ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠায় নাটের গুরু

খায়রুল হক এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে

অলিউল্লাহ নোমান
প্রকাশ : ০৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৮: ২৫
আপডেট : ০৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৮: ২৬

শেখ হসিনার ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠায় মূল কারিগরের ভূমিকায় ছিলেন বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক। দলীয় উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আদেশ-নির্দেশ ও রায় দিয়ে ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠায় শেখ হাসিনাকে অব্যাহত সহযোগিতা দিয়ে গেছেন তিনি।

এসব আদেশ-নির্দেশের কারণে বিচারকের আসন কলুষিত হলেও লাভবান হয়েছেন শেখ হাসিনা। বিচার বিভাগকে ধ্বংসের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠার ভূমিকায় থাকলেও খায়রুল হক এখনো রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। বিচারের নামে খায়রুল হকের অবিচারের কাহিনির উদাহরণ :

বিজ্ঞাপন

শপথ নিয়েই বসেছিলেন শেখ মুজিব হত্যার বিচারে

১৯৯৮ সালের এপ্রিল মাস। হাইকোর্ট বিভাগের চারটি বেঞ্চ পরপর শেখ মুজিব হত্যা মামলার আপিল শুনানিতে বিব্রতবোধ করে। এমন এক পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনা হাইকোর্ট বিভাগে অস্থায়ী বিচারক হিসেবে নিয়োগ দেন খায়রুল হককে। শপথ নেওয়ার পরপরই তাকে বসানো হয় বিচারপতি মো. রুহুল আমিনের সঙ্গে। সেদিনই এই বেঞ্চে শেখ মুজিব হত্যা মামলার আপিল শুনানির জন্য ম্যানশন (উপস্থাপন) করা হয়।

তারা সম্মত হন আপিল শুনানি করতে। এতে সিরিজ বিব্রত হওয়ার বিড়ম্বনা থেকে রক্ষা পায় শেখ হাসিনার সরকার। আপিলের রায়েও চমক দেখান খায়রুল হক। নিম্ন আদালতে দণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচজনকে বিচারপতি রুহুল আমিন বেকসুর খালাস দেন। কিন্তু খায়রুল হক নিম্ন আদালতের পুরো রায় বহাল রাখেন। তিনি সব আসামির ফাঁসির রায় বহাল রেখে বিচারপতি রুহুল আমিনের দেওয়া রায়ের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন।

মুন সিনেমা হল মামলায় ৫ম সংশোধনী বাতিল

পুরান ঢাকার মুন সিনেমা হলটি একটি রাষ্ট্রীয় অধ্যাদেশের মাধ্যমে ব্যক্তিমালিকানা থেকে রাষ্ট্রের অধীনে নেওয়া হয়েছিল। মূল মালিক সিনেমা হলটি ফেরতের জন্য হাইকোর্ট বিভাগে একটি রিট মামলা করেন বিচারপতি খায়রুল হকের বেঞ্চে। ২০০৪ সালে এই মামলাটি দায়ের করা হলেও খায়রুল হক প্রথম দিন তা গ্রহণ করেননি। অবজারভেশন দিয়ে মামলাটি ফেরত দেন তিনি। তার অবজারভেশন ছিল সামরিক শাসনামলের ফরমানের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আবার নিয়ে আসতে।

খায়রুল হকের পরামর্শ অনুযায়ী সামরিক ফরমানের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে মামলাটি আবার খায়রুল হকের বেঞ্চে নিয়ে যান আবেদনকারী। মামলাটি লুফে নিয়ে খায়রুল হক রুল জারি করেন। রুলের শুনানি শুরু হওয়ার আগেই একটি ছুটি-পরবর্তীতে যথারীতি বেঞ্চে কিছু পরিবর্তন ঘটে। খায়রুল হক তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ জে আর মোদাচ্ছির হোসেনের কাছে একটি আবদার করেন। মামলাটি তিনি নিষ্পত্তি করতে চান বলে প্রধান বিচারপতিকে জানান। রুল জারি করেছেন, শুনানিটাও তিনি করতে চান।

এজন্য এই বেঞ্চটি শুধু এ মামলার জন্য একটি বিশেষ আদেশে পুনর্গঠন করা হয়। বিচারপতি খায়রুল হক ও বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীর এ মামলাটির জন্য দিনের কোনো একটি সময়ে বসবেন। এটিএম ফজলে কবির চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে নিয়োগ পেলেও তিনি কট্টর আওয়ামীপন্থি হিসেবে আদালত অঙ্গনে পরিচিত ছিলেন। পরবর্তীতে তাকে শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারক নিয়োগ দিয়েছিলেন।

এবিএম খায়রুল হক ও এটিএম ফজলে কবির মিলে মুন সিনেমা হলের মামলা শুনানি করলেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ জে আর মোদাচ্ছির হোসেনের করুণার বিশেষ সুযোগ নিয়ে। শুনানি শেষে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাসনামলকে অবৈধ ঘোষণা করলেন। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সংবিধানের ৫ম সংশোধনী আনা হয়েছিল। ওই সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করলেন খায়রুল হক ও এটিএম ফজলে কবির। তাদের রায়ের ওপর ভিত্তি করেই সংবিধানের চার মূলনীতি থেকে ‘সকল কাজে সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাস’-এর বিধান বাতিল করা হয়েছিল।

এর স্থলে পুনস্থাপন করা হয় ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’। সংবিধান থেকে আল্লাহর ওপর আস্থার বিধান, জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সংসদে বিল পাস হওয়ার পর গণভোটের বিধান, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলসহ জিয়াউর রহমানের সময় সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলোকে ঝেটিয়ে বাতিলের আদেশ দেন তারা। তবে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের জন্য যেসব সুযোগ-সুবিধা তৈরি করেছিলেন, সেগুলো বহাল রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল রায়ে। সামরিক ফরমানের মাধ্যমে চালু হওয়া সব অবৈধ হলেও বিচারকদের জন্য সুযোগ-সুবিধার বৈধতা দেন খায়রুল হক ও ফজলে কবির।

স্বাধীনতার ঘোষক শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্ধারণ করা

দ্বিতীয় দফায় শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর খায়রুল হকের অনুচর মনজিল মোর্শেদ স্বাধীনতার ঘোষক নিয়ে হাইকোর্ট বিভাগে একটি রিট আবেদন করেন। বলা হয়ে থাকে, এই রিট আবেদনটি খায়রুল হকের পরামর্শ মোতাবেক করা হয়েছিল। খায়রুল হকের বেঞ্চে এই আবেদনের শুনানি শেষে একটি রায় হয়। রায়ে ঘোষণা করা হয় জিয়াউর রহমান নয়, শেখ মুজিব হলেন স্বাধীনতার ঘোষক। রায় ঘোষণার দিন মুনতাসির মামুনসহ আওয়ামী লীগের অনেকেই খায়রুল হকের বেঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।

যদিও তারা মামলার কোনো পক্ষ ছিলেন না। রায় পাঠের সময় খায়রুল হক প্রকাশ্য আদালতে মুনতাসির মামুনকে উদ্দেশ করে বলেছিলেন, ‘আপনাদের কাজটা আমি করে দিচ্ছি।’ রায়ে তিনি উল্লেখ করেছিলেন, জিয়াউর রহমানকে কেউ স্বাধীনতার ঘোষক বললে আদালত অবমাননার দায়ে শাস্তি হবে। রায়ের পর প্রতিক্রিয়া জানিয়ে মন্তব্য করেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. এমাজউদ্দিন আহমদ। এজন্য একদিন পরই তাকে আদালত অবমাননার অভিযোগে তলব করেছিলেন খায়রুল হক। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিতর্কিত এ রায়ের পর দেশব্যাপী খায়রুল হককে নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছিল।

আদালত অবমাননার মামলায় আমার দেশ সম্পাদককে নাজেহাল ও ‘চান্স’ সম্পাদক বলে কটাক্ষ করা

হাইকোর্ট বিভাগে বিতর্কিত রায় দেওয়ার কদিন পরই ২০১০ সালের শুরুতে খায়রুল হককে নিয়োগ দেওয়া হয় আপিল বিভাগে। আপিল বিভাগে এসে খায়রুল হক শেখ হাসিনাকে ফ্যাসিবাদী হয়ে উঠতে আরো বিতর্কিত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত রায় দেন। ২০১০ সালের ১ জুন আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। সেদিনই পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী আদালত অবমাননার রুল ইস্যু করা হয় আপিল বিভাগ থেকে।

যে সংবাদের জন্য এই রুল জারি করা হয়েছিল, সেটি প্রকাশ হয়েছিল ২০১০ সালের এপ্রিলে। ‘চেম্বার মানেই সরকারপক্ষে স্টে’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদটির জন্য জারি করা হয়েছিল এই রুল। রুলের শুনানিতে আমার দেশ সম্পাদককে কারাগার থেকে আনার নোটিস ইস্যু করা হয় আপিল বিভাগ থেকে। শুনানির নির্ধারিত দিনে আমার দেশ সম্পাদককে হাজির করা হয়। তিনি নিজেই রুলের শুনানি করার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন।

শুনানির সময় তাকে প্রশ্নবানে জর্জরিত করে নাজেহালের অপচেষ্টা করা হয় আদালতে। এর মধ্যে খায়রুল হক ছিলেন মুখ্য ভূমিকায়। এক পর্যায়ে প্রশ্ন করেন, সাংবাদিকতা নিয়ে পড়াশোনা আছে কি না! জবাব শুনে খায়রুল হক তাচ্ছিল্যের সঙ্গে কটাক্ষ করে বলেন, আপনি তাহলে ‘চান্স’সম্পাদক। যদিও পরবর্তীতে বাংলাদেশের প্রথিতযশা সম্পাদকরা কে কোন পেশা থেকে এসেছিলেন- সেটা শুনিয়ে দেওয়া হয়েছিল আদালতকে। তবে খায়রুল হক তখন আইনের সীমারেখার ঊর্ধ্বে উঠে কারাদণ্ড ও জরিমানার রায় ঘোষণা করেছিলেন। মূল উদ্দেশ্য ছিল আমার দেশকে থামিয়ে দিয়ে ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠায় শেখ হাসিনার যাত্রাকে নির্বিঘ্ন করা।

বিএনপি চেয়ারপারসনকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদের মামলায় আপিল না শুনেই রায় প্রদান

খায়রুল হক ২০১০ সেপ্টেম্বরের শুরুতেই প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। দুজন সিনিয়রকে ডিঙ্গিয়ে খায়রুল হককে প্রধান বিচারপতি বানানো হয় তখন। নভেম্বরের শুরুতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদের নোটিসের চ্যালেঞ্জ করা মামলায় চূড়ান্ত রায় হয়। হাইকোর্ট বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল দায়ের করা হয় বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে। ওই লিভ টু আপিল শুনানির দিনে প্রধান বিচারপতির আসনে ছিলেন খায়রুল হক।

তার সঙ্গে ছিলেন মোজাম্মেল হোসেন ও সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। এ তিনজন তখন আপিল বিভাগে। তাদের সমন্বয়ে গঠিত আপিল বেঞ্চে অনাস্থা জানিয়ে সেদিন বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে আরেকটি আবেদন করা হয়েছিল। ওই অনাস্থা আবেদনটি তারা শুনতেই চায়নি। লিভ টু আপিল শুনানির নির্ধারিত তারিখে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ দাঁড়ান। তিনি একটি নতুন আবেদন আছে উল্লেখ করে সেটা উত্থাপনের জন্য তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তখন খায়রুল হকসহ বাকি দুজন নতুন আবেদন উত্থাপনের সুযোগ দিতে নারাজ। ব্যারিস্টার রফিক উল হক দাঁড়িয়ে বলছিলেন, আগে মওদুদ আহমদের পিটিশনটি শুনুন। তারপর লিভ টু আপিল শুনানি করব।

অপরদিকে খায়রুল হকরা বলেন, লিভ টু আপিলের শুনানি শুরু করুন। এ অবস্থায় আধঘণ্টার বেশি মওদুদ আহমদ পিটিশন নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এক পর্যায়ে আদালত মুলতবি করে চলে যান ওই তিনজন। কয়েক মিনিট পর ফিরে এসে বলেন, আপনারা লিভ টু আপিল শুনানি করেননি। আমরা এখন রায় দেব। শুনানি ছাড়াই বেগম খালেদা জিয়ার বাড়ির মামলায় লিভ টু আপিল খারিজ করে দেন খায়রুল হকের নেতৃত্বে তিন বিচারক। ক্ষতিগ্রস্ত বেগম খালেদা জিয়ার অনাস্থা আবেদনটি তারা শুনানির জন্য গ্রহণ করার সুযোগই দেননি। লিভ টু আপিল শুনানির সুযোগ না দিয়েই অন্যায়ভাবে বেগম খালেদা জিয়াকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছিল সেদিন।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে রায় প্রদান

১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ধ্বংসাত্মক আন্দোলনের মাধ্যমে সংবিধানে যুক্ত করা হয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান। পরবর্তীতে ২০০১ সালের নির্বাচনের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিধানের সাংবিধানিক বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে একটি রিট আবেদন করা হয়েছিল। ওই রিট আবেদনটির রুলের শুনানি হয়েছিল হাইকোর্ট বিভাগে একটি বৃহত্তম বেঞ্চ গঠন করে।

কর্মে প্রবীণ তিন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বিভাগের বৃহত্তম বেঞ্চ একমত পোষণ করে রায় দিয়েছিল। তাদের রায়ে বলা হয়েছিল, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে অলঙ্কার হিসেবে কাজ করছে। তারা রিট আবেদনের রুলটি খারিজ করে দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে বৈধ হিসেবে ঘোষণা করেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল দায়ের করেছিলেন মূল বাদী। এই লিভ টু আপিল শুনানি না করে একরকম ডিপ ফ্রিজে ছিল আপিল বিভাগে।

খায়রুল হক প্রধান বিচারপতি পদ থেকে অবসরে যাওয়ার আগে নিজের আগ্রহে লিভ টু আপিলটি শুনানির জন্য তালিকাভুক্ত করেন। সাতজন সিনিয়র আইনজীবীকে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। তাদের সবাই আপিল বিভাগে অভিমত দিয়ে জানিয়েছিলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থায় সাংবিধানিক কোনো সাংঘর্ষিক বিষয় নেই। এই বিধান বহাল রাখার পক্ষেই ছিল সবার অভিমত।

এমনকি অ্যাটর্নি জেনারেলের পক্ষ থেকেও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষেই অভিমত দেওয়া হয়। সাত বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত আপিল বিভাগ শুনানি শেষে বিভক্ত রায় ঘোষণা করে। অবসরে যাওয়ার কদিন আগে খায়রুল হকের ঘোষিত রায়ে পরবর্তী দুটি জাতীয় নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করার অভিমত দেওয়া হয়েছিল প্রকাশ্য আদালতে। বিভক্ত রায়ে খায়রুল হক, মোজাম্মেল হোসেন, সুরেন্দ্র কুমার সিনহা ও সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ত্রয়োদশ সংশোধনী, অর্থাৎ তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের পক্ষে রায় দেন। বাকি তিনজন (আবদুল ওয়াহাব মিঞা, নাজমুন আরা সুলতানা ও ইমান আলী) তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বহাল রাখার পক্ষে রায় দেন।

মজার বিষয় হচ্ছে, এ রায়ের এক দিন পরই খায়রুল হক অবসরে চলে যান। পরবর্তীতে দীর্ঘ দেড় বছর মনের মাধুরী মিশিয়ে তিনি পূর্ণাঙ্গ রায়টি লেখেন। যদিও সুরেন্দ্র কুমার সিনহা প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেওয়ার পর সার্কুলার জারি করেছিলেন অবসরে গিয়ে রায় লেখা অবৈধ। অবসরের দেড় বছর পর লেখা রায়ে তিনি পরবর্তী দুবছরের বিষয়টি বাতিল করে দেন। অথচ প্রকাশ্য আদালতে ঘোষিত লিখিত রায় বাতিলের ঘটনা অতীতে কখনো ঘটেনি।

তখনই সিনিয়র আইনজীবীরা বিষয়টিকে রাষ্ট্রদ্রোহ অপরাধের শামিল বলে মন্তব্য করেছিলেন। শেখ হাসিনাকে দীর্ঘদিন বিনা ভোটে ক্ষমতায় রাখার গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই খায়রুল হক এমনটি করেছিলেন। এ রায়ের সুযোগ নিয়েই শেখ হাসিনা নিজের অধীনে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে নির্বাচনের নামে জাতির সঙ্গে তামাশা করতে পেরেছিলেন। মোট কথা, বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দিয়ে ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা করাই ছিল খায়রুলে হকের রায়ের মূল স্পিরিট।

বিচারকের আসনে মোটা অঙ্কের সুযোগ-সুবিধা থাকার পরও রাষ্ট্রীয় ত্রাণ তহবিলের টাকা গ্রহণ

হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক হিসেবে থাকাকালীন প্রধানমন্ত্রীর রাষ্ট্রীয় ত্রাণ তহবিল থেকে খায়রুল হক ১০ লাখ টাকা নেন সম্পূর্ণ অবৈধভাবে। ঢাকায় নিজের বাড়ি, বিচারক হিসেবে রাষ্ট্রীয় বাসভবনে অবস্থান, মোটা অঙ্কের বেতন ও সুযোগ-সুবিধা থাকার পরও অনাথ-গরিবের জন্য গঠিত ত্রাণ তহবিল থেকে ১০ টাকা খায়রুল হককে দেন শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনার অনুগত ও ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠায় অবদানের জন্য অবসরের পর পুরস্কার হিসেবে আইন কমিশনের চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়া হয় খায়রুল হককে। ১০ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি টানা আইন কমিশনের চেয়ারম্যানের পদে ছিলেন। এই পদে রেখে শেখ হাসিনা তাকে রাষ্ট্রীয় সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেন পুরস্কার হিসেবেই।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত