ডা. নাহিদ পারভীন রুমকী
বয়ঃসন্ধির পর থেকে মেয়েদের ঋতুস্রাব শুরু হয়, যা সাধারণত প্রতি মাসে বা ২৮ দিনে একবার হয় বলে একে মাসিকও বলা হয়। সেই মাসিক হতে পারে নিয়মিত বা অনিয়মিত। অনিয়মিত মাসিকের অনেক কারণ থাকে, যা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা ধরনের গ্রুপও তৈরি হয়েছে। যেমন : ‘পিসিওএস বা পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম’। আমরা আজকে এই বহুল আলোচিত সমস্যা নিয়ে জানব।
পিসিওএস হলো নারীদের শরীরে কিছু হরমোনের মাত্রা তারতম্য হওয়ার ফলে সৃষ্ট উপসর্গের সমাহার। এক কথায় এটি হরমোনজনিত সমস্যা। এই হরমোনজনিত সমস্যার ফলে দুই ডিম্বাশয়ে ছোট ছোট সিস্ট তৈরি হয়। পলি মানে অনেক, সিনড্রোম মানে উপসর্গ, তাই এই উপসর্গগুলোর নাম পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম। পিসিওএস আক্রান্ত বেশিরভাগ নারীর অ্যানড্রোজেন অথবা পুরুষ হরমোনের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকে। এ সমস্যার নির্দিষ্ট কোনো কারণ জানা নেই। তবে জেনেটিক কারণে হতে পারে।
এই রোগের লক্ষণগুলো
১. ওজন বৃদ্ধি।
২. মুখে ব্রণ ও ত্বকে কালচে ভাব।
৩. মুখমণ্ডলে অবাঞ্ছিত চুল গজানো বা শরীরে চুলের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি।
৪. অনিয়মিত মাসিক।
৫. লম্বা সময় মাসিক বন্ধ থাকা।
৬. বাচ্চা হতে সমস্যা হওয়া।
৭. ব্লাড সুগার বেড়ে যাওয়া, রক্তে চর্বির মাত্রাও বেড়ে যেতে পারে।
৮. স্লিপ এপনিয়া বা ঘুমের মধ্যে শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
রোগ শনাক্তকরণ
১. রোগীর মাসিকসহ অন্যান্য সমস্যার পরিপূর্ণ ইতিহাস (proper history) জানতে হবে।
২. রোগীকে সামনাসামনি দেখতে হবে (physical exam ination) মুখের লোম-ব্রণ-ঘাড়ের বা অস্থিসন্ধির কালো দাগ আছে কি না দেখতে হবে।
৩. রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে হরমোনের মাত্রাসহ কিছু রুটিন পরীক্ষা করতে হবে।
৪. আলট্রাসনোগ্রাম।
পিসিওএসে কেন মাসিক অনিয়মিত হয়?
সাধারণত নারীদের ডিম্বাশয়ে মাসিকের শুরুতে কিছু ফলিকল (প্রাইমারি ফলিকল) বড় হওয়া শুরু করে। মাঝামাঝি সময়ে তার থেকে একটা ফলিকল পরিপক্ব হয়। বেশিরভাগ সময়ে মাসিকের ১৪তম দিনে সেই পরিপক্ব ফলিকলের ভেতর থেকে ডিম্বাণু বের হয়। এটাকে ওভুলেশন বলে। ওভুলেশনের পরে সেই ডিম্বাণু শুক্রাণু দ্বারা নিষিক্ত হলে প্রেগন্যান্সি হবে। না হলে নির্দিষ্ট সময় পর তা নষ্ট হয়ে মাসিক হয়ে যাবে। পিসিওএসে অ্যানড্রোজেনসহ আরো কিছু হরমোনের মাত্রা স্বাভাবিকের বেশি থাকার ফলে এই ওভুলেশন ঠিকমতো হয় না। ফলিকলগুলো পরিপক্ব না হয়ে ছোট ছোট হয়ে সিস্ট হয়ে রয়ে যায়। ওভুলেশন ঠিকমতো হয় না দেখে মাসিকও নিয়মিত হয় না।
এই রোগের চিকিৎসা
পিসিওএসের চিকিৎসা কিছু বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল। যেমন : রোগীর বয়স, বৈবাহিক অবস্থা, বিবাহিত হলে সন্তান নিতে চায় কি না, রোগের কারণে সৃষ্ট সমস্যা বা কোনো জটিলতা আছে কি না? তবে বেশিরভাগ পিসিওএস রোগীদের সমস্যা থাকে শরীরের ওজন বৃদ্ধি। তাই রোগ শনাক্তকরণের পর থেকেই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করতে হবে। পরিমিত খাবার ও নিয়মিত শরীরচর্চার অভ্যাস করতে হবে।
অবিবাহিত মেয়েদের পিসিওএস হলে করণীয়
অনিয়মিত মাসিকের জন্য অবিবাহিত বা কিশোরী মেয়েদের সব সময় যে ওষুধ বা চিকিৎসা লাগবে তা না। অভিভাবককে সবকিছু ভালোভাবে বুঝিয়ে বলতে হবে (proper counselling) । ওজন নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি সমস্যা প্রকট হলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে থাকতে হবে।
বিবাহিত মেয়েদের পিসিওএস হলে করণীয়
যদি বাচ্চা নিতে না চান, সে ক্ষেত্রে মাসিক নিয়মিত হবে। পাশাপাশি জন্মনিয়ন্ত্রণের ওষুধ খেতে হবে। এতে পিসিওএসের জন্য সৃষ্ট কিছু সমস্যার সমাধান হবে। আর বাচ্চা নিতে চাইলে পিসিওএস রোগীদের সাধারণত ওভুলেশন ঠিকমতো হয় না। তাই ওভুলেশন ঠিকমতো হলে বাচ্চা হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে।
তবে স্ত্রীর পিসিওএস ছাড়া অন্য কোনো সমস্যা না থাকলে স্বামীর শুক্রাণু স্বাভাবিক থাকতে হবে এবং স্বামী-স্ত্রীর সহবাসে কোনো সমস্যা থাকা যাবে না। ওভুলেশনের জন্য নানা রকম চিকিৎসা দেওয়া যায়। ওষুধ ও ইনজেকশন প্রয়োজনে দুটিই লাগতে পারে। ওভুলেশন ঠিকভাবে হচ্ছে কি না তা নানা মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে। ওভুলেশন ঠিকভাবে হওয়ার নির্দিষ্ট সময় পরও যদি প্রেগন্যান্সি না হয় বা ওষুধ (একটা মাত্রা পর্যন্ত) প্রয়োগের পর ওভুলেশন ঠিকভাবে না হলে সার্জারি (ল্যাপারোস্কোপি) প্রয়োজন হতে পারে। অভিজ্ঞ গাইনোকোলজিস্ট বা ফার্টিলিটি বিশেষজ্ঞ এ ব্যাপারে পূর্ণ সহযোগিতা করতে পারবেন। পিসিওএস নিয়ে এত অল্প পরিসরে লেখা সম্ভব না। তারপরও কিছু ধারণা দেওয়ার জন্য এই তথ্যগুলো জানালাম। মাসিক অনিয়মিত হলে অথবা পিসিওএস আছে জানার পর এটাকে ওভারিয়ান সিস্ট বা ভয়ংকর কিছু না মনে করে গাইনি ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
লেখিকা : গাইনি বিশেষজ্ঞ ও কনসালট্যান্ট, আইসিআরসি,
হুমায়ুন রোড, মোহাম্মদপুর, ঢাকা
বয়ঃসন্ধির পর থেকে মেয়েদের ঋতুস্রাব শুরু হয়, যা সাধারণত প্রতি মাসে বা ২৮ দিনে একবার হয় বলে একে মাসিকও বলা হয়। সেই মাসিক হতে পারে নিয়মিত বা অনিয়মিত। অনিয়মিত মাসিকের অনেক কারণ থাকে, যা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা ধরনের গ্রুপও তৈরি হয়েছে। যেমন : ‘পিসিওএস বা পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম’। আমরা আজকে এই বহুল আলোচিত সমস্যা নিয়ে জানব।
পিসিওএস হলো নারীদের শরীরে কিছু হরমোনের মাত্রা তারতম্য হওয়ার ফলে সৃষ্ট উপসর্গের সমাহার। এক কথায় এটি হরমোনজনিত সমস্যা। এই হরমোনজনিত সমস্যার ফলে দুই ডিম্বাশয়ে ছোট ছোট সিস্ট তৈরি হয়। পলি মানে অনেক, সিনড্রোম মানে উপসর্গ, তাই এই উপসর্গগুলোর নাম পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম। পিসিওএস আক্রান্ত বেশিরভাগ নারীর অ্যানড্রোজেন অথবা পুরুষ হরমোনের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকে। এ সমস্যার নির্দিষ্ট কোনো কারণ জানা নেই। তবে জেনেটিক কারণে হতে পারে।
এই রোগের লক্ষণগুলো
১. ওজন বৃদ্ধি।
২. মুখে ব্রণ ও ত্বকে কালচে ভাব।
৩. মুখমণ্ডলে অবাঞ্ছিত চুল গজানো বা শরীরে চুলের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি।
৪. অনিয়মিত মাসিক।
৫. লম্বা সময় মাসিক বন্ধ থাকা।
৬. বাচ্চা হতে সমস্যা হওয়া।
৭. ব্লাড সুগার বেড়ে যাওয়া, রক্তে চর্বির মাত্রাও বেড়ে যেতে পারে।
৮. স্লিপ এপনিয়া বা ঘুমের মধ্যে শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
রোগ শনাক্তকরণ
১. রোগীর মাসিকসহ অন্যান্য সমস্যার পরিপূর্ণ ইতিহাস (proper history) জানতে হবে।
২. রোগীকে সামনাসামনি দেখতে হবে (physical exam ination) মুখের লোম-ব্রণ-ঘাড়ের বা অস্থিসন্ধির কালো দাগ আছে কি না দেখতে হবে।
৩. রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে হরমোনের মাত্রাসহ কিছু রুটিন পরীক্ষা করতে হবে।
৪. আলট্রাসনোগ্রাম।
পিসিওএসে কেন মাসিক অনিয়মিত হয়?
সাধারণত নারীদের ডিম্বাশয়ে মাসিকের শুরুতে কিছু ফলিকল (প্রাইমারি ফলিকল) বড় হওয়া শুরু করে। মাঝামাঝি সময়ে তার থেকে একটা ফলিকল পরিপক্ব হয়। বেশিরভাগ সময়ে মাসিকের ১৪তম দিনে সেই পরিপক্ব ফলিকলের ভেতর থেকে ডিম্বাণু বের হয়। এটাকে ওভুলেশন বলে। ওভুলেশনের পরে সেই ডিম্বাণু শুক্রাণু দ্বারা নিষিক্ত হলে প্রেগন্যান্সি হবে। না হলে নির্দিষ্ট সময় পর তা নষ্ট হয়ে মাসিক হয়ে যাবে। পিসিওএসে অ্যানড্রোজেনসহ আরো কিছু হরমোনের মাত্রা স্বাভাবিকের বেশি থাকার ফলে এই ওভুলেশন ঠিকমতো হয় না। ফলিকলগুলো পরিপক্ব না হয়ে ছোট ছোট হয়ে সিস্ট হয়ে রয়ে যায়। ওভুলেশন ঠিকমতো হয় না দেখে মাসিকও নিয়মিত হয় না।
এই রোগের চিকিৎসা
পিসিওএসের চিকিৎসা কিছু বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল। যেমন : রোগীর বয়স, বৈবাহিক অবস্থা, বিবাহিত হলে সন্তান নিতে চায় কি না, রোগের কারণে সৃষ্ট সমস্যা বা কোনো জটিলতা আছে কি না? তবে বেশিরভাগ পিসিওএস রোগীদের সমস্যা থাকে শরীরের ওজন বৃদ্ধি। তাই রোগ শনাক্তকরণের পর থেকেই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করতে হবে। পরিমিত খাবার ও নিয়মিত শরীরচর্চার অভ্যাস করতে হবে।
অবিবাহিত মেয়েদের পিসিওএস হলে করণীয়
অনিয়মিত মাসিকের জন্য অবিবাহিত বা কিশোরী মেয়েদের সব সময় যে ওষুধ বা চিকিৎসা লাগবে তা না। অভিভাবককে সবকিছু ভালোভাবে বুঝিয়ে বলতে হবে (proper counselling) । ওজন নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি সমস্যা প্রকট হলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে থাকতে হবে।
বিবাহিত মেয়েদের পিসিওএস হলে করণীয়
যদি বাচ্চা নিতে না চান, সে ক্ষেত্রে মাসিক নিয়মিত হবে। পাশাপাশি জন্মনিয়ন্ত্রণের ওষুধ খেতে হবে। এতে পিসিওএসের জন্য সৃষ্ট কিছু সমস্যার সমাধান হবে। আর বাচ্চা নিতে চাইলে পিসিওএস রোগীদের সাধারণত ওভুলেশন ঠিকমতো হয় না। তাই ওভুলেশন ঠিকমতো হলে বাচ্চা হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে।
তবে স্ত্রীর পিসিওএস ছাড়া অন্য কোনো সমস্যা না থাকলে স্বামীর শুক্রাণু স্বাভাবিক থাকতে হবে এবং স্বামী-স্ত্রীর সহবাসে কোনো সমস্যা থাকা যাবে না। ওভুলেশনের জন্য নানা রকম চিকিৎসা দেওয়া যায়। ওষুধ ও ইনজেকশন প্রয়োজনে দুটিই লাগতে পারে। ওভুলেশন ঠিকভাবে হচ্ছে কি না তা নানা মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে। ওভুলেশন ঠিকভাবে হওয়ার নির্দিষ্ট সময় পরও যদি প্রেগন্যান্সি না হয় বা ওষুধ (একটা মাত্রা পর্যন্ত) প্রয়োগের পর ওভুলেশন ঠিকভাবে না হলে সার্জারি (ল্যাপারোস্কোপি) প্রয়োজন হতে পারে। অভিজ্ঞ গাইনোকোলজিস্ট বা ফার্টিলিটি বিশেষজ্ঞ এ ব্যাপারে পূর্ণ সহযোগিতা করতে পারবেন। পিসিওএস নিয়ে এত অল্প পরিসরে লেখা সম্ভব না। তারপরও কিছু ধারণা দেওয়ার জন্য এই তথ্যগুলো জানালাম। মাসিক অনিয়মিত হলে অথবা পিসিওএস আছে জানার পর এটাকে ওভারিয়ান সিস্ট বা ভয়ংকর কিছু না মনে করে গাইনি ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
লেখিকা : গাইনি বিশেষজ্ঞ ও কনসালট্যান্ট, আইসিআরসি,
হুমায়ুন রোড, মোহাম্মদপুর, ঢাকা
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইছ উদ্দীন বলেছেন, ছাত্রদল নেতা ও পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী জোবায়েদ হোসাইন হত্যাকাণ্ডে প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে—কেউ যেন আইনের ফাঁক দিয়ে কেউ বেরিয়ে না যায়।
২ মিনিট আগেঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী রিয়াদ হাসানের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বোরকা ও পর্দাশীল নারীদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করার অভিযোগ উঠেছে। এই মন্তব্যের নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রীসংস্থা।
৪২ মিনিট আগেসমাবেশে জোবায়েদের সহপাঠী সজল খান বলেন, “পুলিশ এখনো বর্ষার পরিবারের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করেনি। শুধু বর্ষা ও মাহির নয়, এই ঘটনায় বর্ষার পরিবারও জড়িত। গতকাল আদালতে আমাদের সঙ্গে পুলিশের আচরণ ছিল অমানবিক। আমাদের এক বান্ধবী ভিডিও করতে গেলে তার ফোন কেড়ে নেওয়া হয়। আমরা পুলিশের এই আচরণের তীব্র নিন্দা জানাই।”
১ ঘণ্টা আগেসামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ আইনের মামলায় বুয়েটের ২১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী শ্রীশান্ত রায়কে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে মামলার তদন্ত কর্মকর্তার উপস্থিতিতে জামিনের বিষয়ে অধিকতর শুনানির জন্য আগামীকাল বৃহস্পতিবার দিন ধার্য করেন বিচার
১ ঘণ্টা আগে