শীতের নরম হাওয়ায় বনশ্রী যেন নতুন রঙ পেয়েছে নারী ও তরুণ উদ্যোক্তাদের স্বপ্নের আলোয়। বিজয়ের মাসে এই উৎসব আমাদের মনে করিয়ে দেয় দেশের সাহসী যুবসমাজের উদ্যম এবং নারীদের অদম্য সাহস। বিএইচ বিজনেস ক্লাবের আয়োজিত হেমন্ত উদ্যোক্তা উৎসব শুধু পণ্য প্রদর্শনীর মেলা নয়, এটি স্বপ্ন দেখার সাহস, আত্মবিশ্বাস এবং স্বাবলম্বিতার এক নতুন দিগন্ত।
ব্লু অলিভ রেস্টুরেন্ট ৭ ডিসেম্বর নারী উদ্যোক্তাদের পদচারণায় মুখর ছিল। এই উৎসবে অংশ নেন ৩০ জনেরও বেশি নারী উদ্যোক্তা। ফ্যাশন জুয়েলারি, কসমেটিকস, হোম ডেকর, শিশুদের পণ্য, শীতকালীন পোশাকসহ স্টলগুলো সাজানো হয়েছিল। প্রতিটি পণ্যের মধ্যে লুকিয়ে ছিল তাদের স্বপ্ন, ধৈর্য ও সাহসিকতার গল্প। এছাড়া ছিল বিদেশি কসমেটিক্স।
এই প্ল্যাটফর্ম শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে স্বাবলম্বী হতে ইচ্ছুক নারীদের মধ্যে উদ্যোক্তা ভাবনা তৈরি করে। বনশ্রী এলাকায় এরই মধ্যে মেলাকে কেন্দ্র করে একধরনের উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। মেলা দেখলে মনে হয়, এখানে স্বপ্নের বীজ পাকা ফুলে রূপান্তরিত হচ্ছে।
মেলায় প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ বেতারের উপস্থাপিকা ও কুকিং অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক রন্ধনশিল্পী হাসিনা আনসার। বিশেষ অতিথি ছিলেন ফারজানা বুটিকসের প্রতিষ্ঠাতা ফারজানা আফরিন। হাসিনা আনসার তার বক্তব্যে বলেন, ‘এ ধরনের মেলা শুধু পণ্যের প্রদর্শনী নয়, এটি একজন মানুষের স্বপ্ন প্রকাশের সাহস দেয়। ঢাকার মতো ব্যস্ত শহরে এত অল্প খরচে উদ্যোক্তাদের অফলাইনে নেটওয়ার্ক বিস্তারের সুযোগ বিরল।’
ফারজানা আফরিন বলেন, ‘বড় সুপারশপ থেকে সবসময় কেনার সামর্থ্য থাকে না। স্থানীয় ব্র্যান্ডগুলো হতে পারে বিকল্প। সাধ্যের মধ্যে মানুষ যেন পোশাক, গৃহসামগ্রী ও সাজসজ্জার পণ্য কিনতে পারে।’
ক্রেতা ও বিক্রেতার সরাসরি সংযোগ
মেলায় দর্শকরা বিভিন্ন পণ্যের সঙ্গে পরিচিত হয়েছেন। সেখানে ছিল বিশেষ শপিং অফার, শিশুদের কর্নার, যা মেলার আনন্দকে দ্বিগুণ করেছে। স্থানীয় ব্র্যান্ডের প্রতি মানুষের আগ্রহ যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে, তেমনি উদ্যোক্তাদের জন্য সরাসরি ক্রেতাদের কাছে পণ্য তুলে ধরার এই ধরনের প্ল্যাটফর্মও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
ঢাকার বাইরে থেকে আসা উদ্যোক্তাদের স্টলগুলোও দর্শকদের সমানভাবে আকৃষ্ট করেছে। প্রতিটি স্টল যেন উদ্যোক্তাদের গল্প বলছে, যা দর্শকদের মুগ্ধ করেছে। অতিথিরা মেলার প্রতিটি স্টলে ঘুরে উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলেন। তাদের এই উপস্থিতি উদ্যোক্তাদের অনুপ্রাণিত করে।
উদ্যোক্তাদের বিস্তারে ক্লাবের অবদান
বি এইচ বিজনেস ক্লাব শুধু মেলার আয়োজন করে না, এটি তরুণ উদ্যোক্তাদের হাতে বাস্তবিকভাবে স্বপ্ন গড়ার সুযোগ দিচ্ছে। প্রথমবারের মতো নিজের ব্র্যান্ড জনসম্মুখে তুলে ধরা, স্টল পরিচালনা এবং দর্শকদের সঙ্গে সরাসরি সংযোগের অভিজ্ঞতাগুলো উদ্যোক্তাদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করছে।
মেলার বাইরে ক্লাব নিয়মিত ওয়ার্কশপের আয়োজন করে, যেখানে শেখানো হয় অনলাইনে ব্যবসা শুরু করার কর্মপদ্ধতি, পণ্যের ফটোগ্রাফি এবং বাজারজাতকরণের বাস্তবমুখী কৌশল। এটি তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য এক শক্তিশালী শিক্ষা এবং অনুপ্রেরণার ক্ষেত্র।
বনশ্রীর হেমন্ত উদ্যোক্তা উৎসব কেবল পণ্য বিক্রির মেলা নয়। নারী উদ্যোক্তারা এখান থেকে প্রেরণা নিয়ে প্রতিদিন নতুন স্বপ্ন গড়বে, নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করবে এবং দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতিতে অবদান রাখবে। উৎসবটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—স্বপ্ন, পরিশ্রম ও সাহস একসঙ্গে মিললে অসাধারণ কিছু করা সম্ভব।


দুই মুক্তিযোদ্ধার কথা