আমার দেশ জনপ্রিয় বাংলা নিউজ পেপার

সাক্ষাৎকারে আবিদুল

আবাসন সংকট নিরসনই ছাত্রদলের প্রধান অঙ্গীকার

মাহির কাইয়ুম, ঢাবি
আবাসন সংকট নিরসনই ছাত্রদলের প্রধান অঙ্গীকার
আবিদুল ইসলাম খান

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ছাত্রদলের প্যানেল থেকে সহসভাপতি বা ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আবিদুল ইসলাম খান। তিনি সংগঠনটির বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।

আমার দেশ-এর সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে আসন্ন নির্বাচন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান সংকট, ছাত্রদলের অবস্থান, ব্যক্তিগত লক্ষ্যসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের এই শিক্ষার্থী।

বিজ্ঞাপন

আবিদুল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কবি জসীম উদ্‌দীন হলের শিক্ষার্থী। তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায়। তিনি ২০১৯ সালের ডাকসুতেও প্রার্থী ছিলেন। সেই থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত ডাকসুর ভিন্ন বাস্তবতা নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচন ছিল পুরোপুরি একটি মেকানিজম এবং মেটিকুলাসলি ডিজাইন্ড। সেটি কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন ছিল না। আমি প্রার্থী হয়েও ভোট দিতে পারিনি। মূলত এবার সত্যিকার অর্থে ৩৪ বছর পর একটি পূর্ণাঙ্গ নির্বাচন হতে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীরা এবার ভোট দিতে পারবেন, এটাই সবচেয়ে বড় পার্থক্য। আমি আশা রাখছি- আমরা এবার ভোট দিতে পারব।’

আমার দেশ : আপনার দৃষ্টিতে বর্তমানে ঢাবিতে বিদ্যমান প্রধান সংকট কী কী?

আবিদুল : বর্তমানে ঢাবির সবচেয়ে বড় সংকট হলো একাডেমিক পরিবেশের সংকট। যে মেধা নিয়ে শিক্ষার্থীরা এখানে ভর্তি হন, সেই মেধা নিয়ে তিনি বের হতে পারেন না। কারণ, এখানে পড়াশোনার সঠিক পরিবেশ নেই। অনেক বিভাগে ২৫০-৩০০ শিক্ষার্থী একসঙ্গে ক্লাস করছেন, যেখানে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে একজন শিক্ষকের বিপরীতে ৪০ শিক্ষার্থী থাকার কথা। এ কারণে মানসম্মত শিক্ষা সম্ভব হচ্ছে না।

তিনি আরো বলেন, ঢাবির অধিকাংশ শিক্ষার্থী মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসেন। হলে সিট না পেয়ে মেস বা বাইরের হোস্টেলে থাকলে তাদের খরচ হয় বহুগুণ। তখন তারা টিকে থাকার জন্য একসঙ্গে চার-পাঁচটা টিউশনি করেন, এতে পড়াশোনার জন্য সময়ই থাকে না। তাই আমার প্রথম প্রতিশ্রুতি হচ্ছে, আবাসন সংকট নিরসন। প্রয়োজনে টিনের ছাউনি দিয়ে হলেও শিক্ষার্থীদের জন্য থাকার ব্যবস্থা করব। আমাদের বড় বড় ভবন দরকার নেই, দরকার একটি নিরাপদ ছাদ ও পড়াশোনার পরিবেশ।

আমার দেশ : আপনি নির্বাচিত হলে প্রধানত কোন কোন ক্ষেত্রে কী কী পরিবর্তন আনতে চান? কেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আপনি দেখতে চান?

আবিদুল : আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ, টেন্ডারবাজি ও সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। আওয়ামী আমলে প্রায় ৬৪ শতাংশ শিক্ষক রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ পান। যোগ্যতাকে উপেক্ষা করে ছাত্রলীগপন্থিদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এসবের বিরুদ্ধে আমরা দৃঢ় অবস্থান নেব। আমি প্রকৃত অর্থে একাডেমিক একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্ন দেখি। যেখানে কোনো ট্রমা থাকবে না, কোনো ভয় থাকবে না।

এছাড়া কার্জন হলসহ একাধিক ভবনের সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি বলেন, কার্জন হল, মোতাহার হোসেন ভবন, মোকাররম ভবনে ক্যান্টিনসহ নানা সমস্যা দীর্ঘদিন ধরে অমীমাংসিত আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের খাবারের মান অনেক নিচে পড়ে আছে। ছাত্রদল প্যানেল নির্বাচিত হলে এসব সমস্যার স্থায়ী সমাধান করা হবে।

আবাসিক ও শিক্ষাকেন্দ্রিক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্ন দেখেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার প্রথম লক্ষ্যÑ সব শিক্ষার্থীকে প্রথম বর্ষ থেকেই আবাসনের ব্যবস্থা করে দেওয়া। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা। বিশ্ববিদ্যালয়ে আর যেন কখনো ট্রমার পরিবেশ না ফেরে।’

আমার দেশ : ছাত্রদল নির্ধারিত প্যানেল কতটা গণতান্ত্রিক পত্রিকায় হয়েছে, এই প্যানেল নিয়ে আপনি কতটুকু আশাবাদী?

আবিদুল : ‘আমরা অভ্যন্তরীণ গণতান্ত্রিক ভোটাভুটির মাধ্যমে প্রার্থী হয়েছি। ডাকসুর ইতিহাসে এ ধরনের প্রক্রিয়া বিরল। নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানে ছাত্রদল ভূমিধস বিজয় পেয়েছিল। আমি বিশ্বাস করি, ২০২৫ সালের ডাকসুতেও তার পুনরাবৃত্তি ঘটবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা আমাদের বেছে নেবেন, কারণ আমরা দীর্ঘ দুঃশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি, গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছি। ভর্তি হওয়ার পর থেকে আমি ব্যক্তিগত জীবনের অনেক সম্ভাবনা বিসর্জন দিয়ে শিক্ষার্থীদের পক্ষে লড়াই করেছি।’

আমার দেশ : বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং ডাকসু নির্বাচন কমিশন ছাত্রদলকে বেশি সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছেÑএমন অসংখ্য অভিযোগ আছে। এর কারণ কী?

আবিদুল : ‘আমাদের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হচ্ছে, লিখিত অভিযোগ দেওয়া হচ্ছে। এগুলো প্রতিহিংসামূলক। নির্বাচন কমিশন আমাদের না, বরং স্বাধীনতাবিরোধীদের নির্বাচনের সুযোগ দিয়ে প্রকৃত পক্ষে তাদেরই বাড়তি সুবিধা দিয়েছে। তাই আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাত্রদলকে বাড়তি সুবিধা দিচ্ছে—এমন অভিযোগ কারা দিচ্ছে তা সবাই জানে।’

আমার দেশ : ভিপি হিসেবে আপনি যদি নির্বাচিত না-ও হন, শিক্ষার্থীদের কল্যাণে আপনার ভূমিকা কেমন হবে?

আবিদুল : গত বছরের ৫ আগস্টের পর আমরা ‘বোনাস লাইফ’ নিয়ে বেঁচে আছি। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পুলিশের গুলিতে শহীদ হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু আমরা টিকে আছি। তাই আমরা ইতোমধ্যে বিজয়ী। ডাকসুতে জিতলে সেটি হবে নতুন মাত্রা, আর হারলেও আমরা শিক্ষার্থীদের পাশে থাকব, কমিটমেন্টের পাশে থাকব। বিজয়ী হই কিংবা হেরে যাইÑশিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে আমাদের গণতান্ত্রিক সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে।

Google News Icon

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন