শাপলা চত্বরে গণহত্যা

হাসিনা-ইমরানসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ : ১২ মার্চ ২০২৫, ১৪: ১৫
আপডেট : ১২ মার্চ ২০২৫, ১৮: ৪৯

২০১৩ সালের ৫ মে রাতে শাপলা চত্বরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশেই হেফাজতের সমাবেশে গণহত্যা চালানো হয়। বুধবার এ সংক্রান্ত অভিযোগে সাবেক শেখ হাসিনা, তার অন্যতম সহযোগী তৎকালীন ডিএমপি প্রধান বেনজীর, ফ্যাসিস্ট শাহবাগী ইমরান এইচ সরকারসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

হেফাজত নেতা মাওলানা মামুনুল হকের দায়ের করা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এই আদেশ দেন।

বিজ্ঞাপন

মামলার অন্য আসামিরা হলেন- সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীর, তৎকালীন গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ও ফ্যাসিস্ট শাহবাগী ইমরান এইচ সরকার, পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ ও হাসান মাহমুদ খন্দকার। আসামিদের মধ্যে ৪ জন অন্য মামলায় গ্রেপ্তার আছেন। বাকিরা পলাতক।

আদালতে গতকাল রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মুহাম্মদ তাজুল ইসলাম ও প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম। প্রসিকিউশন পক্ষে উপস্থিত ছিলেন প্রসিকিউটর বিএম সুলতান মাহমুদ, গাজী এম এইচ তামিম, মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম, তারেক আব্দুল্লাহ ও শাইখ মাহাদী। ট্রাইব্যুনাল আগামী ১২ মে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্যে নির্দেশ দিয়েছে।

চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরের হেফাজতের ওপর পৈশাচিক হামলার ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও র‌্যাবের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) ও সাবেক পুলিশের মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদসহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। অভিযুক্ত যারা গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন তারা হলেন- সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু, সাবেক আইজিপি শহিদুল হক, সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসান ও সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোল্লা নজরুল ইসলাম।

এর আগে গত ২৭ নভেম্বর শাপলা চত্তরের ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ৫০ জনকে আসামি করে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনে অভিযোগ দাখিল করেন হেফাজতে ইসলাম। বুধবার হেফাজতের পক্ষ হতে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন হেফাজত নেতা মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব।

অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, সাবেক মন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক এমপি হাজী সেলিম, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, নারায়ণগঞ্জের সাবেক এমপি শামীম ওসমান, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিকী, সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, র‍্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক জিয়াউল আহমেদ, ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশীদ, ডিএমপির সাবেক উপকমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, নির্মূল কমিটির সদস্য অধ্যাপক মুনতাসির মামুন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ, গণজাগরণ মঞ্চের আহ্বায়ক ইমরান এইচ সরকার, একাত্তর টিভির সাবেক সিইও মোজাম্মেল হক বাবু, সময় টিভির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও আহমেদ জোবায়ের, এবিনিউজ২৪ ডটকমের সম্পাদক সুভাস সিংহ রায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব নাইমুল ইসলাম খান, সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ এবং এনএসআইয়ের মনজুর আহমেদকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল।  ‍

উল্লেখ্য, ১৩ দফা দাবিতে ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতে ইসলাম রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে অবস্থান নিয়েছিল। ঘটনার দিন রাতে শেখ হাসিনার নির্দেশে পরস্পর যোগসাজশে অভিযুক্তরা রাত ১১টার দিকে বিদ্যুৎ লাইন বন্ধ করে দেন। এরপর শাপলা চত্বরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান চালিয়ে মাদ্রাসা ছাত্র ও পথচারীদের ওপর ব্যাপক গণহত্যা চালায়। পরে লাশ সিটি করপোরেশনের গাড়িতে করে নিয়ে গুম করা হয়। পরবর্তীতে নিহত ব্যক্তিদের পরিবার থানায় মামলা করতে গেলে তখন নেয়া হয়নি।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিষয়:

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত