আমার দেশ জনপ্রিয় বাংলা নিউজ পেপার

মেডিটেশনকে কীভাবে কাজে লাগাবেন

স্বাস্থ্য ডেস্ক

মেডিটেশনকে কীভাবে কাজে লাগাবেন

মেডিটেশনকে যে-কোনো সময় যে-কোনো জায়গায় নিজের কল্যাণ এবং অন্যের কল্যাণে যে-কোনোকিছুর জন্যে আপনি কাজে লাগাতে পারেন। আসলে মেডিটেশন হচ্ছে মনোশক্তিকে ক্রমাগত নিজের এবং অন্যের কল্যাণে ব্যবহার করার প্রক্রিয়া।

জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে যখন মেডিটেশন প্রয়োগ করবেন তখন আপনি সবসময় প্রো-একটিভ থাকবেন, আপনার মাইন্ড ফোকাসড থাকবে এবং বডি মাইন্ডের পুরো শক্তি একত্রিত হবে। সমস্ত অসম্ভব তখন হয়ে যাবে সম্ভব।

বিজ্ঞাপন

সহজে পড়া মনে রাখার জন্যে

সকালে মেডিটেশন করুন। মনের বাড়ি থেকে কমান্ড সেন্টারে চলে যান। গুরুর সাথে কুশলাদি বিনিময় করুন, গুরুকে ফিল করুন। তার দোয়া নিন। তারপর যে বই আজ পড়বেন সেগুলো দেখুন।

ধরুন আপনি ফিজিক্স পড়বেন। যে চ্যাপ্টারটা পড়বেন, মেডিটেটিভ লেভেলে সেটার পাতাগুলো ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত দেখে যান ৩/৪/৫ বার। পুরো পাতাটা পড়ে ফেলুন খুব দ্রুত, এক নজরে। অনুভব করুন যে যা দেখছেন তা বুঝতে পারছেন, যখন বাস্তবে পড়বেন তখন দ্রুত পড়তে পারবেন এবং সমস্ত জিনিস আপনার অন্তরে চলে আসবে।

যখন পড়তে বসবেন, আবার মেডিটেশন করুন। মনের বাড়িতে চলে যান, কোয়ান্টা ভঙ্গি করুন। সকালের মেডিটেশনে পড়ার স্মৃতি স্মরণ করুন। মনে মনে বলুন, আমি এখন ফিজিক্স বইয়ের এই অধ্যায় পড়ব এবং রিভাইজ করব। খুব দ্রুত আমি বুঝতে পারব, পড়তে পারব, মনে রাখতে পারব এবং যা প্রয়োজন যখন প্রয়োজন লিখতে ও বলতে পারব। তারপরে বাস্তবে চোখ মেলে বাম হাতে কোয়ান্টা ভঙ্গি করে পড়ুন। দেখবেন পড়া কত সহজে আয়ত্ত করতে পারছেন!

পরীক্ষায় ভালো লেখার জন্যে

পরীক্ষা শুরুর ৫ মিনিট আগে মেডিটেশন করুন। কমান্ড সেন্টারে চলে যান, গুরুকে অনুভব করুন। তার কাছে দোয়া চান, গুরু! এই পরীক্ষা দিতে হলে আপনি যা লিখতেন আমি সেটাই লিখতে চাই। তারপরে গুরুর দোয়া অনুভব করুন। আপনি দেখবেন যে চমৎকারভাবে লিখতে পারছেন, ভেতর থেকে লেখায় ফ্লো চলে এসেছে।

চাকরির ইন্টারভিউতে ভালো করার জন্যে

ইন্টারভিউ বোর্ডে যারা থাকবেন সেই বসদের আপনার মনের বাড়ির কমান্ড সেন্টারে নিয়ে আসুন। তাদের সাথে কমান্ড সেন্টারে ইন্টারভিউ দিন। দেখুন তারা কী কী প্রশ্ন জিজ্ঞেস করছে, আপনি গুছিয়ে তার উত্তর দিচ্ছেন। ১৫ দিন এভাবে রিহার্সেল দিন। তবে খেয়াল রাখবেন যেন একজন ইন্টারভিউয়ার একেক সময় একেক প্রশ্ন না করে।

বাস্তবে দেখা যাবে যে স্যার এদিক সেদিক হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু প্রশ্ন একই! কারণ মেডিটেশনে আপনি মেন্টাল মেসেজিং করেছেন।

বিজনেস প্রপোজালের ক্ষেত্রে

কাউকে বিজনেস প্রপোজাল দিতে যাবেন। সকালে উঠে মেডিটেশনে বসুন। যাকে প্রস্তাবটা দেবেন, নিজের ভেতর ডুবে গিয়ে তার চেহারা ভিজুয়ালাইজ করুন। দেখুন আপনি তার কাছে গেছেন, তিনি আন্তরিকভাবে আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছেন। হাসিমুখে আপনার কথা শুনছেন। আপনার প্রস্তাব গ্রহণ করেছেন এবং আপনাকে কন্ট্রাক্ট দিচ্ছেন বা পেমেন্ট করছেন।

অর্থাৎ, বাস্তবে আপনি যা করবেন সকালবেলাতেই মেডিটেশনের এটার রিহার্সেল দিন। দেখবেন সুন্দর বিজনেস ডিল হয়ে যাবে।

ব্যবসায় উন্নতির জন্যে

মেডিটেশনে অবলোকন এবং অনুভব করুন যে আপনার দোকানে প্রচুর কাস্টমারের ভিড়। আপনি যে মালামাল আনছেন দ্রুত তা বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। আপনার প্রচুর উপার্জন হয়েছে, আপনি টাকা গুনছেন।

নিয়মিত এই মনছবি দেখার সাথে সাথে খেয়াল রাখবেন যা বিক্রি করবেন সেই জিনিসটা যেন ভালো হয়।

চর্মরোগ নিরাময়ে

স্কিনের যত রোগ আছে তার সবই সাইকোসোম্যাটিক। আপনার চর্মরোগ আছে মানে হলো আপনার ভেতরে অস্থিরতা আছে, কষ্ট আছে। এই অস্থিরতা দুঃখ কষ্ট ঝেড়ে ফেললে আপনার সমস্যা দূর হয়ে যাবে। এজন্যে মেডিটেশনে ধ্যানের স্তরে গিয়ে আপনার সকল কষ্ট বা সমস্যার কথা গুরুকে চিঠি লিখুন। লিখে কাগজগুলো পানিতে ফেলে দেন।

নিজের পাশাপাশি অন্যের রোগ নিরাময়েও আপনি মেডিটেশনকে কাজে লাগাতে পারেন। পুরো প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানুন এই লিংকে গিয়ে – কমান্ড সেন্টারে অন্যের নিরাময় প্রণালী

দাম্পত্য সম্পর্ক উন্নয়নে

আসলে ঝগড়াঝাঁটিতে সমস্যা হয় চেইন ফ্ল্যাশব্যাক। ধরুন একটা ব্যাপার নিয়ে হাজবেন্ড ওয়াইফ ঝগড়া হলো; আপনি রেগে দুর্ব্যবহার করলেন। সাথে সাথে অপরপক্ষের শুরু হবে চেইন ফ্ল্যাশব্যাক। এর আগে কতবার আপনি রেগেছিলেন, কোথায় রেগেছিলেন, রেগে কী কী করেছিলেন- ব্রেনে চেইন ফ্ল্যাশব্যাক হতে থাকবে সেসবের। যতক্ষণ পর্যন্ত এই ফ্ল্যাশব্যাক হওয়াটা বন্ধ না হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত অপরপক্ষের মেজাজ ঠান্ডা হবে না। এই ফ্ল্যাশব্যাক বন্ধ করার জন্যে আপনাকে ফ্ল্যাশব্যাকের চ্যানেলটা বদলে দিতে হবে।

এভাবে যত গভীর থেকে ভাববেন তত তার ভেতরকার নেগেটিভ ফ্ল্যাশব্যাক রিফ্লেক্সড হয়ে যাবে নতুন পয়েন্ট দিয়ে। এরপর শুধু বাস্তবে তাকে এপ্রোচ করবেন, দেখবেন অপরপক্ষের মন গলে গেছে।

সন্তানের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে

আপনার সন্তান আপনার কথা শুনতে চায় না? তাকে কমান্ড সেন্টারে নিয়ে আসুন, মায়ের/বাবার মমতা দিয়ে বোঝান। বিটা লেভেল যে কথাগুলো তাকে শোনাতে চান দরদের সাথে সেগুলো তাকে বলুন।

১/২ দিনে হয়ত হবে না। কারণ সন্তান তো ১/২ দিনে বখে যায় নি! অতএব, হাল ছেড়ে দেবেন না। ধৈর্য নিয়ে তাকে বোঝাতে থাকুন। যত ধৈর্য, আন্তরিকতা আর মমতা নিয়ে তাকে বোঝাবেন দেখবেন ধীরে ধীরে সে আপনার কথা শুনতে শুরু করেছে।

মেডিটেশন দিনে কয়বেলা কতক্ষণ করতে হবে
বলবেন অনেক ব্যস্ত! মেডিটেশন করার সময় পাই না- দুই বেলা মেডিটেশন কি করতেই হবে? হবে! আর তা আপনার ব্যস্ততার ফসল ঘরে তোলার জন্যেই।

যেমন ধরুন, দিনে আমাদের দু’বেলা দাঁত মাজতে হয়। একদিন বাদ গেলেই দেখবেন দাঁতের মাড়িতে ময়লা জমে গেছে। আর কয়েকদিন ব্রাশ না করলে তো দুর্গন্ধে আপনার কাছেই ঘেঁষা যাবে না!

আমাদের মনের অবস্থাও এমনই। রোজ দুবেলা মেডিটেশন করলে মনে আবর্জনা, অর্থাৎ নেতিবাচক ভাবনা জমে ভয় উদ্বেগ উৎকণ্ঠার রূপ নিতে পারে না। মাথা ঠান্ডা থাকে, ফোকাস ভালো হয়। ভালো ভাবা পরিণত হয় স্বভাবে; আর ভালো ভাবাটাই হচ্ছে ভালো থাকার মূল ভিত্তি।

এজন্যেই মেডিটেশন চর্চা করতে হবে দিনে দুবার। ৩০ মিনিট করে করতে পারলে খুব ভালো; না হলে অন্তত ১৫-২০ মিনিট করে হলেও করা উচিত।

Google News Icon

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর

খুঁজুন