শাকসু নির্বাচন নিয়ে টালবাহানায় ক্ষোভ

মাঈন উদ্দিন, শাবিপ্রবি
প্রকাশ : ২৩ আগস্ট ২০২৫, ০৪: ০০

দীর্ঘ ২৭ বছর পর শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (শাকসু) নির্বাচন পুনরায় চালুর দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা । তবে এ নিয়ে প্রশাসনের কালক্ষেপণ শিক্ষার্থীদের হতাশ করেছে। অথচ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম দাবি ছিল বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতির অবসান ঘটিয়ে ছাত্র সংসদ চালু করা। ইতোমধ্যে ঢাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শাবিপ্রবিতেও নির্বাচনের দাবি জোরালো হয়ে উঠেছে।

বিজ্ঞাপন

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু করলেও তা এগোচ্ছে শ্লথগতিতে। গত ১৩ জুলাই শাকসুর গঠনতন্ত্র পুনঃপ্রণয়নের জন্য ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক অধ্যাপক ড. এছাক মিয়াকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মতামত নিতে গণবিজ্ঞপ্তি দেয়। শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন সংগঠন তাদের মতামত জমা দিলেও এখনো খসড়া চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া ১১ আগস্ট শাকসু নির্বাচন নিয়ে প্রাথমিক আলোচনার জন্য সর্বদলীয় সমাবেশ ডেকেছিল প্রশাসন। কিন্তু আগের দিন তা অনিবার্য কারণে স্থগিত করা হয়।

শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, শাকসু নির্বাচন হলে প্রশাসন তাদের একচ্ছত্র আধিপত্য হারাবে। এ আশঙ্কায় নানা কৌশলে নির্বাচন না দেওয়ার চেষ্টা করছে তারা। অনেকের মতে, শাকসু নির্বাচন নিয়ে প্রশাসনের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর এখন পর্যন্ত মাত্র ছয়বার শাকসু নির্বাচন হয়েছে। সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছে ১৯৯৭ সালে।

শাবিপ্রবি শাখা ছাত্রদলের সভাপতি রাহাত জামান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল মনে করে, ছাত্র সংসদ নির্বাচন হওয়া উচিত মুক্ত, স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। যেখানে সব ছাত্রসংগঠনের সমান সুযোগ নিশ্চিত থাকবে। কিন্তু মুক্ত গণতান্ত্রিক চর্চার দ্বার ও শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক অধিকার রুদ্ধ করে বর্তমান শাকসু নির্বাচনের গঠনতন্ত্র তৈরির যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, তা প্রকৃতপক্ষে গণতন্ত্রের চর্চাকে উপেক্ষা করেছে এবং শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক অধিকার সীমিত করেছে। বিশেষ সংগঠনকে সর্বক্ষেত্রে প্রাধান্য দিয়ে একতরফাভাবে এ গঠনতন্ত্র প্রণয়ন, প্রকৃত অর্থে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির পরিপন্থী।

শাবিপ্রবি ছাত্রদল স্পষ্টভাবে জানাচ্ছে, তারা এমন কোনো প্রক্রিয়ার অংশীদার হবে না, যেখানে শিক্ষার্থীদের কণ্ঠস্বরকে উপেক্ষা করা হয় এবং ক্যাম্পাসে বহুমুখী রাজনৈতিক অংশগ্রহণের পরিবেশ নষ্ট করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি সত্যিকার অর্থে গণতান্ত্রিক চর্চা নিশ্চিত করতে চায়, তবে তাদের উচিত মুক্ত রাজনৈতিক চর্চা ও রাজনৈতিক সংগঠনের অধিকার নিশ্চিত করে ন্যায়সংগত, স্বচ্ছ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক একটি গঠনতন্ত্র প্রণয়ন করা। যাতে শিক্ষার্থীরা প্রকৃত অর্থে নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে।

শাবিপ্রবি ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি মাসুদ রানা তুহিন বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকেই আমরা ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছি। প্রশাসন শুধু কালক্ষেপণ করছে। ছাত্র সংসদ শিক্ষার্থীদের অধিকার ও দাবি। এখানে কোনো ছাত্রসংগঠন যদি শাকসু নিয়ে কালক্ষেপণের জন্য চাপ সৃষ্টি করে, সেটা প্রশাসনের বড় ব্যর্থতা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শাকসুর গঠনতন্ত্র পুনঃপ্রণয়নের জন্য প্রস্তাবনার নোটিস দিয়েছিল। আমরা যথাসময়ে প্রস্তাবনা দিয়েছি। আমরা চাই অতিদ্রুত শাকসুর নির্বাচনি তফসিল ঘোষণা হোক।

ইসলামী আন্দোলনের শাবিপ্রবি শাখার সাধারণ সম্পাদক আজাদ শিকদার বলেন, শাকসু নিয়ে কোনো টালবাহানা মেনে নেওয়া হবে না। শাকসুকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ক্যালেন্ডারে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে—যাতে প্রতি বছর নির্দিষ্ট সময়েই নির্বাচন নিশ্চিত হয়। বর্তমানে শাকসু দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রশাসনের ধীরগতি লক্ষ করা যাচ্ছে। আমরা আগামী ১০ দিনের মধ্যে শাকসু বাস্তবায়নে দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখতে চাই।

ছাত্র মজলিসের সাধারণ সম্পাদক জুনায়েদ আহমেদ বলেন, শাকসু হলো শিক্ষার্থীদের অভিন্ন প্ল্যাটফর্ম এবং ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব গড়ে তোলার একটি কারখানা। ইতোমধ্যেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচনি আমেজ সৃষ্টি হয়েছে এবং নির্বাচনের তারিখও ঘোষণা করা হয়েছে। অথচ শাকসু নিয়ে উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি নেই। আমরা মনে করি, এ বিলম্ব অযৌক্তিক। আমাদের চাই আগামী দুই মাসের মধ্যে শাকসু নির্বাচনসহ সব প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করা হোক।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ও ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী দেলোয়ার হোসেন শিশির বলেন, প্রশাসন শাকসু নির্বাচনের ব্যাপারে টালবাহানা করছে। গঠনতন্ত্র পুনঃপ্রণয়নের জন্য যে কমিটি করা হয়েছে, সে কমিটি সক্রিয়ভাবে কাজ করছে না। প্রশাসন যদি সদিচ্ছা নিয়ে কাজ করত, তাহলে এতদিনে শাকসু নির্বাচন আয়োজন করা যেত।

এ বিষয়ে ছাত্র উপদেষ্টা ও নির্দেশনা পরিচালক এবং গঠনতন্ত্র পুনঃপ্রণয়ন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. এছাক মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, আমরা শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন থেকে মতামত নিয়েছি। আগামী সপ্তাহে তাদের সঙ্গে আবার বসে আলাপ করব। আশা করছি, আগামী সপ্তাহের মধ্যে ছাত্র সংসদের গঠনতন্ত্র পুনঃপ্রণয়নের রিপোর্ট জমা দিতে পারব।

শাবিপ্রবির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাজেদুল করিম বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে শাকসুর বিষয়ে ইতিবাচক। ছাত্র সংসদ চালু হলে শিক্ষার্থীরাও দায়িত্বশীল হয়, প্রশাসনের চাপও কমে।

শাবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএম সরওয়ারউদ্দিন চৌধুরী বলেন, শাকসু গঠনতন্ত্র পুনঃপ্রণয়নের জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা কাজ করছে। গঠনতন্ত্রের চূড়ান্ত খসড়া জমা দিলেই আমরা সিন্ডিকেটে উত্থাপন করে চূড়ান্ত করব। আমরা দ্রুত শাকসু আয়োজন করতে চাই। তবে প্রশাসন ছাত্রসংগঠনগুলোর কাছ থেকে পর্যাপ্ত সহযোগিতা পাচ্ছে না। দ্রুত শাকসু আয়োজনে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত