জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) প্রথম বর্ষের (২০ ব্যাচ) এক নারী শিক্ষার্থী র্যাগিংয়ের শিকার হয়ে প্যানিক অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়েছেন। গত ৩০ জুলাই দুপুরে আইইআর-এর একটি শ্রেণিকক্ষে এ ঘটনা ঘটে। পরে বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে আলোচনার জন্ম দেয়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা যায়, আন্তঃবিভাগ ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে আলোচনার জন্য ১৯ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা প্রথম বর্ষের শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করেন। ম্যানার বা আচরণ নিয়ে কথা বলার একপর্যায়ে একজন নারী সিনিয়র অসুস্থ ওই শিক্ষার্থীকে দাঁড় করিয়ে বলেন, “ক্যাম্পাসে কেন চিনলে না?” জবাবে শিক্ষার্থীটি জানান, তিনি তাকে চিনেন না। এরপর কয়েকজন সিনিয়র শিক্ষার্থী উচ্চস্বরে কথা বললে আতঙ্কিত হয়ে প্যানিক অ্যাটাক করেন ওই ছাত্রী।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বলেন, “সেদিন সকালে একজন আপুর সঙ্গে দেখা হয়েছিল, যাকে আমি চিনতাম না। পরে ক্লাসে এসে আপু আমাকে দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞেস করেন কেন এমন করলাম। আমি বলি, আপু, আমি তো আপনাকে চিনি না। এরপর কয়েকজন ভাই এসে বলেন, চিনো না কেন, নাম জানো না কেন। এ কথায় আমি ভয় পেয়ে যাই এবং প্যানিক অ্যাটাক হয়।”
ঘটনার পর ১৯ ব্যাচের কয়েকজন শিক্ষার্থী দাবি করেন, ভুক্তভোগী আগে থেকেই অসুস্থ ছিলেন এবং মাঝেমধ্যে অজ্ঞান হয়ে যান। তাঁরা দ্রুত তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান এবং সুস্থ হওয়ার পর ‘সরি’ বলেন।
বিভাগীয় সূত্র জানায়, ঘটনার পর ইনস্টিটিউটের পরিচালক ও সাবেক সহকারী প্রক্টর কাজী ফারুক হোসেন ভুক্তভোগী এবং ১৯ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের ডেকে কথা বলেন, তবে কোনো সমাধানে পৌঁছানো যায়নি।
এ ঘটনায় আইইআর পরিচালকের নীরব ভূমিকার অভিযোগ উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে চিঠি দেওয়ার নির্দেশনা থাকলেও তিনি তা কার্যকর করেননি বলে সূত্রে জানা যায়।
এ বিষয়ে আইইআর পরিচালক অধ্যাপক ড. মনিরা জাহান বলেন, “আমাদের কোনো ব্যাচ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। পরে একজন শিক্ষার্থীর মাধ্যমে বিষয়টি জানি। চিঠি দিয়ে ছাত্র উপদেষ্টারা কথা বলেছেন। রোববার (১০ আগস্ট) লিখিত অভিযোগ দেবে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা। উভয় ব্যাচের সঙ্গে বসে প্রশাসনকে জানানো হবে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক বলেন, “র্যাগিং সংক্রান্ত অভিযোগ তাৎক্ষণিক জানানোর দায়িত্ব বিভাগের। আমাদের কাছে আইইআর থেকে কোনো অভিযোগ আসেনি। সাংবাদিকদের মাধ্যমে শুনে আমরা বিভাগীয় চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তাকে না পেয়ে ছাত্র উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু এখনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাইনি।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী র্যাগিং দণ্ডনীয় অপরাধ হলেও আইইআর ঘটনার ক্ষেত্রে প্রশাসনিক পদক্ষেপে গড়িমসি ও দেরি নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

