আজকাল আমাদের আশপাশে এমন কেউ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর, যার রক্তচাপ একবারও মাপা হয়নি। কিন্তু অনেকেই যখন জানতে পারেন—‘আমার হাই-প্রেশার’, তখনই শুরু হয় ভয়, দুশ্চিন্তা আর ভুল ধারণার ভিড়। কেউ বলেন, ‘ওষুধ খেলে আসক্তি হবে’। কেউ বলেন, ‘হারবালেই ভালো’—ফলে বিপদটা আরো বেড়ে যায়। চলুন, দেখে নেওয়া যাক উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ নিয়ে সবচেয়ে প্রচলিত কিছু মিথ ও তার বাস্তব সত্য।
মিথ ১ : রক্তচাপ কমে গেলে ওষুধ বন্ধ করা যায়
বাস্তবতা : রক্তচাপ এখন স্বাভাবিক মানেই তা সারেনি। বরং ওষুধের কারণেই তা নিয়ন্ত্রণে আছে। হঠাৎ বন্ধ করলে রক্তচাপ দ্রুত বেড়ে গিয়ে স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ বন্ধ করা একদমই অনুচিত।
মিথ ২ : হারবাল ওষুধই নিরাপদ, প্রেসক্রিপশনের ওষুধ ক্ষতিকর
বাস্তবতা : বাজারের বেশির ভাগ হারবাল পণ্য বৈজ্ঞানিকভাবে যাচাই করা হয়নি। কিছু উপাদান লিভার বা কিডনির ক্ষতি করতে পারে। অথচ আধুনিক অ্যান্টিহাইপারটেনসিভ ওষুধ—যেমন : ACE inhibitor, calcium channel blocker, beta-blocker ইত্যাদি—দীর্ঘ গবেষণার মাধ্যমে নিরাপদ প্রমাণিত।
মিথ ৩ : একবার ওষুধ খাওয়া শুরু করলে সারাজীবন খেতে হয়, তাই দেরিতে শুরু করাই ভালো
বাস্তবতা : রক্তচাপ যত দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা যায়, তত কম ক্ষতি হয় হৃদযন্ত্র ও মস্তিষ্কের। দেরি করলে অঙ্গের ক্ষতি স্থায়ী হতে পারে। তাই ‘পরে নয়, এখনই’ চিকিৎসা শুরু করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
মিথ ৪ : শুধু খাবার ও ব্যায়ামেই রক্তচাপ ঠিক হয়
বাস্তবতা : প্রাথমিক পর্যায়ে হয়তো জীবনযাপনের পরিবর্তনই যথেষ্ট। কিন্তু মাঝারি বা গুরুতর হাইপারটেনশনে ওষুধ অপরিহার্য। সঠিক চিকিৎসা মানে ডায়েট + ব্যায়াম + ওষুধ—এই তিনের মিলিত প্রয়াস।
মিথ ৫ : রক্তচাপের ওষুধে যৌনক্ষমতা কমে যায়
বাস্তবতা : কিছু পুরোনো ওষুধে সাময়িক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে, তবে আধুনিক ওষুধে এই ঝুঁকি প্রায় নেই। প্রয়োজনে চিকিৎসক ওষুধ পরিবর্তন করে সহজ সমাধান দিতে পারেন।
শেষকথা :
উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ কোনো শত্রু নয়—এটি বরং শরীরের নীরব রক্ষাকবচ। নিয়মিত ওষুধ, কম নুন, পরিমিত খাবার, হাঁটাচলা ও মানসিক শান্তিই পারে রক্তচাপকে আয়ত্তে রাখতে। ভুল ধারণা নয়, সঠিক তথ্যই বাঁচাতে পারে জীবন।
লেখক : অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সাইফ উল্লাহ
বিভাগীয় প্রধান, কার্ডিওলজি
সাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

