আইন উপদেষ্টার মন্তব্য স্বাস্থ্যব্যবস্থার প্রতি চরম অবমাননা: এনডিএফ

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ : ১৭ আগস্ট ২০২৫, ২০: ৫৬
আপডেট : ১৭ আগস্ট ২০২৫, ২৩: ০৭

চিকিৎসকদের দেওয়া স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও ওষুধ ব্যবহারের প্রক্রিয়া নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের সাম্প্রতিক মন্তব্য দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার প্রতি চরম অবমাননা বলে মনে করছেন চিকিৎসকদের পেশাজীবী সংগঠন ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরাম (এনডিএফ)।

সংগঠনটি বলছে, উপদেষ্টার এমন মন্তব্য চিকিৎসকদের অক্লান্ত পরিশ্রম, ত্যাগ ও পেশাদারিত্বকে অস্বীকার করার নামান্তর। যা গোটা স্বাস্থ্যব্যবস্থার প্রতি অশ্রদ্ধা।

বিজ্ঞাপন

রোববার গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এনডিএফ সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. মাহমুদ হোসেন এ প্রতিক্রিয়ায় এসব কথা বলেন।

এর আগে এক বিজ্ঞপ্তিতে আসিফ নজরুলে বক্তব্য প্রত্যাহারের আহ্বান জানায় ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)।

এনডিএফ নেতারা বলেন, ‘চিকিৎসকদের পেশাগত সততা ও দায়িত্ববোধ নিয়ে প্রকাশ্যে এমন মন্তব্য জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। একজন সরকারি উপদেষ্টার কাছ থেকে চিকিৎসকদের অবমাননা অত্যন্ত দুঃখজনক।’

চিকিৎসক নেতারা বলেন, ‘বাংলাদেশের চিকিৎসকরা সীমিত সম্পদ ও প্রতিকূল পরিবেশে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। স্বাস্থ্য বাজেটে বরাদ্দ কম, ডাক্তার-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মীর ঘাটতি, বেডের স্বল্পতা, অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা এবং কম বেতন-ভাতা সত্ত্বেও চিকিৎসকরা গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এই বাস্তবতা উপেক্ষা করে আইন উপদেষ্টার এমন মন্তব্য কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’

এনডিএফ মনে করে, ২৪ জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে আহত ছাত্র-জনতার পাশে চিকিৎসকরা যে স্বেচ্ছাসেবামূলক সেবা দিয়ে মানবিকতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তা এড়িয়ে যাওয়া যায় না। শুধু তাই নয়, কোভিড-১৯ মহামারি, ডেঙ্গু কিংবা নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে চিকিৎসকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন, কেউ কেউ জীবনও দিয়েছেন। এই আত্মত্যাগকে অবজ্ঞা করা মানে পুরো স্বাস্থ্যখাতের অবমূল্যায়ন।

নেতারা বলেন, ‘যেখানে বাংলাদেশের একজন শীর্ষস্থানীয় রাজনীতিক সম্প্রতি দেশে সফলভাবে ওপেন হার্ট বাইপাস সার্জারি করিয়েছেন এবং দেশের চিকিৎসকদের ওপর আস্থা রেখেছেন, সেখানে সরকারের একজন উপদেষ্টার এমন অযাচিত সমালোচনা রোগীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াতে পারে। এতে তারা দেশীয় চিকিৎসার প্রতি আস্থা হারিয়ে বিদেশমুখী হয়ে উঠতে পারেন, যা দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।’

তাদের ভাষ্য, ‘গঠনমূলক সমালোচনা গণতন্ত্রের অংশ হলেও তা হওয়া উচিত বস্তুনিষ্ঠ ও সম্মানজনক। চিকিৎসক সমাজকে অবমাননা করা মানে শুধু তাদের মর্যাদাকে হেয় করা নয়, বরং দেশের জনগণের স্বাস্থ্য অধিকারকেই খাটো করে দেখা।’

বিবৃতিতে উপদেষ্টা আসিফ নজরুলকে অবিলম্বে তার বক্তব্য প্রত্যাহার, দেশের জনগণের কাছে প্রকাশ্যে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়া এবং চিকিৎসক সমাজের মর্যাদা ও নিরাপত্তা রক্ষায় সরকারের পক্ষ থেকে দৃশ্যমান ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানানো হয়।

এনডিএফ নেতারা স্পষ্ট জানান, চিকিৎসকদের সম্মান ও অধিকার রক্ষায় আমরা প্রয়োজনে সর্বাত্মক আন্দোলনে যেতে প্রস্তুত। পাশাপাশি তারা আশ্বাস দেন, এনডিএফ চিকিৎসক ও চিকিৎসাসেবার মর্যাদা রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং দেশের জনগণের স্বাস্থ্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত