সাক্ষাৎকারে রাকসুর ভিপি প্রার্থী

সাধারণ শিক্ষার্থীদের কথা বলে যেতে চাই

ফাহমিদুর রহমান ফাহিম, রাবি
প্রকাশ : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২: ৫৪

দীর্ঘ ৩৫ বছর পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ নির্বাচনে স্বতন্ত্র হিসেবে সহসভাপতি (ভিপি) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন একমাত্র নারী প্রার্থী তাসিন খান। রাকসুর ৬৩ বছরের ইতিহাসে তিনিই প্রথম নারী, যিনি এই পদে লড়াই করবেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের এই শিক্ষার্থী সম্প্রতি আমার দেশকে সাক্ষাৎকার দেন। এ সময় তিনি ভিপি পদে প্রার্থী হওয়ার পেছনের গল্প বলেন; বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান সংকট ও নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়েও কথা বলেন। সাধারণ শিক্ষার্থীদের কথা বলে যেতে চান তিনি। লড়তে চান তাদের অধিকার আদায়ে।

বিজ্ঞাপন

তাসিন জানান, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর ছাত্ররাজনীতিতে পরিবর্তনের যে আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছিল, তা বাস্তবায়িত না হওয়ায় তিনি হতাশ। তার বিশ্বাস, ছাত্র সংসদ নির্বাচনগুলো যদি কার্যকর হয়, তবে চলমান ছাত্ররাজনীতির যে সংস্কৃতি, তার লাগাম টেনে ধরা সম্ভব। প্রাথমিকভাবে সর্বোচ্চ পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা না ভাবলেও যখন দেখলেন রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর বাইরে সাধারণ শিক্ষার্থীরা তেমন কোনো প্ল্যাটফর্ম পাচ্ছে না, তখন তিনি নিজেই এই শূন্যস্থান পূরণের সিদ্ধান্ত নেন। শুভাকাঙ্ক্ষীদের অনুপ্রেরণায় তিনি ভিপি পদে লড়ার সিদ্ধান্ত নেন।

রাকসুর ইতিহাসে প্রথম নারী ভিপি প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি তাকে একইসঙ্গে গর্বিত, আবার ব্যথিতও করে। তাসিন বলেন, এটা ভেবে আমি কষ্ট পাই যে, ৬৩ বছরের ইতিহাসে ২০২৫ সালে এসে রাকসু একজন নারী ভিপি প্রার্থী পেল। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় এমন হওয়ার কথা ছিল না। আমি মনোনয়ন নেওয়ার আগ পর্যন্ত জানতাম না যে, আমিই প্রথম। যাহোক, এটা জানার পর আমি নিজেকে ধন্য মনে করছি যে, আমার হাত দিয়ে নতুন একটি ইতিহাস রচিত হলো।

নির্বাচিত হলে কেমন বিশ্ববিদ্যালয় দেখতে চানÑএমন প্রশ্নে তাসিন তার দীর্ঘমেয়াদি আকাঙ্ক্ষার কথা জানান। তিনি বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কিন্তু প্রকৃত অর্থে বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে উঠতে পারেনি। একটি প্রকৃত বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে উঠতে হলে প্রথমে শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে হবে। এর মধ্যে আবাসন সংকট, পুষ্টিহীনতা, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যকার দূরত্ব এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অন্যতম।

বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার সমালোচনা করে এই ভিপি প্রার্থী বলেন, এ ব্যবস্থা শুধু কেরানি বা রাজনৈতিক কর্মীই তৈরি করছে, যা মেধাবী শিক্ষার্থীদের যোগ্যতার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের মধ্যে বিদ্যমান বিশাল ব্যবধানকেই তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রধান সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেন।

তাসিন বলেন, আমি শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে উঠে আসা তাদের প্রতিনিধি। আমি সেসব শিক্ষার্থীর কণ্ঠস্বর, যারা হলে জায়গা পায় না, যারা ক্যাম্পাসে হয়রানির শিকার হয় কিংবা যারা প্রতিবন্ধী হয়েও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা থেকে বঞ্চিত। ব্যাকগ্রাউন্ড ও কাজের প্রতি আস্থা রেখে আমাকে শিক্ষার্থীরা নির্বাচিত করবেন বলে আশা রাখি।

এই নির্বাচনকে ঐতিহাসিক বললেও পরিবেশ নিয়ে তাসিন শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, দলীয় প্রভাব, হুমকি ও প্রশাসনিক পক্ষপাত ইতোমধ্যেই দৃশ্যমান হয়েছে। বিশেষ করে নির্বাচন কমিশনের কোষাধ্যক্ষ অফিসে একটি ছাত্রসংগঠনের পেশিশক্তির প্রয়োগের ঘটনা তার আশঙ্কাকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে নারী প্রার্থী হিসেবে তার প্রতি কটূক্তি, চরিত্র হনন এবং দলীয় চাপের আশঙ্কা থাকলেও তিনি ভয় পাচ্ছেন না। তার বিশ্বাস, যারা পরিবর্তন চায়, সেসব সাহসী ভাইবোন তার পাশে আছে।

নির্বাচনে জয়ী না হলেও শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ চালিয়ে যাবেন বলে জানান তাসিন। তিনি বলেন, আমি আগেও তাদের জন্য কথা বলেছি, নির্বাচনের পরও তাদের জন্য কথা বলে যাব, কাজ করে যাব।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত