হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (হাবিপ্রবি) ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে দেশব্যাপী ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত ছাত্রলীগের সহিংসতার ঘটনায় ৭৯ জন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। প্রকাশিত তালিকায় হাবিপ্রবি শাখা ছাত্রশিবিরের দাওয়াহ সম্পাদক আরিফ হোসেনের নাম অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় বিতর্কের শুরু হয়।
সংগঠনটির সভাপতি মো. রেজওয়ানুল হক বলেন, ‘গতবছর ১৬ জুলাই আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর বর্বর হামলা চালায় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা। আজাদী পাওয়ার পর আমরা বিচার আশা করেছিলাম। কিন্তু এক বছরেও হামলাকারীদের বিচার হয়নি। বরং আন্দোলনের পক্ষে থাকা আরিফ হোসেনের নাম তালিকায় এসেছে, যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।’
তিনি অভিযোগ করেন, তালিকায় প্রকৃত হামলাকারীদের অনেকের নাম নেই বরং নিরপরাধ আন্দোলনকারীদের নাম যুক্ত হয়েছে।
তালিকাভুক্ত আরিফ হোসেন বলেন, ‘আমি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে কাজ করেছি। ফ্যাসিস্ট আমলে ছাত্রশিবির করার কারণে আমাকে পুলিশ তুলে নিয়ে যায়, আমি কারাবরণ করেছি। এখন আমার নাম হামলাকারীর তালিকায় দেখে আমি হতবাক। এটি আমার মানহানি করেছে। প্রশাসনকে জবাব দিতে হবে, প্রয়োজনে আইনি ব্যবস্থা নেব।’
ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটির আহ্বায়ক প্রফেসর ড. আবু সাঈদ মন্ডল বলেন, ‘একাধিক ব্যক্তির নাম এক হওয়ায় ভুল হতে পারে। আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ রয়েছে, যাচাই-বাছাই করে তালিকা সংশোধন করা হবে।’
ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগের পরিচালক প্রফেসর ড. এস. এম. এমদাদুল হাসান বলেন, ‘যারা মনে করছেন তারা নিরপরাধ, দ্রুত লিখিতভাবে জানালে আমরা পুনঃনিরীক্ষণ করে ব্যবস্থা নেব।’
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের তদন্তে উঠে আসে, ২০২৪ সালের ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হাবিপ্রবি শাখা ছাত্রলীগের একাংশের দ্বারা সংঘটিত হামলা, অস্ত্র প্রদর্শন, সরবরাহ ও বিরোধিতাসহ একাধিক অপরাধ সংঘটিত হয়।
তদন্তের ভিত্তিতে অভিযুক্তদের দুই ক্যাটাগরিতে বিভাজন করে তা আবাসন ও শৃঙ্খলা বোর্ডের ২২তম সভায় উপস্থাপন করা হয়। পরবর্তীতে, ২০২৫ সালের ২৯ মে অনুষ্ঠিত রিজেন্ট বোর্ডের ৫৯তম সভায় বিষয়টি আলোচ্য হিসেবে গৃহীত হয়। সভায় অভিযুক্তদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিয়ে সাময়িকভাবে শাস্তি প্রদানের সিদ্ধান্ত অনুমোদন করা হয়।
প্রথম ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত ৪১ জন শিক্ষার্থী সরাসরি সহিংসতায় জড়িত ছিলেন বলে তদন্তে উঠে এসেছে। তাদের বিরুদ্ধে হুকুমদাতা হিসেবে ভূমিকা পালন, স্বশস্ত্র হামলা, অস্ত্র প্রদর্শন ও সরবরাহ, কক্ষে অস্ত্র পাওয়া এবং স্বশস্ত্র মিছিলে অংশগ্রহণের অভিযোগ রয়েছে। অধ্যয়নরতদের সাময়িক বহিষ্কার এবং ডিগ্রীপ্রাপ্তদের সনদ স্থগিত করা হয়েছে।
দ্বিতীয় ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত ৩৮ জন শিক্ষার্থী বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বিরোধিতা এবং আন্দোলনবিরোধী মিছিলে অংশগ্রহণের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে দুই অথবা তিন বছরের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
উক্ত তালিকায় আরো বেশ কয়েকজন নিরপরাধ শিক্ষার্থীর নাম যুক্ত হয়েছে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন পোস্টে প্রতিবাদ জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

