দশম গ্রেডের দাবিতে হাসপাতালসহ দেশের সব স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করেছেন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টরা। বুধবার সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চলে এই কর্মসূচি। এতে চরম দুর্ভোগে পরতে হয় চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগীদের। বিশেষ করে রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে রোগীদের ভোগান্তি সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়।
মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্ট ১০ম গ্রেড বাস্তবায়ন পরিষদের ব্যানারে এ কর্মসূচি পালন করছেন তারা।
দেশের সবচেয়ে বড় চিকিৎসা কেন্দ্র ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। প্রতিদিন দশ হাজারের বেশি মানুষ চিকিৎসা সেবা নেয় প্রতিষ্ঠানটিতে। যার বড় অংশই আসেন ঢাকার বাইরে থেকে। কর্মবিরতি শুরু হলে বিপাকে পড়েন রোগীরা।
বুধবার সকালে বহিবির্ভাগে জড়ো হন টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টরা। এ সময় তারা দ্রুত সরকারকে দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান জানান। নতুবা কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেন।
একই কর্মসূচি পালিত হয়েছে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ সোরাহওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালস ও ন্যাশনাল ল্যাবরেটরি অ্যান্ড রেফারেল সেন্টারের মত প্রতিষ্ঠানেও। এতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ওষুধ পেতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয় রোগীদের।
হাঁড়ের সমসা নিয়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে আসেন ইলিয়াস হোসেন (৪৭)। কেরাণীগঞ্জের এই বাসিন্দা বলেন, ‘আগে ডাক্তার দেখাতে সকাল সাড়ে ৭টায় হাসপাতালে এসেছি। তারপরও ডাক্তার দেখাতে সাড়ে ৮টা লেগে গেছে। ডাক্তার বেশকিছু টেস্ট দিয়েয়েছে, সঙ্গে ওষুধ। কিন্তু স্যাম্পল (নমুনা) নেওয়া হচ্ছেনা। ওষুধের জন্য গেলে ফামেসি বন্ধ। কখন খুলবে জানিনা।’
কর্মবিরতিতে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে অবস্থান নেন টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টরা। এ সময় বক্তব্য রাখেন ১০গ্রেড বাস্তবায়ন পরিষদের সমন্বয়কারী ও বাংলাদেশ ফার্মাসিস্ট পরিষদের আহ্বায়ক নাছির আহাম্মেদ রতন, বিডিপিএ’র সিনিয়র সহসভাপতি মনিরুল ইসলাম, এমরান হাসান সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
আন্দোলনরত মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টরা নেতারা জানান, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের ১০ম গ্রেড বাস্তবায়নের ফাইলটি জনপ্রশাসনে মন্ত্রণালয়ে আটকে আছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও মন্ত্রণালয়ে বার বার উপস্থাপিত হয়ে আসছে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে আন্দোলন, সংগ্রাম, দাপ্তরিক চিঠি চালাচালি, জনপ্রশাসন বিধি শাখার সমস্ত চাহিদা পূরণ করা সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছার অভাব, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও নানাবিধ উদ্দেশ্যে মন্ত্রণালয় অবিরতভাবে কোয়াবি দেয়ার মাধ্যমে সময়ক্ষেপণ ও জটিলতা তৈরি করছে। ইতিপূর্বে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার, ডিপ্লোমা নার্স ও ডিপ্লোমা কৃষিবিদরা ১১তম গ্রেড থেকে ১০ম গ্রেডে উন্নীত হয়েছে।
এর আগে গত ৩০ নভেম্বর একই দাবিতে দুই ঘণ্টা কর্মবিরতি করেন টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টরা। আগামীকাল বৃহস্পতিবারও অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালনের কথা জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
রোগীদের ভোগান্তিতে ফেলে কর্মবিরতি পালন না করার আহ্বান জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব সাইদুর রহমান। আমার দেশকে তিনি বলেন, ‘বুধবার রাতেও দীর্ঘ সময় টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। আমরা তাদের দাবির সঙ্গে একমত। কিন্তু চাইলেও হঠাৎ করে সবকিছু হয়না। এগুলো সময় সাপেক্ষ। তাই, রোগীদের কষ্ট হয় এমন কর্মসূচি দেওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।’

