চাকসু নির্বাচন যেন ভোটের নয় স্মার্টফোনেরও উৎসব

জমির উদ্দিন, চবি থেকে
প্রকাশ : ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ১৩: ২২
আপডেট : ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ১৭: ১৪

বুধবারের দুপুর ১২টা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের দ্বিতীয় তলার সামনে লাইন ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে। এক হাতে ভোটার স্লিপ, অন্য হাতে মোবাইল। কেউ লাইভ দিচ্ছেন, ভোট দিতে এসেছি, বন্ধুরা দোয়া কইরো.আবার কেউ সেলফি তুলে ক্যাপশন দিচ্ছেন #Chaksu2025।

বিজ্ঞাপন

৩৩ বছর পর আয়োজিত চাকসু নির্বাচন যেন শুধু ভোটের নয়, স্মার্টফোনেরও উৎসব। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ভোটকেন্দ্রের চেয়ে বেশি সরগরম ছিল ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম টাইমলাইন। ভোট দিতে আসা শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগই মোবাইল হাতে নানা ভঙ্গিতে ছবি তুলেছেন, ভিডিও করেছেন, বন্ধুদের ট্যাগ করেছেন।

ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস হাসতে হাসতে বললেন, ভোট দেওয়া একটা ঐতিহাসিক ব্যাপার। এত বছর পর চাকসু হচ্ছে, এটা মনে রাখার জন্য সেলফি তো চাই-ই। ছবি না দিলে মনে হয়, ভোটই দিইনি!

তার পাশে থাকা বান্ধবী খাদেজা বেগম বললেন, আগে রাজনৈতিক পোস্টার ছিল চোখে পড়ার মতো, এখন সেলফি আর স্টোরি দিয়ে সবাই প্রচারণা করছে। আজকের ভোটটা যেন ‘ডিজিটাল নির্বাচন’।

ফেসবুকে দুপুর ১২টার দিকে সার্চ দিলে দেখা যায়, অন্তত ২০০ জন শিক্ষার্থী চাকসু ভোটকেন্দ্র থেকে লাইভে ছিলেন। কেউ ভোট দেওয়ার পর অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন, কেউ প্রার্থীকে সমর্থন জানাচ্ছেন, আবার কেউ শুধু পরিবেশ দেখাচ্ছেন।

বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষার্থী সায়েদা নূর তার লাইভে বলেন, এই মুহূর্তটা খুব স্পেশাল। আমরা এমন নির্বাচনের সাক্ষী হচ্ছি, যেটা আমাদের সিনিয়ররা কেবল গল্পে শুনেছেনন।

ভোট শুরু হওয়ার কিছু সময়ের মধ্যেই ফেসবুকে ট্রেন্ড করতে থাকে হ্যাশট্যাগ #ChaksuVote, #MyVoteMyVoice, আর #ChattogramUniversityElection।

বেশ কিছু প্রার্থীও তাদের নিজস্ব পেজে ভোটারদের সঙ্গে ছবি দিয়ে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। ইনস্টাগ্রামে দেখা যায়, অনেকেই স্টোরিতে ভোট দেওয়ার আঙুলে কালির দাগ দেখিয়ে লিখেছেন, Finally, I voted for change!

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের কয়েকজন শিক্ষক মনে করেন, এটি প্রমাণ করে যে নতুন প্রজন্ম রাজনীতি ও গণতন্ত্রে আগ্রহ হারায়নি। শুধু প্রকাশের মাধ্যম বদলে গেছে। আগের যুগে পোস্টার ছিল, এখন সেলফি আর লাইভ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক কামাল উদ্দিন বলেন, আমরা লক্ষ্য করেছি শিক্ষার্থীরা অত্যন্ত উৎসাহী। কেউ কেউ লাইভ বা ছবি তুলছে, তবে তা ভোটের গোপনীয়তা নষ্ট করছে না। তাদের অংশগ্রহণই আসল শক্তি।

দুপুর ঘনিয়ে আসে। অনেকেই ভোট দিয়ে বের হচ্ছেন, হাতে স্মার্টফোন, মুখে হাসি ক্যাম্পাসজুড়ে আনন্দের আবহ।

এক শিক্ষার্থী দরজা পার হতে হতে বলে ফেললেন, আজ শুধু ভোট দিইনি, ইতিহাসের অংশ হয়েছি স্টোরিতেও রেখে দিলাম প্রমাণ!

চাকসু ভোটে এই ‘স্মার্টফোন কালচার’ প্রমাণ করছে সময় বদলেছে, কিন্তু উচ্ছ্বাসের ভাষা বদলায়নি। কেবল মাইক ও ব্যানারের জায়গা দখল করেছে মোবাইল আর মেগাপিক্সেল।

সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের মাস্টার্সের ছাত্রী গৌরি রয় বলেন, ভোট দেওয়া জীবনের প্রথম অভিজ্ঞতা। তাই স্মৃতি রাখতে সেলফি তুলেছি। আমি চাই, সবাই জানুক আমরা চাকসু ভোটে অংশ নিয়েছি। এত বছর পর ইতিহাস গড়ছি।

সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের ছাত্রী মুক্তা রানি মজুমদার বলেন, আগে রাজনৈতিক মিছিল-স্লোগান থাকত, এখন তার জায়গা নিয়েছে ইনস্টা স্টোরি আর ফেসবুক পোস্ট। আমরা ডিজিটাল প্রজন্ম আমাদের প্রকাশও আধুনিক।

বায়োকেমেস্ট্রি বিভাগের সুরিয়া সোলতানা বলেন, ভোট দিতে এসে দেখি সবাই হাতে ফোন নিয়ে ছবি তুলছে। এটা খারাপ না, এই উচ্ছ্বাস প্রমাণ করে, রাজনীতি নিয়ে তরুণেরা এখনও আগ্রহী।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত