আমার দেশ জনপ্রিয় বাংলা নিউজ পেপার

যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ হাইকমিশন

কনস্যুলার সার্ভিস বন্ধ, ভোগান্তিতে বাংলাদেশিরা

অলিউল্লাহ নোমান, লন্ডন থেকে
কনস্যুলার সার্ভিস বন্ধ, ভোগান্তিতে বাংলাদেশিরা

ব্রিটেনে বাংলাদেশের নতুন হাইকমিশনার আবেদা ইসলাম পরিকল্পিতভাবে বাড়িয়ে দিয়েছেন প্রবাসীদের ভোগান্তি ও হয়রানি। গত বছরের ৫ আগস্ট জুলাই বিপ্লবের পর যুক্তরাজ্যে অবস্থান করা বাংলাদেশিরা আরো সহজ ও অত্যাধুনিক সেবা পাওয়ার আশায় বুক বাঁধলেও বাস্তবে ঘটেছে তার উল্টোটা। দেশটির লিডস, লুটনসহ বেশ কয়েকটি শহরে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে কনসোলার সার্ভিস। এতে বেড়ে গেছে দুর্ভোগ।

গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত এসব শহরে কনসোলার সার্ভিস চলমান ছিল। বাংলাদেশি নাগরিকদের প্রয়োজনীয় কাজে লন্ডনে আসতে হতো না। নিজ শহরেই পাসপোর্ট নবায়ন, ই-পাসপোর্ট আবেদন, নো-ভিসা আবেদনসহ সব কাজ সম্পন্ন করতে পারতেন। লন্ডনে যাওয়া-আসার বিড়ম্বনা ও হাইকমিশনের হয়রানি থেকে বাঁচতেন তারা। একই সঙ্গে ফিঙ্গারপ্রিন্টসহ যাবতীয় কর্ম সম্পাদন হতো। পরে ডাকযোগে পাঠিয়ে দেওয়া হতো পাসপোর্টসহ প্রয়োজনীয় নথিপত্র। প্রতি দুই মাস অন্তর একদিন লুটনে কনসোলার সার্ভিস চালু ছিল ২০০৬ সাল থেকেই। কিন্তু বিপ্লবের মাধ্যমে পাওয়া নতুন হাইকমিশনার যেন লুটসনসহ অন্যান্য শহরের বাংলাদেশিদের জন্য অতিরিক্ত কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে পরিচিত হাইকমিশনার আবেদা দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই লন্ডনের বাইরের বেশ কয়েকটি শহরে কনসোলার সার্ভিস বিনা নোটিসে বন্ধ করেন।

বিজ্ঞাপন

সচেতন প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রশ্ন, সরকারের বিরুদ্ধে মানুষকে ক্ষেপিয়ে তুলতেই কি কাজটি করা হয়েছে? নাকি হঠাৎ করে মানুষের এই সেবা বন্ধ করার পেছনে অন্য কারণ আছে? প্রবাসীদের কষ্ট লাঘব করা ছাড়া হাইকমিশনের কাজ কী?

জানা গেছে, ২০০৬ সাল থেকে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত শুধু লুটনে ১০ হাজার বাংলাদেশি সেবা নিয়েছেন। অন্তত প্রতি দুই মাস অন্তর এক দিনের জন্য কনসোলার সার্ভিস লুটনের সিওয়াইসিডি সেন্টারে নাগরিকদের সেবার জন্য যাতায়াত করত। সিওয়াইসিডি বাংলাদেশিদের মাধ্যমে পরিচালিত চ্যারিটি সংস্থা। এই সেন্টারে কনসোলার সার্ভিস ফ্রি ব্যবহার করা হতো। তারা এর জন্য কোনো ভাড়াও নেয় না। বরং উল্টা এই চ্যারিটি সংস্থার পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা দেওয়া হয়ে থাকে। কনসোলার সার্ভিসের দায়িত্ব শুধু লন্ডন থেকে যাওয়া এবং প্রয়োজনীয় কাজ শেষ করে আবার চলে আসা।

কনসোলার সার্ভিস বন্ধ থাকায় এসব কাজের জন্য লন্ডনে যাওয়া-আসা করতে হচ্ছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের। এতে সময় ও অর্থ উভয়ই অপচয় হচ্ছে। একবার আসতে হয় জমা দিতে, আবার আসতে হয় সংগ্রহ করতে। এই আসা-যাওয়ায় অনেক কর্মঘণ্টাও নষ্ট হচ্ছে লন্ডনের বাইরে অবস্থানকারী বাংলাদেশিদের। এছাড়া হাইকমিশনে নানা বিড়ম্বনা তো আছেই।

সিওয়াইসিডির সমন্বয়কারী ফজিলত আলী খান বলেন, শুধু লুটনেই ৪০ হাজারের বেশি বাংলাদেশি পরিবার আছে। আশপাশের ছোট শহরগুলোতেও আছে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি পরিবার। এই পরিবারগুলোর সদস্যদের সার্বিক কনসোলার সার্ভিস এখানেই পাওয়া যেত, কিন্তু নতুন হাইকমিশনার যোগ দেওয়ার পর তা বন্ধ হয়ে গেছে।

একই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ফাইরোজা আবদুল সাত্তার আমার দেশকে বলেন, প্রতিদিন লুটনের বাংলাদেশি পরিবারের কেউ না কেউ আসেন কনসোলার সার্ভিস কবে আসছে সেটা জানতে। কিন্তু একাধিকবার ই-মেইল পাঠিয়েও হাইকমিশন থেকে কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। এমনকি টেলিফোন করেও কোনো জবাব মেলেনি।

হাইকমিশনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাইরের শহরগুলোতে কনসোলার সার্ভিসের জন্য পর্যাপ্ত বাজেটও আছে। মূলত, পাসপোর্ট সংক্রান্ত বিষয়গুলো দেখার দায়িত্বে আছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নিয়োজিত ব্যক্তিরা। স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়োজিতদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কিছু রেষারেষি নিয়েও জটিলতা তৈরি হয়েছে। এছাড়া নতুন হাইকমিশনারেরও অনীহা আছে।

ব্রিটেনের হাইকমিশনার আবেদা ইসলাম সিভি ও প্রোফাইল না দেখে কারো সঙ্গে কথা বলতে নারাজ। এছাড়া হাইকমিশনের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করে লন্ডনের বাইরের শহরগুলোতে কনসোলার সার্ভিস বন্ধ করার বিষয়ে কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি। একজন শুধু জানিয়েছেন, এটা নিয়ে হাইকমিশনেও আলোচনা হয়েছে বিভিন্ন বৈঠকে। সেবাগুলো সেপ্টেম্বর থেকে পুনরায় চালু করা যায় কিনা, সে বিষয়ে ভাবা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, ব্রিটেনে বাংলাদেশ হাইকমিশনে এখনো রয়ে গেছে ফ্যাসিবাদের ভূত। শেখ হাসিনার প্রতি অনুগতরাই দায়িত্ব পালন করছেন হাইকমিশনের বিভিন্ন উচ্চ পদে। এর সঙ্গে শাপেবর হয়ে এসেছেন ফ্যাসিবাদ অনুগত নতুন হাইকমিশনার।

Google News Icon

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন