রাজধানীতে ফুটপাত দখল নিয়ে সংঘর্ষে নিহত ১

রাজধানীর রূপনগর এলাকায় ফুটপাতের দখলদারিত্ব নিয়ে যুবদলের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় আহত যুবদল কর্মী মো. শাহ আলম (৩২) মারা গেছেন।

রোববার মিরপুরের ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এ ঘটনায় পুলিশ সাগর, রুস্তম ও জিলানীসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। যুবদল কর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় ওই এলাকায় টান-টান উত্তেজনা বিরাজ করছে। ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত ২০ মার্চ রাত সাড়ে ১০টার দিকে মিল্কভিটা মোড়ে তরমুজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ছিলেন মো. শাহ আলম। এ সময় যুবদল নেতা মিল্টনের অনুসারী সাঈদ, জিলানী, মানিক, জুম্মান, শরীফ, আমিনুল, ইয়াছিন, সাগর, গনি সহ প্রায় ১৫-২০ জন রায়হান নামে এক যুবদল কর্মীকে টেনে হেঁচড়ে রূপনগর থানার সামনে বস্তির ক্লাবে নেওয়ার চেষ্টা করে। শাহ আলম প্রতিবাদ করলে রায়হানকে ছেড়ে দিয়ে তার ওপর হামলা চালানো হয়। শাহ আলমকে এলোপাতাড়ি কিল, ঘুষি, লাথি এবং রড দিয়ে মারধর করা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় এলাকাবাসী তাকে উদ্ধার করে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে ভর্তি করেন। অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয় এবং পরবর্তীতে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় তিনি মারা যান।

স্থানীয়দের দাবি, রূপনগর এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি ও অটোরিকশার অবৈধ সংযোগ, সড়কের ফুটপাত দখল এবং মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিরোধ চলছে। এসব নিয়ে প্রায়ই সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এলাকায় যুবদলের দু’টি গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। প্রায় সময় তারা সংঘর্ষে জড়ায়। বিশেষ করে ৫ আগস্ট এর পরে দু’গ্রুপের দ্বন্দ্ব আরও প্রকট হয়েছে।

এ বিষয়ে পল্লবী থানা যুবদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন বলেন, শাহ আলম আমাদের দলের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের কঠোর শাস্তি দাবি করছি। তিনি আরও জানান, যারা এই হামলা চালিয়েছে তারা আরমান সোহেলের লোকজন। আরমান সোহেল যুবদল নেতা মিল্টনের অনুসারী। এ বিষয়ে যুবদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন জানান, রাজনীতি করি, অনেকেই মিছিল-মিটিংয়ে আসেন এবং চলে যান। সবাইকে ব্যক্তিগতভাবে চেনা সম্ভব নয়।

যোগাযোগ করা হলে রূপনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো .মোকাম্মেল হক যুবদলের কর্মীর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, এলাকার আধিপত্যের বিস্তার কে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে ওই এলাকায় তাদের দু’গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল । ওই দ্বন্দ্বের কারণে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটায় শাহ আলম মারা যান। তিনি আরও জানান, আমরা ঘটনাটি তদন্ত করছি। তদন্তের পর বিস্তারিত জানা যাবে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই হুসাইন মাহমুদ বলেন, এ ঘটনায় রূপনগর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের ধরতে অভিযান চলছে। তদন্ত কার্যক্রম এখনো চলমান রয়েছে।

তিনি আরও জানান, এই হত্যাকাণ্ডের পর রূপনগর এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। স্থানীয় বাসিন্দারা আতঙ্কে রয়েছেন। নিহত শাহ আলমের স্ত্রী ও দুই সন্তান বর্তমানে আর্থিক সঙ্কটে পড়েছেন। স্থানীয়রা দ্রুত দোষীদের গ্রেপ্তার ও সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানিয়েছেন।

এমএস