চিকিৎসকদের নিয়ে আসিফ নজরুলের মন্তব্য 'অপমানজনক' বলছে ড্যাব

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ : ১৭ আগস্ট ২০২৫, ০০: ৫১

বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগীদের অপ্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং অযথা চিকিৎসা বন্ধ করা প্রসঙ্গে চিকিৎসকদের নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের সাম্প্রতিক মন্তব্যকে অপমানজনক ও অবমাননাকর বলছে ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)। সংগঠনটি এমন মন্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি আসিফ নজরুলকে মন্তব্য পুনর্বিবেচনা ও জনস্বার্থে ব্যাখ্যা বা দুঃখপ্রকাশের আহ্বান জানিয়েছে।

শনিবার ড্যাবের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশীদ এবং মহাসচিব ডা. মো. জহিরুল ইসলাম শাকিল এক যৌথ বিবৃতিতে তারা এই প্রতিবাদ জানান।

বিজ্ঞাপন

ড্যাব নেতারা বলেন, “অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা হয়েও চিকিৎসকদের নিয়ে এমন অবমাননাকর মন্তব্য করা চিকিৎসকদের নিষ্ঠা, পরিশ্রম ও আত্মত্যাগকে হেয়প্রতিপন্ন করেছে। এটি স্বাস্থ্যসেবার প্রতি জনগণের আস্থা সংকুচিত করতে পারে।”

তারা আরও জানান, ন্যায্য বেতন-ভাতা না পাওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশের চিকিৎসকরা প্রত্যন্ত গ্রামীণ ক্লিনিক থেকে শহরের ব্যস্ততম হাসপাতাল পর্যন্ত নিরলসভাবে চিকিৎসাসেবা প্রদান করে আসছেন। কোভিড-১৯ মহামারি, ডেঙ্গু সহ নানা স্বাস্থ্য সংকটে বহু চিকিৎসক জীবনের ঝুঁকি নিয়েছেন; কেউ কেউ প্রাণও হারিয়েছেন। তবুও চিকিৎসকরা তাঁদের সেবা ও মানবিকতার পথ থেকে কখনো পিছপা হননি।

ড্যাবের বিবৃতিতে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, গত বছরের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসা সেবা প্রদানে চিকিৎসকরা স্বেচ্ছাসেবামূলকভাবে জনতার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। চাকুরি হারানো ঝুঁকি, পুলিশি হয়রানি ও নানা চাপ সত্ত্বেও চিকিৎসকরা আহতদের চিকিৎসা প্রদান করে মানবিকতার উদাহরণ স্থাপন করেছেন। অথচ গণ-অভ্যুত্থানে চিকিৎসকদের বিশাল অবদান থাকা সত্ত্বেও সরকারের একজন উপদেষ্টা তাদের অপমান করেছেন, যা এক বিরাট অন্যায় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

বিবৃতিতে ড্যাব নেতারা বলেন, গঠনমূলক সমালোচনা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সৌন্দর্য, তবে তা তথ্যনির্ভর এবং সম্মানজনক হতে হবে। পুরো চিকিৎসক সমাজকে অযথা বদনাম করা হাজারো সৎ ও নিবেদিতপ্রাণ চিকিৎসকের আত্মত্যাগকে অপমান করে, চিকিৎসক-রোগীর সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং ভবিষ্যতের মেধাবী তরুণদের চিকিৎসা পেশায় আসার আগ্রহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।

বিবৃতিতে ড্যাব আরও উল্লেখ করেছে, “আমরা জনাব আসিফ নজরুলকে আহ্বান জানাচ্ছি, তিনি তাঁর মন্তব্য পুনর্বিবেচনা করুন এবং জনস্বার্থে একটি ব্যাখ্যা বা দুঃখপ্রকাশ করুন। ড্যাব চিকিৎসাসেবার মর্যাদা রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার পক্ষে কাজ করে যাবে। আমরা সবসময় গঠনমূলক সংলাপকে স্বাগত জানাই, যা দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করবে।”

ড্যাব সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশীদ ও মহাসচিব ডা. মো. জহিরুল ইসলাম শাকিলের যৌথ বিবৃতিতে চিকিৎসক সমাজের মর্যাদা, তাদের আত্মত্যাগ ও পেশাগত দায়বদ্ধতা রক্ষার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, আজ রাজধানীর মিন্টু রোডে শহীদ আবু সাঈদ ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে বাংলাদেশ প্রাইভেট হসপিটাল, ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএইচসিডিওএ)-এর নবনির্বাচিত কমিটির অভিষেক অনুষ্ঠানে অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা, রোগীদের নির্দিষ্ট কোম্পানির ওষুধ কিনতে বলা ও ডাক্তারদের কাছে ওষুধ কোম্পানির দৌরাত্ম্যে চিকিৎসকদের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।

চিকিৎসকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘রোগীদের কেন নির্দিষ্ট কোম্পানির ওষুধ কিনতে হবে? পৃথিবীর কোন জায়গায় হসপিটাল, প্রাইভেট ক্লিনিকে সবসময় ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধির জন্য নির্দিষ্ট টাইম (সময়) থাকে ডাক্তারদের? আপনারা ওষুধ কোম্পানির দালাল? এ দেশে বড় বড় হসপিটালের ডাক্তাররা কী ওষুধ কোম্পানির মধ্যস্বত্বভোগী? কোন জায়গায় নিয়ে যাচ্ছেন নিজেদের?’

আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘অনেকেই বলেন চিকিৎসকেরা ভালোভাবে রোগের কথা না শুনেই ব্যবস্থাপত্র লেখেন এবং অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেন। এই অত্যাচার বন্ধ করতে হবে। মানুষ অনেক গরীব। বড় লোকদের গলা কাটেন সমস্যা নেই কিন্তু গরিব রোগীদের ১৪ থেকে ১৫টি টেস্ট দেওয়ার প্রক্রিয়া বন্ধ করান।’

চিকিৎসায় আস্থা ফেরাতে চিকিৎসকদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘দেশের কোনো রোগীই বিদেশে যেতে চান না। ভারতে-ব্যাংককে যেসব রোগী চিকিৎসা নিতে যান, তারা অন্যকোনো উপায় না পেয়েই যান। দেশে সেবা পেলে কখনো রোগীরা বিদেশে যাবেন না। ৯৯ শতাংশ ক্ষেত্রে রোগীদের যাতে চিকিৎসা নিতে বিদেশ যেতে না হয়, এমন চিকিৎসাব্যবস্থা গড়ে তোলার ওপর জোর দেন তিনি।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত