ভর্তিচ্ছুদের জন্য একনজরে বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়

মো. রাবী সিদ্দিকী জুবায়ের, প্রতিনিধি, বুটেক্স
প্রকাশ : ০৩ মার্চ ২০২৫, ১৪: ৩৯
আপডেট : ০৩ মার্চ ২০২৫, ১৫: ২৮

বাংলাদেশের একমাত্র বিশেষায়িত পাবলিক টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় হলো বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (বুটেক্স)। রাজধানীর তেঁজগাওয়ে অবস্থিত এই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসটি ১১ দশমিক ৬৭ একর জমির ওপর দাঁড়িয়ে। চলতি বছর ৭ মার্চ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা। টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারদের আঁতুড়ঘর এবং দেশের অর্থনীতিতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অবদান রাখা বুটেক্স ক্যাম্পাস নিয়ে লিখেছেন মো. রাবী সিদ্দিকী জুবায়ের।

শিক্ষা কার্যক্রম

বিজ্ঞাপন

বুটেক্সে বর্তমানে পাঁচটি অনুষদের অধীনে ১১টি বিভাগের কার্যক্রম চালু রয়েছে। এসব বিভাগ হলো: ইয়ার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ওয়েট প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ফেব্রিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, অ্যাপারেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, টেক্সটাইল মেশিনারি ডিজাইন অ্যান্ড মেইনটেনেন্স বিভাগ, ডাইস অ্যান্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, টেক্সটাইল ফ্যাশন অ্যান্ড ডিজাইন বিভাগ, এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ এবং টেক্সটাইল ম্যাটেরিয়ালস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ। প্রতি ব্যাচে ৬৪০ আসন সংখ্যাবিশিষ্ট চার বছর মেয়াদি বিএসসি প্রোগ্রামে প্রতি লেভেলে ছয় মাস অন্তর দুটি টার্ম পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সাধারণত বছরগুলোকে লেভেল ও সেমিস্টারগুলোকে টার্ম বলে অভিহিত করা হয়।

আবাসন ব্যবস্থা

বুটেক্সের মূল ক্যাম্পাসের অদূরেই ছেলেদের জন্য তিনটি ও মেয়েদের একটি আবাসিক হল রয়েছে। ছেলেদের হলগুলো হলো জি.এম.এ.জি ওসমানী হল, শহীদ আজিজ হল, সৈয়দ নজরুল ইসলাম হল ও মেয়েদের জন্য রয়েছে বীর প্রতীক ক্যাপ্টেন সিতারা বেগম হল।

চারতলা বিশিষ্ট জি.এম.এ.জি ওসমানী হলের ছাত্র ধারণ ক্ষমতা প্রায় ৩০০ জন। ছয়তলা বিশিষ্ট সৈয়দ নজরুল ইসলাম হলের ছাত্র ধারণ ক্ষমতা ২১৬ জন। শহীদ আজিজ হলের ছাত্র ধারণ ক্ষমতা ২২০ জন। বীর প্রতীক ক্যাপ্টেন সিতারা বেগম হলের ছাত্রী ধারণ ক্ষমতা ২০০ জন।

গবেষণা ও কর্মক্ষেত্র

গত পাঁচ বছরে বুটেক্সের গবেষণার পরিসংখ্যান পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ২০২২ সালে সর্বোচ্চ পরিমাণ গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে, যার সংখ্যা ১০১টি। যেই সংখ্যা ২০২১ সালে ছিল ৬৫টি এবং ২০২০ সালে ২৭টি। ২০২৩ সালে গবেষণাপত্র প্রকাশের সংখ্যা ৯১টি। বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০২৪ সালে স্কোপাস-ইন্ডেক্সড জার্নালে ১১২টি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. হোসনে আরা বেগম বলেন, গবেষণার ক্ষেত্রে বুটেক্সের বর্তমান অগ্রগতি প্রশংসনীয়। ১৪ বছরের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে গবেষণার যে অগ্রগতি হয়েছে, তা পূর্ববর্তী কলেজ সময়ের তুলনায় উল্লেখযোগ্য। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বর্তমানে নানাভাবে গবেষণায় যুক্ত হচ্ছেন, যা দেশের টেক্সটাইল শিল্পের উন্নয়নে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে।

বুটেক্স থেকে গ্রাজুয়েশন করার পর কেউ বেকার থাকে না যদি না কেউ স্বেচ্ছায় বেকার থাকে।

বুটেক্সের ল্যাব ফ্যাসিলিটিস

চলতি বছর থেকে চালু হতে যাওয়া টেক্সটাইল ম্যাটেরিয়ালস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে রয়েছে প্রায় ২৫ কোটি টাকার অত্যাধুনিক মেশিনারিজ, যা গবেষণা ও শিক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

বুটেক্সের ল্যাব ফ্যাসিলিটিসে আধুনিক সংযোজন হচ্ছে নন-ওভেন প্রোডাকশন লাইন।

বুটেক্সের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জুলহাস উদ্দিন বলেন, উপাচার্য হিসেবে বুটেক্সকে বিশ্ব র‍্যাংকিংয়ে দেখতে চাই। তবে এজন্য আমাদের গবেষণায় ভালো করতে হবে। আমাদের শিক্ষার্থীরা অত্যন্ত মেধাবী। ভালো শিক্ষক পেলে আমাদের ভালো গবেষণা হবে, ইনোভেশন হবে, পাবলিকেশন হবে। ফলে ভালো গ্র‍্যাজুয়েট আমরা তৈরি করতে পারবো।

বর্তমানে ক্যাম্পাসে তিন হাজার শিক্ষার্থীর বিপরীতে পাঠদানে নিয়োজিত শিক্ষক রয়েছেন ১০৯ জন। এখানে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের অনুপাত ২৭ দশমিক ১। ক্যাম্পাসে কর্মকর্তা ৯৫ জন ও কর্মচারী ১৪০ জন কর্মরত রয়েছেন। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ শরীফুর রহমান বলেন, আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয়টি হোক সেন্টার অব এক্সিলেন্সি। যেখানে শিক্ষার গুণগত মান বজায় থাকবে ও দক্ষ প্রকৌশলী তৈরি হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মাহবুব আলম রিয়াজ বলেন, চাকরির সুযোগের কথা বিবেচনা করলে দেশে টেক্সটাইল সেক্টরে বুটেক্স গ্র‍্যাজুয়েটদের সুযোগ অনেক বেশি। প্রাইভেট সেক্টরে প্রচুর চাকরি থাকায় কেউ বেকার থাকে না। অনেকে গ্র‍্যাজুয়েশনের আগে চাকরিতে প্রবেশ করে, যা বুটেক্স শিক্ষার্থীদের জন্য ভালো সুযোগ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সহশিক্ষা কার্যক্রম

বুটেক্সে সহশিক্ষা কার্যক্রমের জন্য রয়েছে ১১টি ক্লাব। সেগুলো হলো- বুটেক্স ডিবেটিং ক্লাব, বুটেক্স বিজনেস ক্লাব, বুটেক্স ক্যারিয়ার ক্লাব, বুটেক্স ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট ক্লাব, বুটেক্স রেডিও, বুটেক্স সাংবাদিক সমিতি, বুটেক্স সাহিত্য সংসদ, আর্টেক্স, স্বেচ্ছায় রক্তদানের সংগঠন বাঁধন, একাত্তর সাংস্কৃতিক সংঘ, বুটেক্স স্পোর্টস ক্লাব। সহশিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে ক্যাম্পাসে ও ক্যাম্পাসের বাইরে নেটওয়ার্কিং করার সুযোগ পান শিক্ষার্থীরা। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করার মাধ্যমে কর্মক্ষেত্র সম্পর্কে ভালো ধারণা তৈরি করতে পারেন।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত