জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধ ও সতর্কতা

ডা. মোহাম্মদ রিফাত জিয়া হোসেন
প্রকাশ : ২৩ জুলাই ২০২৫, ১০: ৪৭

জরায়ুমুখ ক্যানসার, যা সার্ভিক্যাল ক্যানসার নামেও পরিচিত, নারীদের মধ্যে একটি প্রধান স্বাস্থ্যঝুঁকি। এটি বিশ্বব্যাপী নারীদের মধ্যে চতুর্থ সর্বাধিক সাধারণ ক্যানসার। জরায়ুমুখ ক্যানসার জরায়ুর নিম্নাংশে হয়ে থাকে। যাকে জরায়ুমুখ বলা হয়, সেখান থেকেই শুরু হয়। এটি প্রায়ই হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস (এইচপিভি) সংক্রমণের কারণে হয়, যা একটি সাধারণ ভাইরাস। এইচপিভি সংক্রমণের ফলে জরায়ুমুখের কোষে অস্বাভাবিক পরিবর্তন ঘটতে পারে। সময়ের সঙ্গে ক্যানসারে রূপান্তরিত হতে পারে। তবে, প্রাথমিক শনাক্তকরণ এবং চিকিৎসার মাধ্যমে এটি প্রতিরোধ করা সম্ভব।

ঝুঁকির কারণ

১. উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এইচপিভি স্ট্রেন এই রোগের প্রধান কারণ। ধূমপান জরায়ুমুখ ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়।

২. এইচআইভি/এইডস বা ইমিউনোসপ্রেসিভ ওষুধের কারণে দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ঝুঁকি বাড়ায়।

৩. একাধিক যৌনসঙ্গী বা অল্প বয়সে যৌন কার্যকলাপ শুরু করা ঝুঁকি বাড়ায়।

৪. জরায়ুমুখ ক্যানসারের পারিবারিক ইতিহাস ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

৫. দীর্ঘমেয়াদি মৌখিক গর্ভনিরোধক বড়ি ব্যবহার কিছুটা ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

লক্ষণগুলো চিনুন

জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রাথমিক পর্যায়ে সাধারণত কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। তাই নিয়মিত স্ক্রিনিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে, রোগটি বাড়তে থাকলে নিম্নলিখিত লক্ষণ দেখা দিতে পারে। অস্বাভাবিক যোনিপথে রক্তপাত। যেমনÑমাসিকের মধ্যে, যৌনমিলনের পর বা মেনোপজের পর রক্তপাত। দুর্গন্ধযুক্ত বা অস্বাভাবিক যোনিস্রাব। পেলভিক এলাকায় ব্যথা বা যৌনমিলনের সময় ব্যথা। ক্লান্তি বা ওজন হ্রাস। এই লক্ষণগুলো দেখা দিলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

স্ক্রিনিংয়ের গুরুত্ব

প্রাথমিক শনাক্তকরণের জন্য সাধারণ স্ক্রিনিং পদ্ধতিগুলোর মধ্যে রয়েছেÑপ্যাপ স্মিয়ার টেস্ট। জরায়ুমুখের কোষে অস্বাভাবিক পরিবর্তন শনাক্ত করতে ব্যবহৃত হয় এটি। এতে এইচপিভি টেস্ট, উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এইচপিভি স্ট্রেন শনাক্ত করে। এ ছাড়া কলপোস্কোপি, এর মাধ্যমে প্যাপ স্মিয়ারে অস্বাভাবিক ফলাফলের পর জরায়ুমুখ আরো বিস্তারিতভাবে পরীক্ষা করা হয়। ২১ থেকে ৬৫ বছর বয়সি নারীর নিয়মিত প্যাপ স্মিয়ার এবং এইচপিভি পরীক্ষা করানো উচিত। ঝুঁকির মাত্রা অনুযায়ী চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে স্ক্রিনিং পরিকল্পনা করুন।

প্রতিরোধের উপায়

কিছু ঝুঁকির কারণ পরিবর্তন করা না গেলেও, জীবনযাত্রার পরিবর্তন এবং সতর্কতার মাধ্যমে কিছুটা ঝুঁকি কমানো সম্ভব। এইচপিভি টিকা ১১-১২ বছর বয়স থেকে নেওয়া যায় এবং ৪৫ বছর পর্যন্ত কার্যকর। এটি এইচপিভি সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা দেয়। কনডম ব্যবহার এবং যৌনসঙ্গীর সংখ্যা সীমিত করা এইচপিভি সংক্রমণের ঝুঁকি কমায়। ধূমপান ছেড়ে দেওয়া ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়। নিয়মিত প্যাপ স্মিয়ার এবং এইচপিভি পরীক্ষা প্রাথমিক শনাক্তকরণে সহায়তা করে। সুষম খাদ্য, নিয়মিত ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকার। জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধযোগ্য এবং চিকিৎসাযোগ্য, যদি প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করা যায়। আপনার ঝুঁকি এবং স্ক্রিনিংয়ের বিকল্প সম্পর্কে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন। সচেতনতা এবং সময়মতো পদক্ষেপ ঝুঁকি এড়াতে কার্যকর হতে পারে।

লেখক : সহকারী অধ্যাপক (অনকোলজিস্ট)

ক্যানসার বিভাগ, বাংলাদেশ মেডিকেল ইউনিভার্সিটি (পিজি)

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত