হল ছাড়তে নারাজ শিক্ষার্থীরা, আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ : ২১ জুন ২০২৫, ২১: ২৩

আবাসন সংকট নিরসনসহ শিক্ষার্থীদের পাঁচ দফা দাবির আন্দোলনেরমুখে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক)। একই সঙ্গে আগামীকাল রোববার দুপুর ১২টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে হল না ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলেও জানিয়েছেন তারা।

বিজ্ঞাপন

শনিবার সন্ধ্যায় ঢামেক কর্তৃপক্ষের অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা ও শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশের প্রেক্ষিতে প্রতিক্রিয়ায় শিক্ষার্থীরা এসব কথা জানান।

এর আগে আজ সকালে দ্রুত নতুন ছাত্রাবাস ও ছাত্রীনিবাসের বাজেট পাস, নতুন ভবন চালু না হওয়া পর্যন্ত বিকল্প আবাসনের ব্যবস্থা, নতুন অ্যাকাডেমিক ভবনের বাজেট অনুমোদন, পৃথক বাজেট ও দ্রুত বাস্তবায়ন পরিকল্পনা ও কার্যক্রমে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্তসহ পাঁচ দফা দাবিতে দিনভর অবস্থান কর্মসূচি ও মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। পরে বিকেলে কলেজ প্রশাসনের এক বিজ্ঞপ্তিতে রবিবার দুপুর ১২টার মধ্যে সকল ছাত্র-ছাত্রীকে হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়।

তৌহিদুল আবেদীন তানভীর নামের এক শিক্ষার্থী (কে-৭৮) গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা হল ত্যাগ করছি না। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কোনো আলোচনা না করেই একতরফাভাবে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ করে আমাদের হল থেকে বের করে দিতে চাওয়া সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। আমরা আমাদের যৌক্তিক দাবির পক্ষে অবস্থান নিয়েছি, এটি অন্যায় নয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘পরিত্যক্ত ভবনে জীবন ঝুঁকি নিয়ে থাকলেও সেটার বিকল্প না করে উল্টো আন্দোলন দমন করতে প্রশাসন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা এটি মেনে নিচ্ছি না। শান্তিপূর্ণভাবে হলে অবস্থান চালিয়ে যাব এবং দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচিও চলবে।’

এদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ বন্ধের ঘোষণার পর ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। যারা বাড়ি থেকে অনেক দূরে পড়াশোনা করছেন, তাদের অনেকে জানাচ্ছেন, তারা এখন হলে না থেকে কোথায় যাবেন, সেটিও জানেন না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী শিক্ষার্থী বলেন, ‘বিকল্প ব্যবস্থা ছাড়াই হলে তালা দেওয়ার নির্দেশ মানে আমাদের নিরাপত্তা ও শিক্ষা উভয়কেই হুমকির মুখে ফেলে দেওয়া। আমরা আন্দোলনে আছি এবং থাকবো। বিকল্প আবাসনের ব্যবস্থা না করে কেন এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো তা আমরা জানতে চাই।’

আজ বিকেলে কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. কামরুল আলম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, কলেজের অ্যাকাডেমিক ভবন ও হোস্টেলের অবকাঠামোগত দুরবস্থা নিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের দাবির প্রেক্ষিতে চলমান অচলাবস্থা নিরসনে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করেন কাউন্সিলের সদস্যরা। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের সঙ্গে নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে কিছু কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। দৃশ্যমান ফলাফল নিয়ে শিক্ষার্থীদের সময় বেঁধে দেওয়া নিয়ে যে অনঢ় অবস্থান রয়েছে, সেটিও কাউন্সিল অনুধাবন করছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

এতে আরও বলা হয়, বার বার নোটিশ দেওয়া সত্ত্বেও এবং বিকল্প আবাসন নিশ্চিত করা সত্ত্বেও বিভিন্ন ব্যাচের ছাত্রদের অসহযোগিতার কারণে ডা. ফজলে রাব্বি ছাত্রাবাসের মূল ভবনের গণপূর্ত বিভাগ কর্তৃক ঘোষিত পরিত্যক্ত চতুর্থ তলা খালি করা সম্ভব হচ্ছে না, যা তাদের জীবনের জন্য অত্যন্ত হুমকি স্বরূপ। এরই ধারাবাহিকতায় নতুন ব্যাচ কে-৮২ স্বপ্রণোদিত হয়ে অথবা প্ররোচিত হয়ে তাদের জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অরিয়েন্টেশন প্রোগ্রাম বয়কট করেছে, যা ঢাকা মেডিকেল কলেজের জন্য একটি কালো অধ্যায় বলে মত দেন কাউন্সিলের সদস্যরা। ফলে কলেজের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এমতাবস্থায় কাউন্সিলের জরুরি সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কলেজের এমবিবিএস শিক্ষার্থীদের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে রবিবার দুপুর ১২টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হোস্টেল ত্যাগ করতে হবে।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পেশাগত এমবিবিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী এবং বিদেশি শিক্ষার্থীরা এই নির্দেশনার আওতামুক্ত থাকবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় এই সংকট কাটিয়ে ওঠার আশাও করা হয় কাউন্সিলের পক্ষ থেকে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত