বিশ্ববিদ্যালয় হলেও বহাল থাকছে সাত কলেজের কার্যক্রম

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ : ০৪ আগস্ট ২০২৫, ১৪: ২৬

রাজধানীর সাত কলেজ নিয়ে ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম ধাপে ধাপে পূর্ণাঙ্গ রূপ পাবে। বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রচলিত কাঠামো থেকে কিছুটা ভিন্ন ধারার হবে। এখানে কোন অনুষদ থাকবে না। স্কুলভিক্তিক বিভিন্ন সাবজেক্টে একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালিত হবে।

বিজ্ঞাপন

সোমবার দুপুরে রাজধানীর সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। ঢাকা মহানগরের সাত কলেজের সমন্বয়ে প্রস্তাবিত ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠার অগ্রগতি বিষয়ে জানাতেই এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, শিক্ষার্থীরা সাবজেক্ট পরিবর্তনের সুযোগ পাবেন। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় রূপ পেলেও সংশ্লিষ্ট কলেজগুলোর কার্যক্রমও বহাল থাকবে। সুবিধাজনক স্থানে বিশ্ববিদ্যালয়টির মূল ক্যাম্পাস নির্ধারণ করা হবে। ধাপে ধাপে এ বছরের মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ জারিসহ অন্যান্য কার্যক্রম সম্পন্ন হবে।

এতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিবের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত সচিব মো. মজিবর রহমান, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এসএমএ ফায়েজ, সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান ও অধ্যাপক ড. মো. সাইদুর রহমান, সাত কলেজের অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসক অধ্যাপক একে এম ইলিয়াস বক্তব্য রাখেন।

সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈশিষ্ট্য ও পরিচালনা পদ্ধতি সম্পর্কে জানানো হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থা হবে ইন্টারডিসিপ্লিনারি ও হাইব্রিড ধরণের, যেখানে ৪০ শতাংশ অনলাইন, ৬০ শতাংশ অফলাইনে ক্লাস হবে। সব ধরনের পরীক্ষা হবে সশরীরে।

ইন্টারডিসিপ্লিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল শিক্ষার্থী প্রথম চারটি সেমিস্টার নন-মেজর কোর্স অধ্যয়ন করবে। পরবর্তী চার সেমিস্টার ডিসিপ্লিন অনুযায়ী মেজর কোর্সে অধ্যয়ন করবে। তবে পঞ্চম সেমিস্টারে শর্তপূরণ সাপেক্ষে শিক্ষার্থী ইচ্ছানুযায়ী ডিসিপ্লিন পরিবর্তন করতে পারবে। তবে ক্যাম্পাস পরিবর্তনের সুযোগ থাকবে না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম পরিচালিত হবে একাডেমিক কাউন্সিল, সিনেট ও সিন্ডিকেটের মাধ্যমে। বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন প্রক্টর থাকবেন। এছাড়াও প্রতিটি কলেজে একজন পুরুষ এবং একজন নারী ডেপুটি প্রক্টর থাকবেন। অর্থাৎ ৭ কলেজে সর্বমোট ১৪ জন ডেপুটি প্রক্টর থাকবেন।

সাত কলেজের পাঁচটিতে পূর্বের ন্যায় উচ্চমাধ্যমিক পর্যায় চালু থাকবে। স্নাতক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার্থীরা টাইম, স্পেস ও রিসোর্স শেয়ারিং পদ্ধতিতে একই ক্যাম্পাস ব্যবহার করবেন। কেন্দ্রীয়ভাবে ভর্তি প্রক্রিয়া পরিচালিত হবে। প্রতি ডিসিপ্লিনে যৌক্তিকভাবে ছাত্র সংখ্যা নির্ধারণ করা হবে।

প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে প্রথম বর্ষেই ল্যাপটপ ও আনুষঙ্গিক সামগ্রী ও স্বল্পমূল্যে ইন্টারনেট সেবা দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সকল প্রশাসনিক কার্যক্রম (ভর্তি, রেজিস্ট্রেশন, আবেদন ইত্যাদি) আইটি বেজড/ডিজিটাল সিস্টেমে সম্পাদিত হবে। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের যেকোনো ধরনের অনুসন্ধান আইটি প্লাটফর্মের মাধ্যমে করতে পারবে।

শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়োগ প্রদান করা হবে এবং কলেজসমূহের প্রয়োজন অনুযায়ী নিয়োগকৃতদের বণ্টন করা হবে। বাজেট গ্রহণ ও ব্যবস্থাপনা হবে কেন্দ্রীয়ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে।

প্রতিটি কলেজে থাকবে আধুনিক মানসম্পন্ন লাইব্রেরি, কাফেটেরিয়া, মেডিকেল সেন্টার ও পরিবহণ ব্যবস্থা। বিভিন্ন পর্যায়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা পূর্বের বিদ্যমান একাডেমিক কাঠামো অনুযায়ী শিক্ষা কার্যক্রম সমাপ্ত করবেন। অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের সময়মতো পরীক্ষা নেয়া, ফলাফল দ্রুত প্রকাশ করা, সেশনজট কমাতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে ।

ইউজিসি চেয়ারম্যান বলেন, সাত কলেজ নিয়ে বিশাল সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ ছিল। আমরা এটাকে বড় সুযোগ হিসেবে নিয়ে আন্তরিকভাবে কাজ করেছি। বিভিন্ন মহলের সঙ্গে সিরিজ আলোচনা করে ভালটাই বেছে নিয়েছি।

ইউজিসি সদস্য তানজীমউদ্দিন খান বলেন, বর্তমানে সাত কলেজে যেসব শিক্ষার্থী ভর্তি করা হচ্ছে, তা বিদ্যমান কাঠামোতেই হচ্ছে। এরসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন সম্পর্ক নেই। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনক্রমেই এই ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় আইনি কাঠামো পাবে। বর্তমান অন্তর্বর্তী প্রশাসন এই ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

তিনি বলেন, বর্তমানে সাত কলেজের মৌলিক বৈশিষ্ট্য ঠিকই থাকছে। বিশ্ববিদ্যালয় রূপ পেলে আলাদা কাঠামো থাকবে। কলেজের বর্তমান শিক্ষকরা বহাল থাকবেন। তবে তাদের মধ্য থেকে যোগ্যরা বিশ্ববিদ্যালয়ে যুক্ত হবার সুযোগ পাবেন।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভুল ধারণার মধ্যে থাকায় হয়তো তিতুমীর কলেজ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করতে পারেন। তবে বিষয়গুলো জানার পর তারা আশাকরি আমাদের এই উদ্যোগে সমর্থন দিবেন।

তিনি বলেন, ধাপে ধাপে এ বছরের মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ জারিসহ অন্যান্য কার্যক্রম সম্পন্ন করতে চাই। এতে সরকারের খরচ খুব বাড়বে না।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত