আমার দেশ জনপ্রিয় বাংলা নিউজ পেপার

জতীয় সংলাপে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা

শিশুদের প্রতি সহিংসতা বন্ধে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান

স্টাফ রিপোর্টার
শিশুদের প্রতি সহিংসতা বন্ধে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান

শিশুদের প্রতি সহিংসতা বন্ধ ও শোষণ রোধে সমন্বিত সামাজিক উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা। তারা বলেছেন, গার্মেন্টস শ্রমিকদের শিশু সন্তানদের জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হলে স্থানীয়ভাবে শিশু সুরক্ষার কাঠামো গড়ে তুলতে হবে, যা কমিউনিটি-ভিত্তিক, টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক হতে হবে। এক্ষেত্রে নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার বিভাগ ও সমাজকল্যাণ বিভাগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত ‘কমিউনিটি বেইেজড চাইল্ড প্রোটকেশন মেকানিজম ফর দ্য চিলড্রেন অব গার্মেন্টস ওর্য়ার্কাস ইন বাংলাদশ’ শীর্ষক ওই সেমিনার এ সব কথা বলেন তারা। উন্নয়ন সংস্থা ‘টেরে ডেস হোমস্ নেদারল্যান্ডস’ (টিডিএইচ-এনএল), ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স (বিটিএস) ও ভিলেজ এডুকেশন রিসোর্স সেন্টার (ভার্ক) আয়োজিত সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন টিডিএইচ-এনএল বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার নজরুল ইসলাম। বিটিএস’র পরিচালক মো. জাহিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় সেমিনারে বক্তৃতা করেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. সাইদুর রহমান খান, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের পরিচালক (যুগ্ম সচিব) নাঈমা হোসেন, পদ্মা এ্যাপারেলস ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক জাবেদ হোসেন ভূঁইয়া, সহকারি কমিশনার ফারিয়া তাসনিম, জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা রাশেদা বেগম, টিডিএস-ইতালিয়ার কান্ট্রি রিপ্রেজনটেটিভ রাজীব দেবনাথ, ওয়ার্ড কাউন্সিলর মেহেরুন নেসা ও পারভীন আক্তার, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের উপদেষ্টা মাবরুক মোহাম্মদ, ইনসিডিনের প্রকল্প পরিচালক অ্যাডভোকেট মো. রফিকুল আলম প্রমূখ।

বিজ্ঞাপন

সেমিনারে ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন টিডিএইচ-এনএল’র প্রোগ্রাম কো-অডিনেটর নূরুল কবির। তিনি বলেন, লক্ষ লক্ষ শিশু তাদের পরিচয়ের অধিকার থেকে বঞ্চিত। দেশে ১০২টি শিশু আদালত থাকলেও, কিশোর বিচার ব্যবস্থায় শিশুদের জড়িত ২৩ হাজারের বেশি মামলা এখনো বিচারাধীন। গত বছরের তুলনায় ৭৫ ভাগ মেয়ে শিশুর নির্যাতন বেড়েছে। চলতি বছরের প্রথম ৭ মাসে ৩০৬ জন শিশু সহিংসতার শিকার হয়েছে।

ইউনিসেফের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি আরো বলেন, এক থেকে ১৪ বছর বয়সী প্রতি ১০ জন শিশুর মধ্যে ৯ জন শারীরিক শাস্তি বা মানসিক নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। এই নিপীড়নের সঙ্গে তাদের অভিভাবক, শিক্ষক বা রক্ষক হিসেবে যারা দায়িত্ব পালন করেন, তারা জড়িত। আর ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুদের প্রায় ৭ শতাংশ শিশু শ্রমে জড়িত এবং অতি অল্প বয়সী শিশুরাও ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে কাজ করছে। এক্ষেত্রে সব থেকে অবহেলিত পোশাক খাতের শ্রমিকদের শিশুরা।

সেমিনারে মহাপরিচালক মো. সাইদুর রহমান খান বলেন, শিশুরা এখনো বিভিন্ন ধরণের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। ইন্টারনেটের দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান ফাঁদে পড়ছে তারা। শিশুর সুস্থ্য বিকাশের স্বার্থে এগুলো বন্ধ করতে হবে। শিশুদের নিরাপদ ও সুস্থ্য ভবিষ্যতের জন্য কমিউনিটির অন্তর্ভুক্তি জরুরি। এ বিষয়ে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। শিশুদের নিয়ে কর্মরত সরকারি বেসরকারি সংগঠনগুলোকে নিয়ে ‘ন্যাশনাল প্লাটফর্ম ফর চাইল্ড প্রটেকশন’ গঠন করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

সম্মিলিত প্রচেষ্টায় শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব বলে মনে করেন যুগ্ম সচিব নাঈমা হোসেন। তিনি বলেন, সরকার শিশুদের সুরক্ষায় নানা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। শিশু আইন প্রয়োগের পাশাপাশি সহিংসতা প্রতিরোধে জরুরি সেবা কার্যক্রম চলছে। তবে সকলের সমন্বিত প্রচেষ্টা ছাড়া শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ করা অসম্ভব।

সভাপতির বক্তব্যে নজরুল ইসলাম বলেন, অনেকেই কর্মের খোঁজে পরিবারসহ গ্রাম থেকে নগরে আসেন। কিন্ত শিশুদের যে সুবিধা গ্রামে পাওয়া যায়, যা নগরে নাই। ফলে ওই সকল পরিবারের শিশুরা চরম অনিশ্চয়তায় বেড়ে ওঠে। তাই বেসরকারি কারখানা শ্রমিক পরিবারের সন্তানসহ প্রান্তিক সম্প্রদায়ের শিশুদের জন্য টেরে দেস হোমস বর্তমানে মিরপুর ও গাজীপুরে ১৬টি আর্লি চাইল্ডহুড ডেভলপমেন্ট সেন্টার পরিচালনা করছে। শ্রমিক পরিবারের শিশুদের দেখভাল করতে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকদের উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।

সেমিনারে উত্থাপিত সুপারিশে বলা হয়, পোশাক শ্রমিকদের শিশুদের নির্যাতন ও শোষণ প্রতিরোধে গার্মেন্টস শ্রমিকদের শিশুদের জন্য একটি শিশুবান্ধব সুরক্ষা কাঠামোর ধারণা তৈরি করতে হবে। গার্মেন্টস এলাকায় পাইলট ভিত্তিতে কমিউনিটি ভিত্তিক শিশু সুরক্ষা কাঠামো গঠন করতে হবে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মধ্যে একটি বিশেষায়িত শিশু সুরক্ষা ইউনিট প্রতিষ্ঠা করতে হবে। মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মতো একটি শিশুবান্ধব অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা করতে হবে। একটি সমন্বিত জাতীয় শিশু সুরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, যাতে শিশুদের প্রতি সহিংসতা, নির্যাতন, অবহেলা ও শোষণ প্রতিরোধ করা যায়। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ড অনুযায়ী আইন সংস্কার ও নীতিমালা হালনাগাদ এবং শিশুদের জন্য একটি শিশুবান্ধব বিচার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

Google News Icon

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন