গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞানী এবং ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. জিকেএম মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, ‘মাটি আমাদের কেবল সম্পদ নয়, একই সাথে আমাদের অস্তিত্ব রক্ষার এক চিরন্তন আশ্রয়।’
বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস ২০২৫ উপলক্ষে এক আনুষ্ঠানিক বক্তব্যের বাণীতে তিনি এ মন্তব্য করেন। বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘এ বছরের মৃত্তিকা দিবসের প্রতিপাদ্যই হলো 'সুস্থ নগরের জন্য সুস্থ মাটি'।
সুতরাং শহরের মাটি যে এক নীরব প্রাণ যার উপর দাঁড়িয়েই শহরের জীবন টিকে থাকে এ কথা বলার আর অপেক্ষা থাকেনা। কিন্তু দ্রুত নগরায়নের চাপে সেই মাটিই আজ অসুস্থ হয়ে পড়ছে।
বৈজ্ঞানিক গবেষণার মাধ্যমে আমি দেখেছি, কংক্রিটের অতিরিক্ত ব্যবহার মাটির ওপরের স্তরে বায়ু ও পানি চলাচল বন্ধ করে দেয়, ফলে মাটির জীবাণু যেমন ইতিবাচক ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গাস ও নানা উপকারী কীট-পতঙ্গ হ্রাস পায়। এরা না থাকলে মাটির প্রাকৃতিক সার উৎপাদন ক্ষমতা ভেঙে পড়ে।
অন্যদিকে, শিল্পকারখানার ভারী ধাতব দূষণ (যেমন সীসা, ক্যাডমিয়াম, আর্সেনিক) মাটির পুষ্টি চক্রে বাধা সৃষ্টি করে এবং উদ্ভিদের শিকড়ের বৃদ্ধি কমিয়ে দেয়। আবার জৈব-বর্জ্য সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা না করা ও রাসায়নিক ব্যবহারের আধিক্য মাটির অম্লতা বাড়িয়ে দেয়, ফলে পানি ধারণক্ষমতা কমে যায় এবং মাটি হয়ে ওঠে শক্ত, প্রাণহীন।
মাটির স্বাস্থ্য ফিরিয়ে আনার সমাধানকল্পে ভাইস-চ্যান্সেলর আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘প্রথমত, পারমিয়েবল পেভমেন্ট ও সবুজ ছাদ ব্যবহার করলে বৃষ্টির পানি মাটিতে ঢুকতে পারে, ফলে মাটির আর্দ্রতা ও অনুজীব ফিরে আসবে। কমিউনিটি কম্পোস্টিং শহুরে জৈব-বর্জ্যকে পুষ্টিকর সার বানিয়ে মাটির জৈব পদার্থ বাড়ায়।
শহুরে বৃক্ষরোপণ ও ছোট ছোট বাগান মাটিতে ছায়া, আর্দ্রতা ও জীববৈচিত্র্য বাড়ায়। পাশাপাশি, দূষিত মাটিতে ফাইটো-রেমিডিয়েশন অর্থাৎ বিশেষ উদ্ভিদ দিয়ে দূষণ শোষণ মাটিকে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনে।
সুতরাং এটি সহজেই বুঝা যাচ্ছে যে, মাটি শুধু জমি নয় এটি এক জীবন্ত বাস্তুতন্ত্র। তার প্রতি যত্ন নিলেই শহর হয়ে উঠবে আরও সুস্থ, সবুজ ও বাসযোগ্য। এ জন্য মাটিকে শুধু কৃষির মাধ্যম হিসেবে না দেখে জীবনের মূলের মতো দেখার আহ্বানও জানান তিনি।
এ বিষয়ে গাকৃবির অবদান প্রসঙ্গের অবতারণা করে উপাচার্য আরো বলেন, ‘গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় নগর মৃত্তিকার স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারে গবেষণা, প্রযুক্তি উন্নয়ন এবং নীতি সহায়তায় অগ্রণী ভূমিকা রেখে চলেছে। আমরা বিশ্বাস করি সঠিক ব্যবস্থাপনা, সবুজ অবকাঠামো ও দূষণ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে অসুস্থ নগর মাটিও আবার জীবন্ত হয়ে উঠতে পারে। আজকের এই দিনে আমি সকলকে আহ্বান জানাই মাটিকে সম্পদ নয়, দায়িত্ব হিসেবে দেখুন।’
উল্লেখ্য, প্রতি বছরের ৫ ডিসেম্বর বিশ্বব্যাপী মৃত্তিকা দিবস পালিত হয়ে থাকে।

