শেষ সময়ের বেচাবিক্রিতে ব্যস্ত সবাই। বইমেলা প্রাঙ্গণও এখন কানায় কানায় পূর্ণ। পাঠকরা আসছেন, বই কিনে বাড়ি ফিরছেন। প্রকাশক, বিক্রেতাও খুশি। বইয়ের বিক্রি নিয়ে কেউ কেউ হতাশা প্রকাশ করলেও অধিকাংশই বিক্রি আশানুরূপ হয়েছে বলে জানান। গতকাল বুধবার বাংলা একাডেমির তথ্যকেন্দ্রে নতুন বই জমা পড়ে ১৬৬টি। এ নিয়ে গত ২৬ দিনে মোট ২ হাজার ৭৮৮টি বই জমা পড়েছে।
কাশবন প্রকাশন থেকে মেলায় এসেছে সৈয়দ আবদাল আহমদের লেখা ‘নন্দিতনেত্রী খালেদা জিয়া : সংগ্রামমুখর জীবনালেখ্য’ শীর্ষক জীবনীগ্রন্থের সপ্তম সংস্করণ। শেখ হাসিনার জুলুমের কারাগার থেকে খালেদা জিয়ার মুক্তি, লন্ডনে উন্নত চিকিৎসা, ডামি নির্বাচন এবং সেনাকুঞ্জে সশস্ত্র বাহিনী দিবসে তাকে সম্মান জানানোর বিষয়গুলো নতুন সংস্করণে সংযোজন করা হয়েছে। বইটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৯১ সালের আগস্টে। বইটির দাম ৬৫০ টাকা।
রাজধানীর বনশ্রী থেকে গৃহিণী তামান্নারা তানিয়া তার দুই ছেলে গাজী তাওসিফ নূর আয়ান এবং গাজী আয়াজকে নিয়ে মেলায় এসেছেন বই কিনতে। বাচ্চারা এত বই একসঙ্গে দেখে বেশ আনন্দ পেয়েছে। তাদের পছন্দের অনেকগুলো বই কিনেছেন বলে জানান তিনি। লৌহজং থানার যশলদিয়ার ২নং ওয়ার্ড ছাত্রদল সভাপতি গাজী সাব্বির আহমেদ আমার দেশকে বলেন, এবারের মেলার পরিসর বেশ বড়। তাছাড়া স্বৈরাচারের কবল থেকে দেশ এখন স্বাধীন। বইমেলায় এসেও নিজেকে স্বাধীন স্বাধীন লাগছে। নিজের পছন্দের দলের নেতা-নেত্রী নিয়ে লেখা বই দেখে ভীষণ ভালো লাগছে।
সত্যায়ন প্রকাশনের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিক্রয়কর্মীরা আমার দেশকে বলেন, মেলায় সবসময়ই আমাদের স্টলের বই ক্রেতাচাহিদার শীর্ষে থাকে। এবার বের হওয়া প্রতিটি বই প্রচুর বিক্রি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে আরিফ আজাদের ‘কুরআন থেকে নেওয়া জীবনের পাঠ’, ‘হায়াতের দিন ফুরোলে’ ডা. শামসুল আরেফিনের লেখা ‘ডাবল স্ট্যান্ডার্ড-২’। জামিলা হোর লেখা ‘সন্তান গড়ার কৌশল’, আরিফুল ইসলামের ‘প্রদীপ্ত কুটির’ ও ‘খোঁপার বাঁধন’, মাওলানা সালেহ আজাদীর ‘ইনকাম অ্যান্ড মাইন্ডসেট’, আবিদ ইকবালের ‘মনে মনে প্রধানমন্ত্রী’, আদিল মোর্শেদের ‘ঘ্যাচাং’, ফারায উদ্দিন ফারহানের ‘প্রচেষ্টা’, জনপ্রিয় ইসলামিক বক্তা ড. মিজানুর রহমান আজহারীর লেখা ‘জেগে ওঠো আবার’ বইটি পাঠকচাহিদার শীর্ষে রয়েছে। মাওলানা আজহারীর ‘একনজরে কুরআন’ বইটির পাঠকের চাহিদা থাকলেও মেলায় আনা সম্ভব হয়নি বলেও সত্যায়ন প্রকাশনের বিক্রয়কর্মীরা জানান।
মেলার শুরুতে শিশুচত্বরে লোকসমাগম ও শিশুদের তেমন উপস্থিতি দেখা যায়নি। এ বিষয়ে ঝিঙেফুলের প্রকাশক গিয়াসউদ্দিন খসরু বলেন, আসলে বাচ্চাদের কাছে শিশুচত্বরে মূল আকর্ষণ থাকে সিসিমপুর। এবার শিশুদের প্রিয় কার্টুন চরিত্রগুলো কম থাকায় এই চত্বরে বই বিক্রিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে জানান গিয়াসউদ্দিন। ছোটদের সময় প্রকাশনী থেকে বেশকিছু নতুন বই এসেছে বলে জানান প্রকাশক ও লেখক মামুন সারওয়ার।
দ্বিমিক প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী শান্তা সেতু আমার দেশকে বলেন, মেলায় পাঠক আসছেন। বই কিনছেন। শেষ সময়ে বেচাবিক্রি কয়েকগুণ বেড়েছে। এ প্রকাশনী থেকে বের হয়েছে তামিম শাহ্রিয়ার সুবিনের লেখা ‘কম্পিউটার প্রোগ্রামিং’ (১ম খণ্ড থেকে তৃতীয় খণ্ড), তাহমিদ রাফির ‘প্রোগ্রামিং এক্সারসাইজ’, তামিম শাহ্রিয়ার সুবিন, তাহমিদ রাফি ও তামান্না নিশাত রিনির লেখা ‘৫২টি প্রোগ্রামিং সমস্যা’ বইগুলো।
জাগৃতি প্রকাশনীতে আমার দেশ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় লেখিকা ইভা ওসমানের সঙ্গে। তিনি জানান, সবসময় প্রেমের কবিতা লেখেন তিনি। তার লেখা ‘তোমাকে ছুঁয়ে থাকে আমার কবিতা’, ‘আমি জানতাম আজ সকালে বৃষ্টি হবে’ বই দুটি ভালো। লেখিকা অধ্যক্ষ মাজেদা বেগম বলেন, মেলায় তার লেখা ‘দূরের হাতছানি’, ‘স্বপ্নের মায়াজালে’ কবিতার বই দুটি পাঠকরা পছন্দ করেছেন।

