দেশের সংকটে সবসময় ভূমিকা রাখব

মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ
প্রকাশ : ১৯ জুলাই ২০২৫, ১৬: ২৫

পারশা মাহজাবীন পূর্ণী। ২০২৪ সালের জুলাইয়ে তার গাওয়া ‘চলো ভুলে যাই’ জুলাই যোদ্ধাদের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। তিনি গান লেখেন, গান এবং অভিনয় করেন। ঘুমপরী নামের একটি ওয়েবফিল্মে তার অভিনয় নজর কেড়েছে। সাম্প্রতিক অবস্থা ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন আমার দেশ-এর সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ

সাম্প্রতিক ব্যস্ততা কী নিয়ে?

বিজ্ঞাপন

আপাতত কাজে গ্যাপ দিচ্ছি। অনেকগুলো স্ক্রিপ্ট হাতে আসছিল। যে ধরনের কাজ চাই, সেই ধরনের স্ক্রিপ্ট পাইনি। ফলে কাজ কমিয়ে দিয়ে পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত সময় যাচ্ছে। এর ফাঁকে টুকটাক স্টেজ শো করছি। বৃহস্পতিবার জুলাই পুনর্জাগরণ অনুষ্ঠান উপলক্ষে চট্টগ্রাম স্টেডিয়ামে গান করলাম, যে গান জুলাইয়ে ছড়িয়ে পড়েছিল। ‘চলো ভুলে যাই’ গাইলাম।

নতুন গান আসবে?

একটা গান বছর দুই আগে করা হয়েছিল। এখনো রিলিজ দিইনি। গানটা রিলিজ হতে পারে যেকোনো সময়। ইমরান মাহমুদুল ভাইয়ের সঙ্গে গেয়েছি। আমারই লেখা। বেশ সুন্দর একটা গান। দ্রুতই শ্রোতাদের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে পারব বলে আশা করছি।

পড়াশোনা কোথায় করছেন?

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে পড়ছি সেভেন সেমিস্টারে।

ঘুমপরীর অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?

ঘুমপরীতে দারুণ সাড়া পেয়েছি। এই সিনেমায় কাজ করে একটা সমস্যাও হয়েছে। প্রত্যাশার একটা লেভেল তৈরি হয়ে গেছে। নতুন কোনো কাজ হাতে এলে মনে হচ্ছে, এটা ঘুমপরীর মতো হবে না। ফলে বেশির ভাগ কাজ বাদ দিতে হচ্ছে। ঘুমপরী নিজের প্রতি নিজের প্রত্যাশা তৈরি করে দিয়েছে।

প্যারিসে পরিবেশনায় অংশ নিয়েছিলেন?

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ইউনেস্কোর সদর দপ্তরে আমন্ত্রিত হয়ে একটা পরিবেশনায় অংশ নিয়েছিলাম ফেব্রুয়ারিতে। সেটা ছিল আমার জন্য দুর্দান্ত এক অভিজ্ঞতা। আমরা আটজন অংশ নিয়েছিলাম। সবাই ছিলেন নিজ নিজ ক্ষেত্রে সেরা শিল্পী। খুব সুন্দর আয়োজন ছিল। প্যারিস শহরটাই তো সুন্দর। মনে হয় সিনেমার ভেতরে আছি। দেশকে রিপ্রেজেন্ট করার এই অনুভূতি দুর্দান্ত। আমি লালনগীতি গেয়েছিলাম। সবাই পছন্দ করেছে। এটা স্বপ্নের মতো অর্জন।

জাপান সফর কেমন লাগল?

প্যারিসের প্রোগ্রামের দুমাস পরেই জাপান গিয়েছিলাম। সেখানেও গান পরিবেশন করেছি। জাপান ভালো লাগার কারণ হলো ওখানে অনেক বাঙালি। তারা খুবই আন্তরিক। দারুণ সময় কেটেছে।

গান, লেখালেখি, নাকি অভিনয়?

আসলে আমি তিনটাই ব্যালেন্স করার চেষ্টা করছি। আমি তো লিখি অনেক। লিখতে অনেক ভালো লাগে। যে কোনো সময় বসে যাই লিখতে। তবে সব লেখা রিলিজ দিই না। নিজের জন্য লেখা হয় বেশি। মনের অনুভূতি প্রকাশ করি লেখার মাধ্যমে।

অভিনয়ের ব্যাপারে অনেক চুজি। স্ক্রিপ্ট, নির্মাতা ও সহশিল্পী পছন্দ হলেই কাজ করতে চাই। পছন্দসই না হলে আমি কাজ করি না। খুব বেশি অভিনয়ের ইচ্ছা নেই। তবে যে কয়টা কাজ করব, তা যেন মনে রাখার মতো হয়।

গানও নিজের ভালোলাগার জন্য করা। কমার্শিয়ালি এখনো শুরু করিনি। দ্রুতই শুরু করব। আসলে আমি অনেক কিছুর মধ্যে থাকি তো—কোনোকিছু ফোকাস করে করা হয় না। আমার একেক সময় একেক জিনিস ভালো লাগে। যখন যেটা ভালো লাগে তখন সেটাই করি।

বড়পর্দায় কবে দেখা যাবে?

বড়পর্দায় বেশ কিছু কাজের অফার পেয়েছি। জংলিতেই লিড ক্যারেক্টারের অফার ছিল। তখন আমি অভিনয়ে একেবারেই নতুন। ঘুমপরীও করিনি। একেবারেই নতুন। পারব কি না, এই ভেবে ভয় পাচ্ছিলাম। দু-তিন দিন রিহার্সেলে গিয়েছিলামও। ভয় কাটল না। আমার মনে হচ্ছিল চরিত্রটা ফুটিয়ে তুলতে পারছি না। এমনটা ঘুমপরীর সময়ও হয়েছিল। সাহসের অভাবে বড়পর্দায় কাজ করা হলো না। আমি যেটাই করি, শিখে এসে ভালোভাবে করতে চাই। সামান্য অনীহা থাকলেই সেটা আর করতে ইচ্ছে করে না।

গণঅভ্যুত্থানের প্রত্যাশা কতটুকু পূরণ হলো?

এটা এখনই বলা মুশকিল। দেশ কোন দিকে যাচ্ছে, প্রত্যাশা পূরণ হবে কি না, এখনই বোঝা যাচ্ছে না। বুঝতে আরেকটু সময় লাগবে। আমার জায়গা থেকে মানুষকে ভালোবেসে যেটুকু করা যায় করেছি। এখন যা হচ্ছে হয়তো ক্ষমতা বদলাতে গেলে এমনটাই হয়। তারপরও যা হচ্ছে তা ভালো হচ্ছে না। দেশ নিয়ে আমরা আতঙ্কে থাকি। ছোটখাটো ইস্যু থেকে বড় কিছু করা হচ্ছে। সবার নিয়ন্ত্রিত হওয়া উচিত।

কী ভেবে ‘চলো ভুলে যাই’ গানটা করেছিলেন?

ছাত্রদের আন্দোলনে গুলি করে এত এত মানুষকে মেরে ফেলা হচ্ছে, এটা নিতে পারছিলাম না। তাৎক্ষণিক গানের লাইনগুলো মাথায় এলো। করে ফেললাম। তখন আর কিছু ভাবনায় ছিল না। সেই গানটা যে মানুষের এত পছন্দ হবে, মুহূর্তেই সারা দেশে ছড়িয়ে যাবে বুঝতে পারিনি।

ভবিষ্যতে দেশের সংকটে আবার ভূমিকা রাখবেন কি না?

অবশ্যই রাখব। দেশকে আমি ভালোবাসি। দেশের কথা ভাবি। দেশের প্রয়োজনে যেকোনো সময় আমার সর্বোচ্চ দিয়ে পাশে থাকব। তবে আমি একা তো কিছুই করতে পারব না। তখন আমি একা ছিলাম না। আমার সঙ্গে লাখ লাখ মানুষ ছিল। এখন সবাই আবার বিভাজনে জড়িয়ে গেছে। একেকজন একেকভাবে চিন্তা করে। কাজের ধরনও আলাদা।

দেশের মানুষের প্রতি প্রত্যাশা?

আমরা মনে করি ফেসবুকে যারা উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় করে, তারাই কেবল আছে। আসলে তা নয়। আমার মতো অনেক মানুষ আছে যারা দেশে সংঘাত চায় না, দেশের ভালো চায়। আমরা তাদের কথা শুনি না। আমরা তাদের কথাই শুনি, যারা বাজে কথা বলে, বাজে চিন্তা করে। মিডিয়াকর্মীদের উচিত ভালো চিন্তার মানুষগুলোকে তুলে আনা।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত