ছাত্রদলের তদন্ত কমিটিতেও ‘ছাত্রলীগের সাবেক নেতা’

প্রতিনিধি, ঢাবি
প্রকাশ : ০৯ আগস্ট ২০২৫, ১০: ৫১
আপডেট : ০৯ আগস্ট ২০২৫, ১১: ১৪

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) বিভিন্ন হলে নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে সংগঠনের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ ও বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি হল শাখায় এক বছর মেয়াদি এই কমিটির অনুমোদন দেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস ও সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন।

মোট ৫৯৩ জন শিক্ষার্থী এ তালিকায় স্থান পেয়েছে। এদের মধ্যে এখন পর্যন্ত অন্তত ৫০ জনের বিরুদ্ধে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের কমিটিতে থাকার প্রমাণ মিলেছে। তবে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে অভিযোগ পদবঞ্চিতদের। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তবে খোদ তদন্ত কমিটির নেতার বিরুদ্ধেও ছাত্রলীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ তুলেছেন বঞ্চিতরা।

বিজ্ঞাপন

এদিকে কমিটি ঘোষণার পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পদবঞ্চিত ও ত্যাগী নেতা-কর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা সংগঠনের নেতাদের বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতি, কমিটি বাণিজ্য ও রাজনৈতিক অনুপ্রবেশ ঘটানোর অভিযোগ তোলেন। অনেকের ছবি ও তথ্য দিয়ে অভিযোগ প্রমাণের চেষ্টা করেন।

কমিটির বিষয়ে জিয়াউর রহমান হল শাখা ছাত্রদল একজন কর্মী বলেন, ‘রাজপথের কর্মীদের চেয়ে নেতাদের ব্যক্তিগত পছন্দের লোকই বেশি এসেছে।’

সংগঠনটির অসংখ্য নেতা-কর্মীর অভিযোগ, বছরের পর বছর ঝুঁকি নিয়ে আন্দোলন করেও তারা পদ পাননি। শেখ মুজিব হলের সাবেক কর্মী আবু তালিব বলেন, ‘‘ছাত্রলীগের হাতে নির্যাতিত হয়ে হল ছাড়তে হয়েছে, তবুও পদ পাননি। অথচ ‘জুনিয়ররা’ কমিটিতে এসেছে।’’

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ শামীম মিয়া বলেন, ‘আমরা যাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি, তাদের অনেকের নামও এই কমিটিতে এসেছে। যারা ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়েছে, তারাও কমিটিতে স্থান পেয়েছে।’

ছাত্রদলের তদন্ত কমিটি গঠন

এদিকে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন শাওন ও সাংগঠনিক সম্পাদক নূর আলম ভূঁইয়া ইমনকে নিয়ে দুই সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এ-সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নবগঠিত কমিটিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত কারও বিষয়ে তথ্য গোপন রাখা বা সাংগঠনিক শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ যাচাই করে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে হবে।

তবে খোদ তদন্ত কমিটিতে থাকা নাছির উদ্দিন শাওনের বিরুদ্ধে অতীতে ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠেছে। ছাত্রলীগের বিভিন্ন প্রোগ্রামে তোলা শাওনের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করে তার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ তোলেন।

খালেদা জিয়াকে ব্যঙ্গ করা সাবেক ছাত্রলীগ কর্মীও কমিটিতে

নতুন কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত অনেকেরই অতীতে ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠেছে। এমনকি ছাত্রদলের কমিটিতে স্থান পেয়েছে বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে ব্যঙ্গ করা সাবেক ছাত্রলীগ কর্মীও। ইতোমধ্যে পঞ্চাশের অধিক ছাত্রদল নেওয়ার অতীত ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্টতা নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যÑ শামসুন নাহার হল ছাত্রলীগের সাবেক উপ-গণযোগাযোগ সম্পাদক নিতু রাণী সাহা। তিনি হল কমিটিতে ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক পদে রয়েছেন।

জীববিজ্ঞান অনুষদ ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি রাকিবুল হাসান সৌরভ বর্তমানে ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ হলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক। ঝিনাইদহ-৪ আসনের নির্বাচনে ছাত্রলীগের সমন্বয়ক টিমের সদস্য শিবলী রহমান পাভেল এখন হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলের যুগ্ম আহ্বায়ক।

নাটোর-২ আসনে ছাত্রলীগের সমন্বয়ক টিমের মো. আজিজুল হাকিম বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের যুগ্ম আহ্বায়ক। স্যার এ এফ রহমান হলের ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন এখন ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক। এ ছাড়া বিভিন্ন হলে আরও অন্তত ৫০ জন নেতা আছেন, যাদের পূর্বে ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার ছবি বা সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিদ্রুপ করার অভিযোগ থাকা রাজু শেখও পেয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়কের পদ।

ছাত্রদলের একটি সূত্র বলছে, সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো গত ৫ আগস্টের পর রাজু শেখ তার ফেসুবকে এই পোস্টটি দেন। তার মতো বির্তকিত এমন একজনকে ছাত্রদলে পদ দেওয়াটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করেন রাজু শেখ বলেন, ‘আমার ছবি দিয়ে ফেইক আইডি খুলে কেউ হয়তো এই পোস্ট করেছে। আমার নিজের আইডি দিয়ে আমি কোনো ধরনের পোস্ট দিইনি। আন্দোলনে আমি সক্রিয় ছিলাম। আমাকে কেউ ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। ৫ আগস্টের পরে আমি রাজনীতিতে এসেছি, এর আগে আমি রাজনীতিতে ছিলাম না।’

এদিকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় ছাত্রলীগের পক্ষে অবস্থান নিয়ে সহপাঠীদের দ্বারা বয়কট হওয়া এক শিক্ষার্থীকে ছাত্রদলের কমিটিতে পদ দেওয়া হয়েছে। হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের কমিটিতে সদস্য পদ পেয়েছেন তিনি।

কমিটি ঘোষণার পর আহমেদ জাবির নামের ওই নেতার একটি পুরোনো মন্তব্য ভাইরাল হয়, যেখানে তিনি লিখেছিলেন, ‘সারা বাংলায় খবর দে, এক দফার কবর দে’। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের সঙ্গে তার একটি ছবিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক মাধ্যমে।

গত বছরের ২ আগস্ট আহমেদ জাবিরকে তার বিভাগ ডেভেলপমেন্ট স্ট্যাডিজের ১৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা বয়কট করে। এ-সংক্রান্ত বিবৃতিতে তখন শিক্ষার্থীরা জানায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি হলকে বর্তমানে ছাত্ররাজনীতি মুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। তারপরও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্ক থাকা ও ভবিষ্যতেও থাকার কথা ঘোষণা দেওয়ার ও পরোক্ষভাবে হামলাকারীদের পক্ষপাতিত্ব করায় আমরা বিভাগের শিক্ষার্থীরা তাকে বয়কট ঘোষণা করছি।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাতি গণেশ চন্দ্র রায় ও সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপনের মন্তব্যের জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে চেষ্টা করেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত