প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্ম বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগের দাবি ঢাবি বিশ্বধর্ম বিভাগের

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২১: ২৫

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সম্প্রতি দেশের সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত শিক্ষক নিয়োগের লক্ষ্যে ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা-২০২৫’ গেজেট প্রকাশ করেছে। তবে এ উদ্যোগ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগ। বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রাথমিক স্তর থেকে ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষাকে গুরুত্বহীন করার ধারাবাহিক প্রয়াসের অংশ হিসেবেই এই উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে।

বুধবার বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. আবু সায়েম স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, স্বাধীনতার পর থেকে বিভিন্ন শিক্ষানীতিতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করার সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকলেও বাস্তবে এ বিষয়কে ক্রমেই প্রান্তিক করা হয়েছে। ২০১০ সালের জাতীয় শিক্ষানীতি এবং ২০১২ সালের শিক্ষাক্রমে ধর্ম শিক্ষা ধীরে ধীরে সেকেলে ও অপ্রয়োজনীয় হিসেবে উপস্থাপিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় প্রস্তাবিত জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা-২০২০ এ দশম শ্রেণির বোর্ড পরীক্ষার অন্তর্ভুক্তি থেকেও ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বাদ দেওয়া হয়।

বিজ্ঞাপন

বিভাগটির দাবি, এর ফলে শিক্ষার্থীরা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টিকে গুরুত্বহীন মনে করতে শুরু করে। এখন প্রাথমিক স্তরে সংগীত শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্তকে তারা ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষাকে আরও অপ্রয়োজনীয় করে তোলার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছে।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, প্রাচীনকাল থেকেই বাংলার শিক্ষা ব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল ধর্ম। বৈদিক যুগ থেকে পাল যুগের বৌদ্ধ শিক্ষা এবং সুলতানি ও মুঘল আমলের মক্তব-মাদ্রাসা—সব ক্ষেত্রেই ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এমনকি ব্রিটিশ শাসনের পূর্ব পর্যন্ত শিক্ষা ও সমাজব্যবস্থার সঙ্গে ধর্ম ছিল অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত।

কিন্তু ঔপনিবেশিক শাসনের সময় ব্রিটিশরা এদেশের প্রথাগত শিক্ষা ও সংস্কৃতিকে সেকেলে বলে আখ্যা দিয়ে নিজেদের শিক্ষা কাঠামো চাপিয়ে দেয়। বিবৃতিতে বলা হয়, ১৯০ বছরের শাসনামলে তারা ধর্মীয় শিক্ষার ভূমিকা কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়, যার প্রভাব এখনো বিদ্যমান।

বিভাগটির দাবি ও প্রস্তাবনা:

ঢাবির বিশ্বধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্ম শিক্ষক নিয়োগের দাবিতে কয়েকটি সুপারিশ তুলে ধরেছে: প্রথমত, শিশুদের শারীরিক, মানসিক ও নৈতিক বিকাশে প্রাথমিক স্তর থেকেই ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা অন্তর্ভুক্তকরণ।

দ্বিতীয়ত, সমস্ত প্রধান ধর্মের পাঠ অন্তর্ভুক্তি –হিন্দু, বৌদ্ধ, ইসলামসহ এদেশের প্রচলিত ধর্মগুলো এবং বিশ্ব সভ্যতার প্রধান ধর্মগুলো সিলেবাসে যুক্ত করা।

তৃতীয়ত, ধর্ম শিক্ষক পদ সৃষ্টি –সংগীত ও শারীরিক শিক্ষকের মতো প্রাথমিক বিদ্যালয়েও ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে।

চতুর্থত, যোগ্যতায় প্রাধান্য –কওমী ও আলিয়া মাদ্রাসার পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের স্নাতকদেরও প্রাধান্য দিতে হবে। কারণ, এ বিভাগের শিক্ষার্থীরা ধর্মীয় মূলনীতি, নৈতিকতা এবং আন্তধর্মীয় সম্প্রীতি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ।

এছাড়া, নতুন পদ সৃষ্টিতে সময় লাগলে আপাতত ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মসজিদ-ভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রম এবং হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান অধ্যুষিত অঞ্চলে মন্দির, চার্চ ও প্যাগোডা-ভিত্তিক শিশু শিক্ষাকেন্দ্রকে প্রাথমিক শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত করা যেতে পারে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই বিভাগ মনে করে, পাশ্চাত্যের অতিমাত্রায় দুনিয়ামুখী শিক্ষাব্যবস্থা মানুষকে ভাবলেশহীন যন্ত্রে পরিণত করছে। তাই জাতীয় ঐতিহ্য, ইতিহাস ও সংস্কৃতির আলোকে ধর্মীয় ও আধুনিক জ্ঞানের সমন্বয় ঘটিয়ে প্রাথমিক স্তর থেকেই ভারসাম্যপূর্ণ শিক্ষা প্রয়োজন।

অধ্যাপক ড. মো. আবু সায়েম সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে হবে এবং ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষক নিয়োগের জন্য নতুন পদ সৃষ্টি করে পুনরায় গেজেট প্রকাশ করতে হবে।”

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত