আমার দেশ

বই মেলায় বিদায়ের সুর

এমরানা আহমেদ
বই মেলায় বিদায়ের সুর

অমর একুশে বইমেলা শেষ হতে আর বাকি তিন দিন। ভাঙবে মিলনমেলা। এখনই লেখক, পাঠক ও প্রকাশকদের মন খারাপ। বিদায়ের সুর যে বেজে উঠেছে! এ কারণে বেড়েছে ভিড়, পুরোদমে জমজমাট বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ। তাইতো বেলা ৩টায় মেলার গেট খুলতেই ঢল নামে দর্শনার্থী ও পাঠকের। যারা আসছেন, তাদের অধিকাংশই কিনছেন বই। ঘটছে লেখক-পাঠকের মিলনমেলাও।

ক্রেতা বাড়ায় পাঠকের চাহিদা পূরণে সর্বদা প্রস্তুত থাকছেন স্টলের বিক্রয়কর্মীরা। দারুণ ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। মেলার শেষ সময় বেচা-বিক্রি বেশ সন্তোষজনক বলে জানালেন প্রকাশক ও বিক্রয়কর্মীরা।

বিজ্ঞাপন

কুষ্টিয়া প্রকাশনের প্রধান নির্বাহী রাব্বুল ইসলাম খান আমার দেশকে বলেন, এবার মেলা বেশ ভালো হয়েছে। বইয়ের বিক্রিও বেশ ভালো।

মেলায় আগতদের অনেকেই বলেন, বই কেনার পর বাড়তি যে জিনিসটি পাওয়া যায়, সেটা হচ্ছে বন্ধুদের সঙ্গে দেখা-আড্ডা, জমে গল্প। আয়োজনটি শেষ হয়ে আসছেÑ এটা ভেবেই ভীষণ খারাপ লাগছে। প্রিয় বইমেলার জন্য আবার একটি বছর অপেক্ষা করতে হবে। গতকাল বাংলা একাডেমির তথ্যকেন্দ্রে নতুন বই জমা পড়ে ১০১টি। এ নিয়ে গত ২৫ দিনে মোট দুই হাজার ৬২২টি বই জমা পড়েছে।

পুথিলিয়ন প্যাভিলিয়নের সামনে ঢাকার বাইরে থেকে আসা গাজী সাব্বির আহমেদ নিশাদ বলেন, বইমেলায় আসতে পেরে বেশ ভালো লাগছে। এবারের পরিসর বেশ বড়। স্টলভর্তি বই দেখে মনটাও ভরে যাচ্ছে। স্বৈরাচারী সরকার পতনের পর মানুষ স্বস্তি পেয়েছে। আমার মনে হয় মানুষের এই স্বস্তি বইমেলায়ও দারুণভাবে প্রভাব ফেলেছে। মেলায় বিএনপিরও বেশকিছু স্টল দেখে খুব ভালো লেগেছে তার।

মেলায় আসা ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহি আহমেদ জুবায়ের বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিদায়ের মধ্য দিয়ে নতুন জীবন ফিরে পেয়েছি। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ফিরে এসেছে। মেলায় আমাদের নেতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, তারেক রহমান এবং দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে নিয়ে লেখা বই দেখে ভীষণ ভালো লাগছে।

আদর্শের বিক্রয়কর্মী নাইজা জানান, তাদের স্টলে মুরাদ কিবরিয়ার ‘প্রেম প্রার্থনা মৃত্যু’, সালাউদ্দিন শুভ্রর ‘আজাদি’ আর ‘অদ্বিতীয়া’ বইটি পাঠকচাহিদার শীর্ষে রয়েছে। জোনাকী প্রকাশনীর নাসরিন জাহানের বই ‘বৈদেহী’, ‘পাতার ঘুরি মাথার চক্কর’, ‘চিল পাখির নীল ঠোঁট’। এছাড়াও এম আরিফুল ইসলাম কল্লোলের ‘রূপালী স্মৃতি’, মোহাম্মদ মোকছেদুর রহমান ওয়ালী সম্পাদিত ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ’, রুবিনা আলমগীরের ‘আত্ম কান্না’, শাপলা জাকিয়ার ‘ফিনিক্স’, রম্য সাহিত্যিক আতাউর রহমানের ‘রচনা সমগ্র’ ও রচনা ‘সমগ্র ২য় খণ্ড, খিলখিল কাজীর সম্পাদনায় ‘কাজী নজরুল ইসলামের পঞ্চকাব্য’, শেখ হাফিজুর রহমানের ‘বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের প্রেক্ষাপট’, গাজীউল হকের (ভাষাসৈনিক) ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ বইটি পাঠকরা বেশ কিনছেন।

মেলায় এসেছেন কিশোর আলফাজ। তিনি সায়েন্স ফিকশন, ভ্রমণ বা রোমাঞ্চকর বই খুঁজছেন। মেলা থেকে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি বইও কিনেছেন। তিনি বলেন, মেলায় এসে বেশ ভালো লাগছে। আমার পছন্দ বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি। সেরকম বই খুঁজছি।

রাজধানীর বনশ্রী থেকে গৃহিণী তামান্নারা তানিয়া মেলায় এসেছেন। তিনি মেলা থেকে সব সময় অনেক বই কেনেন। তিনি বলেন, বইমেলা যেদিন শেষ হয়, সেদিন থেকে আবার অপেক্ষা করি পরের বছরের বইমেলার জন্য।

প্রতিদিনই মেলায় আসছে শিশুরা। তারা শিশু প্রাঙ্গণ ঘুরে ঘুরে নানা ধরনের বই দেখছে ও কিনছে। অধিকাংশ বইই গল্পের। মেলার এ অংশটিও বেশ জমজমাট থাকতে দেখা গেছে।

মেলা প্রতিদিন শুরু হয় বেলা ৩টায়। চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। তবে রাত সাড়ে ৮টার পর মেলায় প্রবেশ নিষেধ।

Google News Icon

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন