আমার দেশ জনপ্রিয় বাংলা নিউজ পেপার

গভীর শ্রদ্ধায় সিক্ত রায়ের বাজার বধ্যভূমি

প্রতিনিধি, ঢাবি
গভীর শ্রদ্ধায় সিক্ত রায়ের বাজার বধ্যভূমি

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে গভীর শ্রদ্ধা, আর শোকে সিক্ত হয়েছে রাজধানীর রায়ের বাজার বধ্যভূমি। জাতিকে মেধাশূন্য করার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে প্রাণ হারানো সূর্যসন্তানদের স্মরণে ভোর থেকেই সেখানে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে জড়ো হন সর্বস্তরের মানুষ। স্বাধীনতার ঊষালগ্নে আত্মবলিদানকারী বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতিতে নীরবতা, চোখের জল আর দৃঢ় প্রত্যয়ের মিলনমেলায় রূপ নেয় পুরো বধ্যভূমি এলাকা।

রোববার ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পরে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তাঁরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন।

বিজ্ঞাপন

এরপর রাজধানীর রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন, শিক্ষার্থী, পেশাজীবীসহ সর্বস্তরের মানুষ। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আদর্শ ধারণ করে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় শোনা যায় সবার কণ্ঠে।

দুই সন্তানকে সাথে নিয়ে রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে শ্রদ্ধা জানাতে আসা এক নারী বলেন, “শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি আমাদের ব্যক্তিগত শ্রদ্ধাবোধ শুধু অনুভূতিতেই সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। নতুন প্রজন্মকে তাদের সম্পর্কে জানাতে হবে, তাদের আদর্শের সঙ্গে পরিচিত করাতে হবে।”

শ্রদ্ধা নিবেদন করতে আসা আবু সাইদ নামের এক ব্যক্তি বলেন, “মেধাশূন্য করার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে যারা লিপ্ত ছিল, সেই হায়েনাদের প্রতি তীব্র ঘৃণা জানাই। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি আমাদের হারানো স্বজন ও জাতির বিবেকদের। এই হত্যাকাণ্ডে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যারা সহায়তা করেছে, তাদের বিচার চাই।”

তারেকুল ইসলাম নামের আরেকজন বলেন, “বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে পাকিস্তানি সেনারা যে ক্ষতি করেছে, তা অপূরণীয়। আমাদের মেধাগতভাবে পঙ্গু করে দেওয়ার পাশাপাশি একটি তেলবাজ ও চেতনাব্যবসায়ী বুদ্ধিজীবী সমাজ তৈরির প্রেক্ষাপট তৈরি করা হয়েছিল, যার ভোগান্তি আমরা আজও বহন করছি। এমন বুদ্ধিজীবী যেন আর না তৈরি হয় যারা হত্যা, গুম ও ভোটাধিকার হরণকে বৈধতা দেয়।”

শ্রদ্ধা জানাতে আসা তরুণদের কণ্ঠেও উঠে আসে প্রতিবাদের ভাষা। তারা বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের ত্যাগের প্রেরণায় উজ্জীবিত হয়ে সময়ের প্রয়োজনে অন্যায়ের বিরুদ্ধে জারি প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান তারই প্রমাণ।

অনেকের মুখে, ৫৪ বছর পেরিয়েও মুক্তবুদ্ধির চর্চার পথ এখনও বন্ধুর- এমন আক্ষেপ শোনা গেলেও অনেকে সাম্য ও মানবিক মর্যাদার বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে বিভাজনের রাজনীতি পরিহার করে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তারা।

রায়ের বাজার বধ্যভূমি:

ঢাকা শহরের পশ্চিমে মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধের পাশে অবস্থিত শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধটি ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বরের নির্মম হত্যাকাণ্ডের নীরব সাক্ষী। স্বাধীনতার ঠিক আগে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা দেশের প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, লেখক, চিকিৎসক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের হত্যা করে এই এলাকার পরিত্যক্ত ইটভাটার পেছনের জলাশয়ে ফেলে রাখে।

নিহতদের মধ্যে ছিলেন দর্শনের অধ্যাপক ড. গোবিন্দচন্দ্র দেব, সাংবাদিক শহিদুল্লাহ কায়সার, অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, লেখক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, চিকিৎসক ডা. ফজলে রাব্বীসহ আরও অনেকে।

বিজয়ের কয়েকদিন পর রায়ের বাজার এলাকায় তাঁদের ক্ষত-বিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডকে স্মরণীয় করে রাখতে রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে ইটভাটার আদলে নির্মিত হয় শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ। লাল ইট ও সিমেন্টের গাঁথুনিতে নির্মিত সৌধটি খোলা আকাশের নিচে একাকী দাঁড়িয়ে থাকা নির্ভীক প্রহরীর মতো মনে হয়।

স্মৃতিসৌধটির নকশা করেন স্থপতি ফরিদ উদ্দীন আহমেদ।

বর্তমান আধুনিক বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধটি ১৯৯৯ সালের ১৪ ডিসেম্বর উদ্বোধন করা হয়। স্মৃতিসৌধটি গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত হয়।

Google News Icon

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন