শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ

ছাত্রদলের ৩০ জনের কমিটিতে সভাপতি-সম্পাদকসহ ১৮ জনই ছাত্রলীগের

বরিশাল অফিস
প্রকাশ : ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ১৫: ১৭
আপডেট : ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ১৫: ৫৯

ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও ১১ বছর পর বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। গত সোমবার ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন ৩০ সদস্যের কমিটি অনুমোদন দেন। কমিটিতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ১৮ জনই ছাত্রলীগের বলে অভিযোগ উঠেছে।

গত মঙ্গলবার বিকেলে ছাত্রদলের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে কমিটির তালিকা শেয়ার করা হয়। আগামী এক মাসের মধ্যে নতুন কমিটিকে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়। ছাত্রদলের কমিটিতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪ সালের ১১ আগস্ট শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের একাডেমিক কাউন্সিলের সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কলেজে প্রকাশ্যে কিংবা গোপনে সব ছাত্র সংগঠনের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়। ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণার আগে ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের ব্যানারে একটি মিছিল হয়। এর পরই নতুন কমিটি ঘোষণা করল ছাত্রদল।

এদিকে ছাত্রদলের নবগঠিত কমিটির ৩০ সদস্যের মধ্যে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ১৮ জনেরই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। এ নিয়ে কলেজে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়। সূত্র জানায়, নতুন কমিটির সভাপতি পদে থাকা মো. আসাদুজ্জামান প্রিন্স ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের আমলে ছাত্রলীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন এবং আওয়ামী লীগের পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও বরিশাল-৫ আসনের সাবেক এমপি জাহিদ ফারুক শামীমের উপস্থিতিতে একাধিক কর্সূচিতে অংশ নেন। তাকে আওয়ামী লীগের পক্ষে স্লোগান দিতে দেখা গেছে। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের স্নেহভাজন হওয়ায় প্রিন্সকে সমীহ করতেন ছাত্রলীগ নেতারা। এ ছাড়া জুনিয়র শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিকভাবে হেনস্তার অভিযোগ আছে প্রিন্সের বিরুদ্ধে।

নবগঠিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল ফাহিদও ছাত্রলীগের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। ২০২৩ সালের বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়রপ্রার্থী আবুল খায়ের খোকন সেরনিয়াবাতের পক্ষে দলবল নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে দেখা গেছে তাকে। নির্বাচনের সময় নৌকার লিফলেট বিতরণ ও আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক সভা-সমাবেশে তার সবর উপস্থিতি ছিল।

এ ছাড়া সাবেক মন্ত্রী খোকন সেরনিয়াবাতের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে শেবাচিম ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির সহসভাপতি জুবায়ের আল মাহমুদ, ফাইয়ান আলম ফাহিম, শোভন দেব দত্ত, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হাকিম আদিল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাগীব মাহফুজ, শাওন আহমেদ, সহ সাধারণ সম্পাদক হাসিবুল হক শান্ত, সিয়াম হোসেন, শেখ আসিফ হাসান, সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক এন এম রোহান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সম্পাদক তীর্থ মন্ডল, শিক্ষা ও পাঠচক্র সম্পাদক রাফিউল ইসলাম শোভন, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক জিসান হোসেন আল দ্বীনকে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ করতে দেখা গেছে। এ ছাড়া নবগঠিত কমিটির সহসভাপতি জুবায়ের আল মাহমুদ ছাত্রলীগের বিভিন্ন মিছিল-মিটিংয়ে অংশ নিয়ে তা ফেসবুকেও প্রচার করেছেন।

ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ততার বিষয়ে শেবাচিম শাখা ছাত্রদলের নবগঠিত কমিটির সভাপতি মো. আসাদুজ্জামান প্রিন্স আমার দেশকে বলেন, ‘আমি ক্লাসে আছি, এখন কথা বলতে পারব না। পরে আপনার সাথে কথা বলব।’ এর পর একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

ছাত্রদলের নবগঠিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল ফাহিদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। বারবার ফোনের লাইন কেটে দেয়ায় তার বক্তব্য নেয়া যায়নি।

এ বিষয়ে বরিশাল মহানগর ছাত্রদলের সহসভাপতি মো. সাকিবুল হক রাসেল আমার দেশকে বলেন, ‘বরিশাল মহানগর বিএনপির ও মহানগর ছাত্রদলের নেতাদের সাথে আলোচনা না করে কেন্দ্রীয় নেতারা কোনো কমিটি দিতে পারেন না। অবশ্যই বরিশাল মহানগর বিএনপি ও ছাত্রদলের সাইনিং পাওয়ার থাকা নেতারা নতুন কমিটির বিষয়ে জানেন বলে আমার বিশ্বাস।’

তিনি বলেন, ‘বরিশালে ত্যাগী নেতাকর্মীদের অভাব নেই। ত্যাগী নেতারা কোনো ব্যক্তির হয় না, তারা দলের সম্পদ। ব্যক্তি পছন্দের কারণে ত্যাগীদের অবমূল্যায়ন করে ছাত্রলীগের নেতাদের সংযুক্ত করা হয়েছে নতুন কমিটিতে। এর দায়ভার বরিশাল মহানগর বিএনপি কিংবা ছাত্রদলের নেতারা এড়াতে পারেন না।’

এ বিষয়ে বরিশাল মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি মো. রেজাউল করিম রনি আমার দেশকে বলেন, ‘বিগত দিনগুলোতে শেবাচিম ছাত্রদল বরিশাল মহানগর ছাত্রদলের অধীনে ছিল। কমিটি হলেও তা মহানগর নেতারা যাচাই-বাছাই করে নতুন কমিটি দিয়েছেন। তবে এবারই প্রথম কেন্দ্র থেকে সরাসরি কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। নতুন কমিটিতে যারা এসেছেন, তাদের বিষয়ে তিনি অবগত নন। নতুন কমিটিতে ছাত্রলীগকে পুনর্বাসিত করা হলে তার দায় বরিশাল মহানগর কমিটির নেতারা নেবেন না।’

এ দিকে ছাত্রদলের একটি সূত্র জানায়, শেবাচিমের কমিটি পুনর্গঠনের বিষয়ে টিম প্রধান ছিলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহসভাপতি দীপু পটোয়ারী। তার নেতৃত্বেই ছাত্রদলের পদপ্রত্যাশীদের যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। তবে কমিটিতে ছাত্রলীগের অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে জানতে তাকে ফোন করেও বক্তব্য নেয়া যায়নি।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত