শান্তির পায়রা উড়িয়ে ঢাবির ১০৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন

ঢাবি সংবাদদাতা
প্রকাশ : ০১ জুলাই ২০২৫, ১৭: ৪৮

শান্তির প্রতীক সাদা পায়রা উড়িয়ে এবং জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হলো দেশের প্রাচীনতম উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। মঙ্গলবার (১ জুলাই) সকালে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) চত্বরে বর্ণাঢ্য আয়োজনে এই দিবসের সূচনা হয়। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে- “বৈষম্যহীন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ বিনির্মাণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়”।

বিজ্ঞাপন

এদিন ভোর থেকে পুরো ক্যাম্পাসে বইতে থাকে উৎসবের হাওয়া। কার্জন হল, কলা ভবন, উপাচার্য ভবনসহ প্রধান প্রধান ভবনগুলো আলোকসজ্জা ও আল্পনায় সেজে উঠে। সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল ও হোস্টেল থেকে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা শোভাযাত্রা নিয়ে ‘স্মৃতি চিরন্তন’ চত্বরে সমবেত হন। সেখান থেকে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খানের নেতৃত্বে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে পায়রা চত্বরে গিয়ে শেষ হয়।

পায়রা চত্বরে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জাতীয় পতাকা ও বিশ্ববিদ্যালয় পতাকা উত্তোলন করেন উপাচার্য। এরপর বিশাল ১০৫ পাউন্ড কেক কেটে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৫ বছরে পদার্পণের স্মারক উদযাপন করা হয়। সংগীত বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা পরিবেশন করেন জাতীয় সংগীত ও দেশাত্মবোধক গান। অংশ নেন বিদেশি শিক্ষার্থীরাও। সবশেষে উপাচার্য ও আমন্ত্রিত অতিথিরা একযোগে শান্তির পায়রা উড়িয়ে দেন আকাশে।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেবল অ্যাকাডেমিক প্রতিষ্ঠান নয়, এটি একটি জাতীয় আন্দোলনের জন্মভূমি। ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, গণঅভ্যুত্থান, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে ২০২৪ সালের অভ্যুত্থান পর্যন্ত- এই বিশ্ববিদ্যালয় সব সময়ই জাতির বিবেক হিসেবে কাজ করেছে।”

তিনি আরও বলেন, “আজ যারা পড়ালেখার সুযোগ পাচ্ছেন, তাদের দায়িত্ব শিক্ষার পরিবেশ রক্ষা করা। আমরা শিক্ষকরা শ্রেণিকক্ষে যাব উদারতা ও সহনশীলতা নিয়ে- এই চর্চাই আমাদের গণতান্ত্রিক সমাজ গঠনের ভিত্তি। শুধু সরকারের সহায়তা নয়, সমাজের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমেই বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে যেতে পারে।”

সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে টিএসসি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ। তিনি বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেবল একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, এটি জাতির আত্মপরিচয়ের প্রতীক। বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের এই অঙ্গীকার কেবল স্লোগান নয়, এটি আমাদের নৈতিক দায়বদ্ধতা।”

সভায় আরও বক্তব্য দেন প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. এম. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এবং অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক শামসুজ্জামান দুদু। আলোচনা সভার শুরুতে প্রকাশিত হয় দিবস উপলক্ষ্যে সংকলিত ‘স্মরণিকা’।

এদিকে দিবসটি ঘিরে ক্লাস বন্ধ থাকলেও পূর্বনির্ধারিত পরীক্ষা যথারীতি অনুষ্ঠিত হয়। শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নীলক্ষেত ও ফুলার রোড সংলগ্ন রাস্তা সকাল ৯টা ৩০ মিনিট থেকে ১০টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয়। নিরাপত্তা ও চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতে মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত স্বেচ্ছাসেবক, ডাক্তার এবং অ্যাম্বুলেন্স।

দিবস উদযাপনের অংশ হিসেবে ‘আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস অনুষদ’-এর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয় এক বিশেষ সেমিনার। এছাড়া, অংশগ্রহণকারীদের মাঝে একহাজার স্মারক ক্যাপ বিতরণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত