ফাতেমার প্রথম রোজা

জুবায়ের বিন মামুন
প্রকাশ : ১৮ মার্চ ২০২৫, ১৪: ১২

নরম রোদের বিকাল। গাছের পাতায় সোনালি আভা। হালকা হিমেল বাতাস বইছে। চারপাশের এত শান্ত পরিবেশের মাঝেও ফাতেমার মনে অস্থিরতা। গলা শুকিয়ে আসছে। তৃষ্ণায় বুক ফেটে যাচ্ছে। এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করছে সে। ফ্রিজের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়, আবার দৌড়ে কলের কাছে যায়। একটু পানি স্পর্শ করলেই যেন স্বস্তি পাওয়া যাবে!

আজ ফাতেমার জীবনের প্রথম রোজা। তার বয়স মাত্র ছয়, কিন্তু মনটা অনেক বড়। মাকে অনেক দিন ধরে বলছে সে রোজা রাখবে। মা প্রথমে রাজি হননি। কিন্তু আজ ফাতেমার জেদ দেখে আর না করতে পারেননি।

বিজ্ঞাপন

সকালে অনেক উৎসাহ নিয়ে সাহরি খেয়েছে সে। মাদরাসায় গিয়ে বান্ধবীদের বলেছে, ‘আজ আমি রোজা রেখেছি!’ শিক্ষকদেরও বলেছে। সবাই বাহবা দিয়েছেন। কিন্তু দুপুর গড়িয়ে বিকাল হতেই যেন শরীর আর মানছে না।

মা খেয়াল করলেন, ফাতেমা একটু পরপর ফ্রিজের কাছে যাচ্ছে। কলের নিচে দাঁড়িয়ে থাকছে। মেয়ের কষ্ট দেখে মায়া লাগলেও তিনি হাসি চাপলেন। কাছে ডাকলেন মেয়েকে। কোলে বসিয়ে বললেন,

— জানো মা, সাহাবিদের ছেলেমেয়েরা যখন খুব তৃষ্ণার্ত হয়ে যেত, তখন কী করত?

— কী করত মা?

— তারা খেলত, গল্প করত, কখনো ঘুমিয়ে পড়ত, যাতে রোজার কষ্ট কম মনে হয়। আর আল্লাহ তাদের জন্য জান্নাতে কত সুন্দর পুরস্কার রেখেছেন!

মায়ের কথা শুনে ফাতেমার চোখে জ্বলজ্বল করে উঠল। সাহাবিদের মতো তাকেও তো রোজা রাখতে হবে! পুরস্কারও তো আছে!

সে নিজের মনকে শক্ত করল। খেলনা নিয়ে খেলতে লাগল। ছবি আঁকল। এরপর মা কোলে নিয়ে একটু ঘুম পাড়িয়ে দিলেন। যখন চোখ খুলল, তখন আকাশে লালচে আলো। ইফতারের সময় হয়ে এসেছে!

মা হাসিমুখে তার সামনে একটা গিফট বক্স এনে রাখলেন। দুপুরেই ফাতেমার জন্য কিনে আনলেন তিনি। কৌতূহল নিয়ে খুলতেই খুশিতে চিৎকার করে উঠল—

— ও মা! এটা তো আমার স্বপ্নের মেকআপ বক্স!

খুশিতে মাকে জড়িয়ে ধরল ফাতেমা । আনন্দে চোখ ছলছল করছে। সে বলল,

— মা, আমি তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি! ভীষণ! ভীষণ! আগামীকালও আমি রোজা রাখব!

মা আদর করে বললেন, ইনশাআল্লাহ, তুমি অনেক বড় হবে। বড় হয়ে সব রোজা আদায় করবে, আমার রাজকন্যা!

ফাতেমা খুশি মনে ইফতারি সামনে টেনে নিল। রোজার প্রথম দিনটা সত্যিই তার জীবনের সেরা দিনগুলোর একটি হয়ে রইল।

বিষয়:

রোজা
এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত