অক্টোপাস

উম্মে কুলসুম
প্রকাশ : ০১ জুলাই ২০২৫, ১৩: ৪১

অক্টোপাস আটটি বাহুবিশিষ্ট সামুদ্রিক প্রাণী। দেখতে শামুকের মতো হলেও (শক্ত খোলস নেই) এরা শামুক-ঝিনুকের জাতভাই, অর্থাৎ মোলাস্কা ফাইলামের অন্তর্ভুক্ত। এদের মাথার ঠিক পেছনেই আটটি শুঁড়-পা আছে, তাই এরা সেফালোপোডা বা ‘মস্তক-পদ’ শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত (স্কুইডও একই শ্রেণির)। এরা নিশাচর, সাধারণত ধীর গতিসম্পন্ন। প্রায় ১৫০ প্রজাতির ছোট-বড় বিভিন্ন আকারের অক্টোপাস রয়েছে।

সমুদ্রের বিভিন্ন অঞ্চলে অক্টোপাস বসবাস করে, যার মধ্যে রয়েছে কোরাল শৈলশিরা, উন্মুক্ত অগভীর জল এবং সমুদ্রতল প্রভৃতি স্থান। কিছু অক্টোপাস আবার জোয়ার-ভাটা হয় এমন স্থানে, আবার কিছু আছে গভীর সমুদ্রে বসবাস করে। বেশিরভাগ প্রজাতিই দ্রুত বর্ধমান, তাড়াতাড়ি পূর্ণবয়স্ক হয়।

বিজ্ঞাপন

শিকারি প্রাণীদের হাত থেকে বাঁচতে তারা কালি ছুঁড়ে মারে, ছদ্মবেশ ধারণ করে বা রঙ পাল্টায় এবং ভীতিপ্রদর্শন করে। এ ছাড়া তারা আত্মরক্ষার জন্য দ্রুত পালানোর ক্ষমতা ও লুকিয়ে পড়ার ক্ষমতা ব্যবহার করে। সব অক্টোপাসই বিষাক্ত, কিন্তু শুধু নীল গোলকবিশিষ্ট অক্টোপাসই মানুষের জন্য মারাত্মক।

অক্টোপাসের তিনটি হৃৎপিণ্ড আছে। এদের মধ্যে দুটি মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ করে। আর বাকি একটি অক্টোপাসের সারা দেহে রক্ত সরবরাহ করে। হিমোসায়ানিন নামক রাসায়নিকের জন্য এদের রক্তের রঙ নীল।

অক্টোপাস চলাচল করে জেট বিমানের মতো করে। তারা প্রথমে তাদের শরীরের পেশিতে প্রচুর পানি টেনে নেয়, এরপর সাইফন নামে একটি নল বের করে সেটা দিয়ে সব পানি বের করে দেয়। এই প্রক্রিয়ায় তারা পানি বের করার দিকের উল্টো দিকে গতিপ্রাপ্ত হয়। যত বেশি পানি তারা নেবে তত বেশি তারা গতিপ্রাপ্ত হবে। এই প্রক্রিয়া বারবার করে তারা চলতে থাকে।

পৌরাণিক কাহিনিতে অক্টোপাসকে সমুদ্রের দানব হিসেবে আখ্যায়িত করতে দেখা গেছে। যেমন নরওয়ের ক্রাকেন এবং আইনুদের আকোরোকামুই হিসেবে এবং সম্ভবত প্রাচীন গ্রিসে গর্গন রূপে। ভিক্টর হুগোর একটি বই ‘টয়লার্স অব দ্য সি’-তে অক্টোপাসের সঙ্গে একটি যুদ্ধের বয়ান আছে। অক্টোপাসেরা জাপানের উত্তেজক চিত্রতেও স্থান করে নিয়েছে, যার নাম সুঙ্গা। এশিয়ার সাগর ও ভূমধ্যসাগরের বিভিন্ন দেশে এদের খাদ্য হিসেবে খাওয়া হয়।

আকৃতি : সাধারণত অক্টোপাস খুব একটা বড় হয় না। দৈর্ঘ্য হয় সর্বোচ্চ ৪ দশমিক ৫ ফুট এবং ওজন হয় প্রায় ১০ কেজি। তবে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে এক প্রজাতির অক্টোপাস রয়েছে, যা জায়ান্ট অক্টোপাস নামে পরিচিত। এটি অন্য যেকোনো অক্টোপাস থেকে বড়। এর নাম ডলফিনি অক্টোপাস। এটি লম্বায় প্রায় ৩০ ফুট এবং ওজন প্রায় ২৭৫ কেজি পর্যন্ত হয়।

খাদ্য : অক্টোপাস মাংসাশী প্রাণী। মাছ, কাঁকড়া, চিংড়ি ইত্যাদি অক্টোপাসের প্রিয় খাদ্য।

আত্মরক্ষার কৌশল : অক্টোপাসের আত্মরক্ষার কৌশল বেশ অদ্ভুত। এরা ইচ্ছামতো নিজের দেহের রঙ পরিবর্তন এবং মাথার নিচের নলাকার ফানেল জলপূর্ণ করে দ্রুতবেগে বের করে দিয়ে তাড়াতাড়ি দূরে সরে যেতে পারে। রঙ পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রতলের বালি, পাথর, উদ্ভিদ ইত্যাদির সঙ্গে এমনভাবে মিশে যেতে পারে যে হাঙ্গর, ইল, ফিন (অক্টোপাসের প্রধান শত্রু) খুব কাছ থেকেও একে শনাক্ত করতে পারে না। এ ছাড়া এদের দেহে কালির থলে (ink sac) থাকে, যার সাহায্যে নিজের দেহ থেকে ঘন কালো কালি ছুড়ে দিতে পারে, যা শত্রুকে কিছুক্ষণের জন্য অন্ধ করে দেয়। এ কালির আরেকটি গুণ হচ্ছে এটি শত্রুর ঘ্রাণশক্তিও কিছুক্ষণের জন্য নষ্ট করে দেয়। ফলে অক্টোপাসটি পালিয়ে যেতে পারে। শেষ পর্যন্ত আত্মরক্ষার কোনো উপায় না পেলে অনেক সময় এরা জ্ঞান হারিয়ে ফেলে, অথবা নিজের বাহু খেতে আরম্ভ করে! অক্টোপাস খুব দ্রুত গতিতে ছুটতে পারে, যা এটির আত্মরক্ষায় সহায়ক।

বর্ণ পরিবর্তনের ক্ষমতা : অক্টোপাসের একটি লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হলো রঙ বা বর্ণ পরিবর্তনের ক্ষমতা। এর ত্বকে আঁচিলের মতো ফুসকুড়ি থাকে। ত্বকের নিচে অনেকগুলো ক্রোমাটোফোর (chtomatophore) আছে। ক্রোমাটোফোরে নানা রঙের কোষ থাকে। এসব কোষের সাহায্যেও এরা দেহের রঙ পাল্টায়।

জীবনকাল : অক্টোপাস খুবই কম সময় বাঁচে। কিছু প্রজাতি মাত্র ছয় মাস বাঁচে। জায়ান্ট প্যাসিফিক অক্টোপাস সবচেয়ে বড় অক্টোপাসের প্রজাতির একটি। এটি পাঁচ বছরের মতো বাঁচে।

বংশবিস্তার : স্ত্রী অক্টোপাস প্রায় দেড় লাখ ডিম পাড়ে। ডিম থেকে বাচ্চা বের হয়। বাচ্চা বের হওয়ার পর মা অক্টোপাস মারা যায়।

বিষয়:

অক্টোপাস
এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত