নাকের দুর্গন্ধ রোগ

এট্রোফিক রাইনাইটিস

ডা. মো. আব্দুল হাফিজ শাফী
প্রকাশ : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৫: ৩৬

এট্রোফিক রাইনাইটিস হলো নাকের ভেতরের আস্তরণ (মিউকোসা)। হাড়ের কাঠামো (টারবিনেট) ক্লেবশিয়েলা ওজানিয়া নামক জীবাণু দ্বারা ক্ষয় হয়ে রক্ত সঞ্চালন বিঘ্ন হয়ে পাতলা হয়ে যাওয়া ও শুকিয়ে যাওয়ার একটি দীর্ঘমেয়াদি রোগ। এই রোগে নাকের ভেতরে রক্তনালির প্রান্তগুলো বন্ধ হয়ে মরে যেতে থাকে। এছাড়া নাসারন্ধ্রের দুই পাশে ঢাকনার মতো হাড়গুলো ক্রমেই ক্ষয় হয়ে ছোট হতে থাকে। ফলে নাসারন্ধ্রের পথ প্রশস্ত হতে থাকে। এতে নাক শুকিয়ে যায়, ক্রাস্ট বা শুকনো খোসা জমে এবং দুর্গন্ধ হতে পারে। একে নাকপচা রোগও বলা হয়ে থাকে।

বিজ্ঞাপন

কারণ

*দীর্ঘস্থায়ী নাকের সংক্রমণ।

*বারবার সর্দি বা সাইনাস ইনফেকশন।

*নাকের অস্ত্রোপচারের পর জটিলতা (অতিরিক্ত টার্বিনেকটমি/টারবিনেট পোড়ানো)।

*অপুষ্টি (বিশেষ করে আয়রন ও ভিটামিন এ-এর ঘাটতি)।

*জেনেটিক কারণ (বংশগত)।

*হরমোনাল মহিলাদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।

লক্ষণ

* নাক শুকিয়ে যাওয়া।

*নাকের ভেতরে সবুজ শক্ত খোসা জমা।

*দুর্গন্ধযুক্ত শ্বাস। এই রোগে দুর্গন্ধ রোগী নিজে টের নাও পেতে পারে। কিন্তু আশপাশের লোকজন বুঝতে পারে।

*নাক দিয়ে রক্ত পড়া।

*রোগীর ঘ্রাণশক্তি কমে যাওয়া বা হারানো।

আমরা চিকিৎসকরা যখন নাকের ভেতর পরীক্ষা করি, তখন দেখা যায়, নাকের গহ্বর বেশ বড় এবং তাতে সবুজ আস্তরণ বা হালকা ধূসর রঙের বষ্টি বা ময়লাখণ্ডে পূর্ণ।

জটিলতা

*স্থায়ী নাক বন্ধভাব।

*ঘন ঘন সংক্রমণ। সবুজাভ ময়লা বের হওয়া।

*মানসিক অস্বস্তি ও আত্মবিশ্বাসের অভাব।

চিকিৎসা

শুধু ওষুধে এই রোগ পুরোপুরি সারবে এমনটি নিশ্চিত করে বলা যায় না। তবে চিকিৎসার উদ্দেশ্য হচ্ছে নাককে পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন জীবাণুমুক্ত রাখা। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি রোগ। কয়েক বছর থাকার পর মধ্য বয়সে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভালো হয়ে যেতে পারে। অনেক সময় রোগী হতাশায় ভোগে। এ জন্য রোগ নির্ণয়ের পর চিকিৎসার শুরুতেই রোগীকে এ রোগের বিস্তারিত বোঝাতে হবে।

*গ্লিসারিনের সঙ্গে শতকরা ২৫ ভাগ গ্লুকোজের মিশ্রণ প্রতিদিন পাঁচ ফোঁটা করে দুই নাকের ছিদ্রে দিনে তিন থেকে চারবার করে দীর্ঘ মেয়াদে দেওয়া হয়। এই ২৫ শতাংশ গ্লুকোজ ইন গ্লিসারিন ব্যবহারের পর শেখানো নিয়মে নাকে নরমাল স্যালাইন দিয়ে নিয়মিত নাক ধোয়ার (ন্যাসাল ডাউচিং) পরামর্শ দেওয়া হয়।

*অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হতে পারে। যখন ব্যাকটেরিয়া দিয়ে সংক্রমিত হয়।

* ভ্যাসলিন দিয়ে নাক আর্দ্র রাখা।

* ডাক্তারের পরামর্শে ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট নিতে হবে অনেক দিন।

উপযুক্ত চিকিৎসার মাধ্যমে রোগটি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। ফলে রোগী স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে। প্রয়োজনে বিশেষ অস্ত্রোপচার লাগতে পারে।

এট্রোফিক রাইনাইটিসে যেসব ওষুধ দেওয়া যাবে না

* এন্টিহিস্টামিন দেওয়া যাবে না। এই রোগে নাকের ভেতর শুকনো হয়ে যায়, খোসা জমে। এন্টিহিস্টামিন দিলে নাক আরো শুকিয়ে গিয়ে উপসর্গ খারাপ হবে।

* ন্যাসাল ডিকঞ্জেস্ট্যান্ট। জাইলোমেটাজলিন/অক্সিমেটাজলিন হলো একধরনের নাকের ড্রপ, যা নাকের শ্লেষ্মা ঝিল্লির রক্তনালির সংকোচন ঘটিয়ে অস্থায়ীভাবে নাক বন্ধভাব কমায়। কিন্তু এট্রোফিক রাইনাইটিসে শ্লেষ্মা ঝিল্লি আগেই অতিশয় পাতলা, শুষ্ক এবং ভঙ্গুর হয়ে থাকে। ভ্যাসোকনস্ট্রিক্টর দিলে স্থানীয় রক্তসঞ্চালন আরো কমে গিয়ে শ্লেষ্মা ঝিল্লির ক্ষতি বাড়িয়ে দেবে। এতে নাকের শুষ্কতা, ক্রাস্ট তৈরি, দুর্গন্ধ ও আলসারেশন আরো বেড়ে যায়।

প্রতিরোধ

*নাক পরিষ্কার ও আর্দ্র রাখা।

*ঠান্ডা ও ধুলোবালি থেকে সুরক্ষা।

*সঠিক খাদ্যাভ্যাস (আয়রন ও ভিটামিনসমৃদ্ধ খাবার)।

তাই নাক থেকে দুর্গন্ধ, বারবার শুকনো খোসা জমা বা ঘ্রাণশক্তি হারালে দেরি না করে অবশ্যই নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

লেখক : আবাসিক সার্জন (ইএনটি)

ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সিলেট

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত