আমার দেশে সংবাদ প্রকাশের পর সেই চিকিৎসককে ওএসডি

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ : ২০ অক্টোবর ২০২৫, ০১: ১১

সরকারি হাসপাতালের রোগী বেসরকারি হাসপাতালে পাঠিয়ে চিকিৎসকের কমিশন গ্রহণের সংবাদ প্রকাশ করেছিল দৈনিক আমার দেশ। এমন খবরের পর তদন্তের পর সেই চিকিৎসককে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করা হয়েছে।

রোববার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের যুগ্মসচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে, পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও আবাসিক সার্জন ডা. মো. বশীর আহম্মেদকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে যুক্ত করে হবিগঞ্জ মেডিকেল কলেজে বদলি করা হলো।

এতে আরও বলা হয়, পদায়নকৃত কর্মকর্তা আদেশ জারির পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে বদলি/পদায়নকৃত কর্মস্থলে যোগদান করবেন। অন্যথায় পরবর্তী কর্মদিবসে তিনি তাৎক্ষণিক অবমুক্ত হবেন। অবমুক্তির পর সময় তার বর্তমান কর্মস্থল হতে ছাড়পত্র গ্রহণ করবেন এবং এইচআরএম ডাটাবেজ থেকে মুভ আউট হবে এবং যোগদানের পর ন্যস্তকৃত বিভাগে/কর্মস্থলে মুভ ইন হবেন। জনস্বার্থে এ আদেশ জারি করা হলো বলেও এতে উল্লেখ করা হয়।

এর আগে গত ১০ অক্টোবর নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতাল নিয়ে করা দুই পর্বের ধারাবাহিকের শেষ পর্বে “রোগী বেসরকারিতে পাঠিয়ে কমিশন নেন চিকিৎসক”- শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে দৈনিক আমার দেশ। পরদিন তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এক সপ্তাহ তদন্তের পর ওএসডি করা হলো অভিযুক্ত চিকিৎসককে।

প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, স্বল্পমূল্যে উন্নত চিকিৎসা ও অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শের আশায় দেশের নানা প্রান্ত থেকে নিউরো সংক্রান্ত জটিলতা নিয়ে রোগীরা আসেন রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালে। কিন্তু এ সরকারি হাসপাতালে শয্যা সংকটের অজুহাতে রোগীদের ভয় দেখিয়ে বেসরকারি হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন প্রতিষ্ঠানটির নিউরো সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও আবাসিক সার্জন ডা. মো. বশীর আহম্মেদ।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হতে দেরি হবে বা দ্রুত অস্ত্রোপচার না করলে রোগীর মৃত্যু হতে পারে- এমন ভয় দেখিয়ে শান্তিনগর, আগারগাঁও ও ধানমন্ডির বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে রোগীদের। সেখানে অস্ত্রোপচারের খরচ সরকারি খরচের দ্বিগুণ বা তারও বেশি।

প্রতিবেদনে ভুক্তভোগী একাধিক রোগীর সাক্ষাৎকার নেন প্রতিবেদক। যেখানে অভিযুক্ত চিকিৎসক বশীর আহম্মেদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তোলের রোগীরা। অনুসন্ধানে জানা গেছে, আগস্ট মাসেই শান্তিনগরের এক হাসপাতালেই অন্তত ১৭টি অস্ত্রোপচার করেছেন ডা. বশীর। এসব রোগী মূলত নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালে ভর্তি হতে এসেছিলেন। পরে বশীর আহম্মেদের সুপারিশেই তারা সে হাসপাতালে গেছেন। এছাড়া আগারগাঁওয়ের গ্রিন হাসপাতাল ও ধানমন্ডির আরেকটি প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত রোগী পাঠানোর প্রমাণ মিলেছে। এছাড়া ঢাকার বাইরে নারায়ণগঞ্জ ও তার আশপাশের এলাকার রোগীদের জেলার একটি বেসরকারি হাসপাতালে যেতে বলেন ডা. বশীর আহম্মেদ।

অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, বেসরকারি হাসপাতালে ভাগিয়ে নেওয়া এসব রোগীর কাছ থেকে অস্ত্রোপচারসহ চিকিৎসার যে খরচ ধরা হয়েছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা একই মানের হাসপাতাল ও সমপদের চিকিৎসকের দ্বিগুণ কিংবা তারও বেশি।

এ ঘটনায় নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালের চিকিৎসকরা চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, চিকিৎসকের এমন কর্মকাণ্ডে সরকারি হাসপাতালের প্রতি অনাস্থা তৈরি হচ্ছে। বিশেষ করে সারা দেশে নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালের যে সুনাম সেটি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। পাশাপাশি স্বল্পমূল্যের চিকিৎসায় রোগীদের খরচ হচ্ছে দ্বিগুণ বা তার চেয়েও বেশি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, চিকিৎসক সমাজের প্রতি বিরূপ প্রভাব তৈরি করছে।

যদিও এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ডা. মো. বশীর আহম্মেদ বলেন, ‘রোগীরা নিজেরাই আমার চেম্বারে আসতে চান। আমি কাউকে জোর করে পাঠাই না।’

তিনি আমার দেশকে বলেছিলেন, ‘নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন আড়াই হাজার রোগী চিকিৎসা নেন। এর মধ্যে বড় অংশই ভর্তিযোগ্য। কিন্তু প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৫ থেকে ১০ জনকে ভর্তি করা সম্ভব হয়। ফলে দিনের পর দিন রোগীদের অপেক্ষা করতে হয়। আর নিউরোসায়েন্সের ডাক্তার হওয়ায় আস্থা বেশি রোগীদের। ফলে কাউকে বাধ্য করে, ভয় দেখিয়ে বেসরকারি হাসপাতালে পাঠাতে হয় না, বরং রোগী নিজ থেকে জানতে চায়, কোথায় আমি চেম্বার করি।’

তিনি আরো বলেন, ‘অস্ত্রোপচারের খরচ একেক রোগীর জন্য একেকরকম হয়। কেউ আমার চিকিৎসায় অবহেলার শিকার হয়েছেন- এমন অভিযোগ সঠিক নয়। অনেকগুলো ভালো কাজের পর দুয়েকটি খারাপ কিছু ঘটলে সেটিই আলোচনায় আসে। যাদের চিকিৎসা করাই, অবশ্যই তাদের আমি ফলোআপ করি। তারপরও আমার কিছুটা ভুল থাকতে পারে, এটা অস্বীকার করব না।’

বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. কাজী গিয়াস উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে চাইলেও তিনি রাজি হননি। পরে গত ৬ অক্টোবর হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠানো হয়, তাতেও সাড়া দেননি তিনি।

এ বিষয়ে হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মোস্তাফিজুর রহমান আমার দেশকে বলেন, ‘আস্থার কারণে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রোগীরা এ হাসপাতালে আসেন। রোগীদের যে চাপ, তা সামলাতে আমাদের হিমশিম খেতে হয়। আমাদের হয়ত সক্ষমতার ঘাটতি রয়েছে, তবে এখান থেকে রোগীকে বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানো দুঃখজনক। আমাদের উচিত, রোগীদের সাহস দেওয়া, ধৈর্য ধরতে বলা। হয়ত এক সপ্তাহ কিংবা তারও বেশি সময় লাগছে। কিন্তু পরে ভর্তি হতে পারছে। কাজেই বাইরে পাঠানোর প্রয়োজন নেই।’

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত