পাখি বানাতে চান? নাকি প্রজাপতি? মাছ, নৌকা, বই, ফুল কিংবা গহনা? আর সবই যদি বানানো যায় এক টুকরো কাগজ দিয়ে, তাহলে কেমন হয়? তেমনই একজন শ্রাবন্তী সন্ধ্যা সিকদার। যিনি কাগজ দিয়ে তৈরি করছেন আকর্ষণীয় সব জিনিসপত্র। ফুল, পাখি আর প্রজাতির বাইরে ডাকবাক্স, পুতুলসহ প্রাকৃতিক দৃশ্যকে বাস্তবে রূপ দিচ্ছেন কুইলিং করে।
শ্রাবন্তী সন্ধ্যা সিকদারের জন্ম ও বেড়ে ওঠা সিলেট। পড়াশোনা করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। বর্তমানে বসবাস করছেন যুক্তরাষ্ট্রে।
কুইলিং নিয়ে কথা
কুইলিং এক ধরনের পেপার ক্রাফটিং। সুতা বা ফিতার মতো লম্বা-চিকন রঙিন কাগজকে পেঁচিয়ে রোল করে বিভিন্ন আকৃতি দেওয়া হয়। তারপর ব্যবহার করা হয় নানা ধরনের জিনিস বানানো ও সাজানোর কাজে। কার্ড, শো-পিস, চাবির রিং, বক্স, জুয়েলারি, বিমূর্তশিল্প (Abstract art), ফটোফ্রেম, মিনিয়েচার ইত্যাদি তৈরি ও অলংকরণে একটি জনপ্রিয় মাধ্যম হচ্ছে কুইলিং।

যেমন করে শুরু
শ্রাবন্তী কুইলিং শুরু করেছেন ২০১৭ সালে। বললেন, ছোটবেলা থেকেই টুকিটাকি আঁকা-আঁকি, ওরিগ্যামি, ক্রাফটিং করার প্রতি আগ্রহ। যখন যে ক্রাফটের ছবি বা ভিডিও দেখতাম, বানানোর চেষ্টা করতাম হাতের কাছে পাওয়া জিনিসগুলো দিয়ে। অনলাইনের মাধ্যমে কুইলিংয়ের ছবি দেখে আগ্রহ জন্মে। নিতান্ত শখের বশে আমার কুইলিংয়ের পথচলা শুরু। তখন কুইলিং টুলস সম্পর্কে কোনো ধারণা ছিল না। হলের সিনিয়র আপু আমার আগ্রহ দেখে তার কুইলিং টুলগুলো ধার দিয়েছিলেন। ভীষণ খুশি হয়ে ছোট্ট একটি ওয়ালম্যাট বানিয়েছিলাম। সেই থেকে শুরু। প্রায় আট বছরের বেশি সময় ধরে কুইলিং আমার অবসরের প্রিয় সঙ্গী।
প্রশংসায় অনুপ্রেরণা
শ্রাবন্তী বলেন, আমি যেকোনো ক্রাফটিংয়ের কাজ করার পর ফেসবুকে শেয়ার করতাম। বন্ধু তালিকায় থাকা শিক্ষক, সহপাঠী ও পরিচিতজনরা প্রশংসা করতেন, উৎসাহ দিতেন।৷ তখনো বেশিরভাগ মানুষের কাছে ‘কুইলিং’ বেশ অচেনা এক ক্রাফটিং সেক্টর। টুকটাক আনাড়ি কাজগুলো দেখে সবাই অনেক প্রশংসা করতেন। এত এত প্রশংসা পেয়ে আমার উৎসাহ আরো বহুগুণ বেড়ে যায়। এরপর কুইলিং করা আর থেমে থাকেনি। বিভিন্ন গ্রুপে মাঝেমধ্যেই পোস্ট করি, প্রচুর সাড়া পাই। গ্রুপে, নিজের পেজে সবার স্বতঃস্ফূর্ত মতামত আমার কুইলিংয়ের প্রতি আগ্রহ আরো বাড়িয়ে তোলে। খুব ভালো লাগে যখন দেখি কেউ আমার করা কাজ দেখে উৎসাহিত হয়ে নিজেরা কুইলিং করে। ভীষণ শান্তির এক মুহূর্ত তৈরি হয়।
অর্জন কম নয়
‘হ্যাপিনেসস ২০২৫ গ্রুপ এক্সিবিশন’ নামক আন্তর্জাতিক অনলাইন প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে শ্রাবন্তীর কুইলিং। ‘Robin's Nest’ নামের বিদেশি ডিজাইন টিম ও ‘Indian Quilling Challenge’-এর ডিজাইন টিমে কাজ করার সুযোগ হয়েছে তার। ‘পিঁপড়ের দল’ নামক বিদেশি এক ই-ম্যাগাজিনেও বেশ কিছুদিন কাজ করেছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় অনলাইন কনটেস্টে অংশগ্রহণ করে পেয়েছেন সম্মাননা। শ্রাবন্তী বলেন, কুইলিংয়ের অর্জন বলতে আমি প্রচুর মানুষের সঙ্গে পরিচিত হয়েছি, ভালোবাসা পেয়েছি, সম্মান পেয়েছি। ছোট্ট ছোট্ট কাজের জন্য পাওয়া এত এত মানুষের ভালোবাসা, শুভকামনা আমার জন্য সত্যি অনেক বড় পাওয়া।
এগিয়ে চলা...
শখের বশেই শ্রাবন্তীর কুইলিং শুরু। পেরিয়েছে অনেক বছর। কাজের ব্যস্ততায় থেমে যায়নি। আগামী দিনে এটাকে নিয়ে প্রফেশনালি নেবেন কি-না সে ব্যাপারেও ভাবছেন। নিজের ইনস্টাগ্রাম পেজ ও ইউটিউব চ্যানেল (Tale of quilling) থেকে কাজ ও ভিডিও শেয়ার করছেন নিয়মিত। পাশাপাশি চেষ্টা করছেন যাতে করে কেউ শুরু করতে চাইলে সহজেই ছোটখাটো গাইডলাইন পেয়ে যায়। স্টুডিওর কাজও শুরু করছেন, যেখানে কুইলিংয়ের কাজগুলো আরো সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার জন্য। পথ চলতে গিয়ে থেমে যাওয়া মানে তো সবকিছু শেষ হয়ে যাওয়া নয়। আবার উঠে দাঁড়াতে হয়। সেই পথের শেষ দেখতে এগিয়ে চলছেন শ্রাবন্তী।

