চলে গিয়েও থামেননি আইয়ুব বাচ্চু

তার গানে এখনো ঘুম ভাঙে শহরের

জমির উদ্দিন, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ১৬: ২০

চট্টগ্রাম শহরের এক কোণে, এনায়েতবাজারের পুরোনো বাড়িটিতে আজও সকালবেলা হালকা বাতাস বইলে মনে হয় কোথাও একটা গিটার বেজে উঠেছে। সেই সুরে ভেসে আসে এক কণ্ঠ, ‘এই রুপালি গিটার ফেলে একদিন চলে যাবো...’ কিন্তু শ্রোতার মনে প্রশ্ন জাগে তিনি কি সত্যিই চলে গেছেন?

বিজ্ঞাপন

আজ ১৮ অক্টোবর, কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী আইয়ুব বাচ্চুর মৃত্যুদিন। কেটে গেছে সাতটি বছর। তবুও মনে হয় তিনি এখনও মঞ্চে দাঁড়িয়ে আছেন, গিটার হাতে, মুখে সেই অচেনা হাসি, চোখে আগুনের মতো ভালোবাসা। ১৯৬২ সালের ১৬ আগস্ট জন্ম চট্টগ্রামের এনায়েতবাজারে। কিশোর বয়সেই গিটারের প্রেমে পড়েছিলেন তিনি। পাড়ার অনুষ্ঠান, বন্ধুদের আড্ডা সব জায়গায় গিটার ছিল তার সঙ্গী। তারপর ধীরে ধীরে তিনি হয়ে উঠলেন এমন এক নাম, যার উচ্চারণেই জেগে ওঠে প্রজন্মের হৃদয় আইয়ুব বাচ্চু।

১৯৮২ সালে ব্যান্ড সোলস-এ যোগ দেন। তারপর ১৯৯১ সালে গঠন করেন নিজের স্বপ্নের ব্যান্ড লাভ রান্স ব্লাইন্ড (এলআরবি)। সেই ব্যান্ডের হাত ধরেই বাংলাদেশে রক সংগীতের বিপ্লব ঘটে। ‘ঘুম ভাঙা শহরে’, ‘ফেরারি মনটা আমার’, ‘আমার পৃথিবী তুমি’, ‘চলো বদলে যাই’ প্রতিটি গান যেন সময়ের গণ্ডি পেরিয়ে বেঁচে আছে।

২০১৮ সালের ১৮ অক্টোবর সকালটা ছিল নিস্তব্ধ। হঠাৎ খবর এলো আইয়ুব বাচ্চু আর নেই। পুরো দেশ স্তব্ধ। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায়, সিলেট থেকে খুলনায় সব শহর কেঁদেছিল সেদিন। বৃষ্টি হয়েছিল, যেন আকাশও বুঝে গিয়েছিল, এক সুরকারের বিদায় মানে কতটা নিঃসঙ্গতা। তার মৃত্যুর পরদিন চট্টগ্রামের মাঠে-ঘাটে, দোকানে, রিকশায়, বাসে সবখানেই বাজছিল তার গান। লোকেরা বলছিল, ‘তিনি মরেননি, তিনি এখন আকাশে গিটার বাজাচ্ছেন।’

আইয়ুব বাচ্চুর গানের ভক্ত সংখ্যা কোটি ছাড়িয়েছে। কিন্তু প্রত্যেকের হৃদয়ে তিনি একান্ত ব্যক্তিগত কেউ কারও জন্য প্রথম প্রেমের সঙ্গী, কারও জন্য বেদনার বন্ধু। চট্টগ্রাম কলেজের দ্বিতঅয় বর্ষের ছাত্র রায়হান উদ্দিন বলেন, ‘যখন মন খারাপ হয়, আমি শুধু ‘ফেরারি মনটা আমার’ চালিয়ে দিই। মনে হয়, তিনি আমার মনের কথাই বলছেন।’

আরেক তরুণ ভক্ত নওরীন হাসান বলেন, ‘বাচ্চু ভাই মারা যাওয়ার দিন রাতে আমি সারারাত কেঁদেছিলাম। এখনো ঘুমাতে পারি না তার গান না শুনে। তিনি শুধু শিল্পী নন, তিনি একটা সময়।’

স্টেজে আইয়ুব বাচ্চু ছিলেন এক আলাদা দুনিয়া। মঞ্চের আলো নিভে গেলে তিনি যেন পুরো শহরকে আলো দিয়ে ভরিয়ে দিতেন। তার আঙুলের স্পর্শে গিটার কাঁদত, হাসত, ভালোবাসত। দর্শক শুধু গান শুনত না, তার সঙ্গে অনুভব করত প্রতিটি বিট, প্রতিটি শ্বাস।

তার ব্যান্ডমেটরা স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘একবার এক কনসার্টে বিদ্যুৎ চলে গিয়েছিল। কিন্তু বাচ্চু ভাই গিটার বাজিয়ে গেয়ে গেছেন, দর্শক চুপ হয়ে শুনছিল। তখনই বুঝেছিলাম, এই মানুষটা আলাদা।’

আইয়ুব বাচ্চু রেখে গেছেন স্ত্রী ফেরদৌসি বেগম, কন্যা রাজকন্যা ও পুত্র তাজওয়ারকে। তাজওয়ার এখন গিটার শিখছেন বাবার স্বপ্ন বয়ে নিয়ে চলেছেন। রাজকন্যা এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘বাবা বলতেন ‘গিটার আমার অস্ত্র, ভালোবাসা আমার শক্তি।’ আজ বুঝি, তিনি কতটা সত্যি বলেছিলেন।’

আজও চট্টগ্রামের প্রতিটি ব্যান্ডের তরুণ সদস্যরা গিটারের তারে বাজায় তার গান। কেউ দেয়ালে আঁকে তার মুখ, কেউ কনসার্টে চিৎকার করে বলে, ‘বাচ্চু ভাই, আমরা আপনাকে ভুলিনি।’ প্রতিবার গিটার বাজে, মনে হয় তিনি ফিরে এসেছেন। হয়তো অন্য কোনো আলোতে, অন্য কোনো মঞ্চে কিন্তু সুরে এখনো তিনি বেঁচে আছেন। চলে গিয়েও থামেননি আইয়ুব বাচ্চু। তার গানে এখনো ঘুম ভাঙে শহরের, তার সুরে জেগে ওঠে ভালোবাসা, আর তার গিটারে এখনো কাঁদে এক জাতির হৃদয়।

গভীর রাতে বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে ওএমএসের চাল বিক্রির অভিযোগ

শপথ নিলেন পিএসসির নতুন সদস্য আফতাব হোসেন

মোটরবাইক নিষেধাজ্ঞায় বিলিয়ন ডলারের বাজার হারানোর শঙ্কায় ভিয়েতনাম

বিএনপি নেতার চাপে জুলাই হত্যা মামলার দুই আসামিকে ছেড়ে দিলেন ওসি

সাবেক আইজিপি মামুন অন্যের ঘাড়ে বন্দুক রেখে বাঁচার চেষ্টা করছেন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত