র জেনারেল সেক্রেটারি ডা. মাহমুদ হোসেন বলেন, বিশ্বের ১২১টি দেশে পিআর পদ্ধতি কাজ করছে। এর মধ্যে জার্মানি, স্পেন, শ্রীলংকাসহ অন্তত ২৫টি দেশে সরাসরি এই পদ্ধতিতেই নির্বাচন হচ্ছে। পিআর পদ্ধতিতে প্রকৃত প্রতিনিধিত্বশীল সরকার উঠে আসে, স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি পায়।

তিনি বলেন, 'জোটভিত্তিক নির্বাচনে বিভিন্ন দলের প্রতি সমঝোতা তৈরি হয়। হঠাৎ কোনো নীতির পরিবর্তন হলে এটার পক্ষে সরে আসা সহজ হয়, জনস্বার্থ প্রাধান্য পায়। পররাষ্ট্রনীতি, ব্যবসার ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হলে দরকার পিআর পদ্ধতি। যেসব দেশ এই পদ্ধতিতে গেছে, তারা অর্থনীতিতে অনেক শক্তিশালী হয়েছে, সমাজে ধনী-গরিব বৈষম্য কমে এসেছে।'

এনডিএফ সভাপতি অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, জনগণের অভিপ্রায় হচ্ছে মূল বিষয়। ৩৬ জুলাইয়ে জনগণের যে চাওয়া ছিল সেটাকে ধরেই প্রেসিডেনশিয়ালি জুলাই ঘোষণাপত্র আইনীভিত্তি দিতে হবে ও পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন করতে হবে। বিপ্লবীরা লড়াই করেছে, জীবন দিয়েছে, আহত হয়েছে কিন্তু তারা ক্ষমতা গ্রহণ না করে তৃতীয়পক্ষকে ক্ষমতায় বসানোয় মূলত সাংবিধানিক সংকট তৈরি হয়েছে।

সরকারের উচিত যে বিপ্লবের মধ্যদিয়ে তারা দেশ চালানোর সুযোগ পেয়েছে, সেটাকে সামনে নিয়ে সিদ্ধান্তগ্রহণ। আমরা বিশ্বাস করি, একটি প্রকৃতি প্রতিনিধিত্বশীল, স্থিতিশীল সরকার গঠন করতে হলে অবশ্যই পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন লাগবে। এটি বাংলাদেশে ভবিষ্যত গণতন্ত্রের জন্য দূরদর্শী পদক্ষেপ। বর্তমান ব্যবস্থায় নির্বাচন হলে স্বৈরাচারি হওয়ার প্রবণতা থাকে, পিআরে সেই সুযোগ নেই। নির্বাচনের আগেই এগুলো বাস্তবায়নের দাবি জানান তিনি।

মূল বক্তা ডেপুটি অ্যাটোর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট সাইফুর রহমান বলেন, আজ আমরা যে দাবি নিয়ে এখানে বসেছি তা আসলে বসার কথা ছিলনা। সমস্যাটা হয়েছে বিপ্লবীরা দায়িত্ব না নিয়ে তৃতীয় পক্ষকে রাষ্ট্র পরিচালনায় বসিয়েছে। এ কারণে গাড়ি রাঙামাটি যাওয়ার কথা থাকলেও কক্সবাজারে চলে গেছে। আজ আমরা যত রাজনৈতিক কর্মী আছি, নিজেরা চালকের আসনে না থাকলে এ অবস্থার পরিবর্তন হবে না।

তিনি বলেন, আমরা প্রত্যেকটা নির্বাচনে দেখি হেরে যাওয়ায় বহু প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মারা যান। বর্তমান নির্বাচন ব্যবস্থা একটি ব্যাকডেটেড ব্যবস্থা। বর্তমানে ব্যবস্থায় নির্বাচনে অংশ না নিলেও টেকনোক্রেট মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ারও পদ্ধতি আছে। অনেকে বলেন, এ পদ্ধতিতে নির্বাচন করলে এমন এমন ব্যক্তি মন্ত্রী সংসদ সদস্য হবেন যারা কখনো নির্বাচন করলেও সংসদে আসতে পারত না। কিন্তু বাস্তবতা হলো এই পদ্ধতিতে উপযুক্ত ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের দায়িত্ব নেওয়ার সুযোগ হয়৷

পিআর পদ্ধতির কারণে ছেট ছোট দলগুলো একত্রিত হলে রাষ্ট্রের কোনো ক্ষতি হবেনা। বর্তমান ব্যবস্থায় নির্বাচনে হারলেই পরের দিন গামছা বেঁধে রাস্তায় নামে, গাড়িতে আগুন জ্বলে। এমন অনেক দল আঠে, বছরের পর বছর ধরে তারা রাজনীতি করে এসেছে। কিন্তু, বড় দলের লেজ না ধরলে সংসদে যেতে পারেনা।

সাইফুর রহমান আরও বলেন, বিপ্লব হয়েছে, নতুন সরকার গঠন হয়েছে কিন্তু মূল বিষয়গুলোতে এখনো চূড়ান্ত হয়নি। বিপ্লবীদের বিরুদ্ধে কিছু করা যাবেনা এটি শুধু মৌখিক ঘোষণায় রাখলে, আইনীভিত্তি না পেলে এটা কোনো কাজে আসবেনা, টিকবেনা।

অবশ্যই রাষ্ট্রপ্রতির আদেশের মাধ্যমে আইনীভিত্তি দিতে হবে। ব্যবসায় চুক্তি হলে নিবন্ধন না হলে যেমন সেই চুক্তির ভিত্তি নেই, ঠিক তেমনি কেবলমাত্র একটা বক্তব্যের মধ্যে লড়াই যারা করেছে তাদের স্বার্থ রক্ষা হবেনা, দরকার আইনীভিত্তি।

এই আইনজীবী বলেন, 'কেউ কেউ বলেন পিআর আমাদের সংবিধানে নেই। তাহলে প্রধানমন্ত্রী পালিয়ে যাওয়াও তো সংবিধানে নেই, একসঙ্গে দেশের সব সংসদ সদস্য, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে আউট করে দেওয়াও সংবিধানে নেই। আইনে বলা আছে, কোনো চেয়ারম্যান দায়িত্ব পালন করতে না পারলে, তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে তাকে সিস্টেমেটিক বাদ দিতে হবে। এই বিধান দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।

পদত্যাগের আগে বিচারকেরা সুপারিশ করে গেছে৷ ফলে রাষ্ট্রপতি যা আদেশ করবেন সেটাই এখন সংবিধান। একই উপায়ে পিআর, জুলাই ঘোষণাপত্রকে আইনীভিত্তি দিতে পারবে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত