ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির উড়ন্ত পায়রা চত্বর পরিণত হয় এক টুকরো গ্রামীণ বাংলায়। নবান্নের আনন্দ, শস্যের উচ্ছ্বাস, দেশজ রঙে রাঙানো নাচ-গান আর লাঠিখেলার ঢাকের শব্দে ভিন্নধর্মী আয়োজনে এদিন রঙিন হয়ে ওঠে পুরো চত্বর।
এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের উদ্যোগে আয়োজিত 'নবান্ন উৎসব' নগরজীবনের ভিড়ে গ্রামীণ কৃষ্টি-সংস্কৃতির সতেজ নিঃশ্বাস নিয়ে আসে। উৎসবে কৃষিনির্ভর সমাজের ঐতিহ্য, জাতিগত পরিচয় ও দেশজ সংস্কৃতির শিকড় খুঁজে পাওয়ার প্রয়াস ছিল।
বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা থেকে শুরু হওয়া এই আয়োজনে জাতীয় সংগীত পরিবেশনার মধ্য দিয়েই উৎসবের উদ্বোধন করা হয়।
উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব। তিনি বলেন, বিগত সময়ে “সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের” কারণে দেশীয় সংস্কৃতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা পুনরূদ্ধারে তরুণ সমাজের এগিয়ে আসা জরুরি।
দেশজ সংস্কৃতির বিকাশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের এই আয়োজনকে তিনি সুস্থ সাংস্কৃতিক চর্চার পথে ‘একটি প্রতীকী উদ্যোগ’ হিসেবে উল্লেখ করেন।
এদিন উৎসবের মূল মঞ্চ জমে ওঠে গ্রামীণ ঐতিহ্যের লাঠিখেলা দিয়ে। লাঠিখেলার ঘূর্ণায়মান ছন্দে চারদিক ভরে ওঠার পর একে একে মঞ্চে ওঠেন নাচ, গান, কবিতা আবৃত্তির পরিবেশনায় অংশ নেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
সংগীত আয়োজনে বিশেষ আকর্ষণ ছিলেন প্রখ্যাত বাউল শিল্পী চিশতী বাউল, সংগীতশিল্পী আকাশ গায়েন, ফারজানা আফরিন ইভা, আবু রাশেদ, পলাশ, রবি এবং ক্যাম্পাসের জনপ্রিয় আরও অনেক শিল্পী। তাদের পরিবেশনায় টিএসসির আঙিনা রূপ নেয় এক উন্মুক্ত লোকসংস্কৃতি অঙ্গনে।
আয়োজকরা বলেন, বাংলাদেশকে ‘সুজলা-সুফলা শস্য-শ্যামলা’ হিসেবে গড়ে তোলার পেছনে যে কৃষিভিত্তিক সমাজব্যবস্থা ও শ্রমজীবী মানুষের অবদান রয়েছে- সেই ইতিহাস, ঐতিহ্য ও জাতিগত অস্তিত্বকে নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরাই ছিল এ উৎসবের প্রধান লক্ষ্য।
তারা জানান, প্রযুক্তি ও ভিনদেশী বিনোদনের যুগে দেশজ সংস্কৃতি টেকসইভাবে ধরে রাখতে এমন আয়োজন আরও ঘন ঘন হওয়া প্রয়োজন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব, সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি গনেশ চন্দ্র রায় সাহস, সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপনসহ সংগঠনের অন্যান্য নেতাকর্মীরা।
অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের মতে, দলীয় পরিচয়ের বাইরে গিয়ে এমন উৎসব সাংস্কৃতিক উৎসব বারবার প্রয়োজন- যেখানে নবান্নের আনন্দ এবং দেশীয় ঐতিহ্যের আবহ মিশে থাকবে।

