অধ্যাপক ড. শেখ নাজমুল হুদা
বাংলাদেশের হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোয় সিজারিয়ান সেকশনের মাধ্যমে সন্তান জন্মদানের হার একটা বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। সরকারি ও বেসরকারি ক্লিনিক মিলে প্রাতিষ্ঠানিক সিজারিয়ান অপারেশনের হার এখন ৮০ শতাংশের ওপরে। সরকারি হাসপাতালে কিছুটা কম, যা ৭০ শতাংশের মতো এবং বেসরকারি ক্লিনিকে এই হার ৯০ শতাংশের ওপরে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের কোনো তত্ত্বে এই উচ্চহার ব্যাখ্যা করার সুযোগ নেই।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ১০-১৫ শতাংশ গর্ভবতীর সিজারিয়ান সেকশনের প্রয়োজন হতে পারে। এর বেশি যে সিজারিয়ান সেকশন হচ্ছে, তা অপ্রয়োজনীয়। আর এই অপ্রয়োজনীয় সিজারিয়ান সেকশন অপারেশন মায়েদের এবং নবজাতকের মৃত্যুহার বাড়ায়। বাড়ায় দীর্ঘ মেয়াদে নানা শারীরিক সমস্যার ঝুঁকি। এর ফলে মা ও শিশুর পরবর্তী জীবনমান নানাভাবে প্রভাবিত হতে পারে। নারী শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের চমৎকার অগ্রগতির পরও মাতৃমৃত্যু রোধে সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থতা ও নবজাতক এবং শিশু স্বাস্থ্য সূচকে বাংলাদেশের বর্তমান স্থবিরতার একটা ব্যাখ্যা হচ্ছে সিজারিয়ান সেকশনের অতি উচ্চহার। দেশে বর্তমানে প্রতিবছর ১২ থেকে ১৩ লাখ সিজারিয়ান অপারেশন হচ্ছে। অনুমান করা যায়, এর মধ্যে অন্তত ১০ লাখ অপারেশন হচ্ছে বিনা প্রয়োজনে। প্রশ্ন হতে পারে, সিজারিয়ান সেকশন অপারেশনের এই অতি উচ্চহারের কারণ কী? এ বিষয়ে সামান্য আলোকপাত করে কয়েকটি সম্ভাব্য সমাধানের সূত্র আলোচনা করব।
বিখ্যাত চিকিৎসাবিজ্ঞান সাময়িকী ল্যানসেট সিজারিয়ান সেকশন বিষয়ে একাধিক তাৎপর্যপূর্ণ বৈজ্ঞানিক আলোচনা প্রকাশ করেছে। উপাত্ত ও গবেষণা নিরিখে উৎসাহী পাঠক আগ্রহ থাকলে ল্যানসেটের সিজারিয়ান সিরিজটি দেখে নিতে পারেন। ব্যক্তি গর্ভবতীর ক্ষেত্রে সিজারিয়ানের কারণ হিসেবে অনেক সময় বলা হয় গর্ভের সন্তান কষ্টে আছে (Foetal distress), জরায়ুতে যথেষ্ট পানি নেই, জরায়ুর নিচের দিকে গর্ভফুল, পূর্ববর্তী বাচ্চা সিজার ইত্যাদি। এসব কারণে অল্পসংখ্যক ক্ষেত্রে সিজার অপারেশনের প্রয়োজন হতে পারে। বাংলাদেশে যে হারে সিজার হচ্ছে, সেটিকে এসব কারণ দেখিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না। কোনো কোনো সিজারিয়ান অপারেশনের গ্রাহক (আমি রোগী বলব না, কারণ গর্ভধারণ কোনো রোগ নয়, সন্তান প্রসব কোনো অস্বাভাবিক কাজ নয়) মনে করে থাকেন অর্থ উপার্জনের জন্য চিকিৎসকরা অধিকতর হারে সিজার করেন। এই ধারণা কতটা সঠিক, সেটি আমি জানি না।
‘গর্ভবতীর অনুরোধে সিজার’ বর্তমানে একটি বহুল প্রচলিত সিজারের অজুহাত। এ কথা সত্য, অনেক চিকিৎসক এবং বাংলাদেশে মাতৃত্ব সেবার পরিবেশ অনেক গর্ভবতী ও তার পরিবারকে এই ধারণা দিতে পারে, সিজারিয়ান অপারেশন স্বাভাবিক প্রসবের তুলনায় সব ক্ষেত্রে অধিকতর নিরাপদ। কথাটি ভুল, তবে হতে পারে কোনো গর্ভবতীর ব্যক্তিগত ধারণা। এই ধারণার ভিত্তিতে সিজারের হার ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ হতে পারে না। ঢাকার বাইরে একটা হাসপাতালের কথা বলি, যেখানে সিজারের হার ৮৫ শতাংশ। ডাক্তার বললেন মায়েরা চাইছেন; কিন্তু তার পাশের হাসপাতালে সেই হার ২০ শতাংশ, সেটি কীভাবে সম্ভব?
বিনা প্রয়োজনে সিজারিয়ান সেকশনের উচ্চহারের পেছনে স্বাস্থ্যসেবা পদ্ধতি (Health System Related) সম্পর্কিত বিষয়গুলো খুব বড় নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে। সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকার এবং দেশের হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোকে যথাযথ নিয়ন্ত্রণ, পেশাজীবীদের মধ্যে শৃঙ্খলা ফেরানো এবং মিডওয়াইফারি পেশাচর্চার উপযুক্ত সুযোগ সৃষ্টি হলেই শুধু সিজারিয়ান সেকশনের এই উচ্চহার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হতে পারে। বর্ষা বিপ্লবের পর বাংলাদেশের নেতৃত্ব কীভাবে সিজারিয়ান মহামারি ও তার ফলে লাখ লাখ নারীর স্বাস্থ্যঝুঁকি প্রতিকারের ব্যবস্থা করে, তা দেখার অপেক্ষায় দেশবাসী।
লেখক : চেয়ারম্যান, জনস্বাস্থ্য বিজ্ঞান বিভাগ
ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি
বাংলাদেশের হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোয় সিজারিয়ান সেকশনের মাধ্যমে সন্তান জন্মদানের হার একটা বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। সরকারি ও বেসরকারি ক্লিনিক মিলে প্রাতিষ্ঠানিক সিজারিয়ান অপারেশনের হার এখন ৮০ শতাংশের ওপরে। সরকারি হাসপাতালে কিছুটা কম, যা ৭০ শতাংশের মতো এবং বেসরকারি ক্লিনিকে এই হার ৯০ শতাংশের ওপরে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের কোনো তত্ত্বে এই উচ্চহার ব্যাখ্যা করার সুযোগ নেই।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ১০-১৫ শতাংশ গর্ভবতীর সিজারিয়ান সেকশনের প্রয়োজন হতে পারে। এর বেশি যে সিজারিয়ান সেকশন হচ্ছে, তা অপ্রয়োজনীয়। আর এই অপ্রয়োজনীয় সিজারিয়ান সেকশন অপারেশন মায়েদের এবং নবজাতকের মৃত্যুহার বাড়ায়। বাড়ায় দীর্ঘ মেয়াদে নানা শারীরিক সমস্যার ঝুঁকি। এর ফলে মা ও শিশুর পরবর্তী জীবনমান নানাভাবে প্রভাবিত হতে পারে। নারী শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের চমৎকার অগ্রগতির পরও মাতৃমৃত্যু রোধে সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থতা ও নবজাতক এবং শিশু স্বাস্থ্য সূচকে বাংলাদেশের বর্তমান স্থবিরতার একটা ব্যাখ্যা হচ্ছে সিজারিয়ান সেকশনের অতি উচ্চহার। দেশে বর্তমানে প্রতিবছর ১২ থেকে ১৩ লাখ সিজারিয়ান অপারেশন হচ্ছে। অনুমান করা যায়, এর মধ্যে অন্তত ১০ লাখ অপারেশন হচ্ছে বিনা প্রয়োজনে। প্রশ্ন হতে পারে, সিজারিয়ান সেকশন অপারেশনের এই অতি উচ্চহারের কারণ কী? এ বিষয়ে সামান্য আলোকপাত করে কয়েকটি সম্ভাব্য সমাধানের সূত্র আলোচনা করব।
বিখ্যাত চিকিৎসাবিজ্ঞান সাময়িকী ল্যানসেট সিজারিয়ান সেকশন বিষয়ে একাধিক তাৎপর্যপূর্ণ বৈজ্ঞানিক আলোচনা প্রকাশ করেছে। উপাত্ত ও গবেষণা নিরিখে উৎসাহী পাঠক আগ্রহ থাকলে ল্যানসেটের সিজারিয়ান সিরিজটি দেখে নিতে পারেন। ব্যক্তি গর্ভবতীর ক্ষেত্রে সিজারিয়ানের কারণ হিসেবে অনেক সময় বলা হয় গর্ভের সন্তান কষ্টে আছে (Foetal distress), জরায়ুতে যথেষ্ট পানি নেই, জরায়ুর নিচের দিকে গর্ভফুল, পূর্ববর্তী বাচ্চা সিজার ইত্যাদি। এসব কারণে অল্পসংখ্যক ক্ষেত্রে সিজার অপারেশনের প্রয়োজন হতে পারে। বাংলাদেশে যে হারে সিজার হচ্ছে, সেটিকে এসব কারণ দেখিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না। কোনো কোনো সিজারিয়ান অপারেশনের গ্রাহক (আমি রোগী বলব না, কারণ গর্ভধারণ কোনো রোগ নয়, সন্তান প্রসব কোনো অস্বাভাবিক কাজ নয়) মনে করে থাকেন অর্থ উপার্জনের জন্য চিকিৎসকরা অধিকতর হারে সিজার করেন। এই ধারণা কতটা সঠিক, সেটি আমি জানি না।
‘গর্ভবতীর অনুরোধে সিজার’ বর্তমানে একটি বহুল প্রচলিত সিজারের অজুহাত। এ কথা সত্য, অনেক চিকিৎসক এবং বাংলাদেশে মাতৃত্ব সেবার পরিবেশ অনেক গর্ভবতী ও তার পরিবারকে এই ধারণা দিতে পারে, সিজারিয়ান অপারেশন স্বাভাবিক প্রসবের তুলনায় সব ক্ষেত্রে অধিকতর নিরাপদ। কথাটি ভুল, তবে হতে পারে কোনো গর্ভবতীর ব্যক্তিগত ধারণা। এই ধারণার ভিত্তিতে সিজারের হার ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ হতে পারে না। ঢাকার বাইরে একটা হাসপাতালের কথা বলি, যেখানে সিজারের হার ৮৫ শতাংশ। ডাক্তার বললেন মায়েরা চাইছেন; কিন্তু তার পাশের হাসপাতালে সেই হার ২০ শতাংশ, সেটি কীভাবে সম্ভব?
বিনা প্রয়োজনে সিজারিয়ান সেকশনের উচ্চহারের পেছনে স্বাস্থ্যসেবা পদ্ধতি (Health System Related) সম্পর্কিত বিষয়গুলো খুব বড় নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে। সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকার এবং দেশের হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোকে যথাযথ নিয়ন্ত্রণ, পেশাজীবীদের মধ্যে শৃঙ্খলা ফেরানো এবং মিডওয়াইফারি পেশাচর্চার উপযুক্ত সুযোগ সৃষ্টি হলেই শুধু সিজারিয়ান সেকশনের এই উচ্চহার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হতে পারে। বর্ষা বিপ্লবের পর বাংলাদেশের নেতৃত্ব কীভাবে সিজারিয়ান মহামারি ও তার ফলে লাখ লাখ নারীর স্বাস্থ্যঝুঁকি প্রতিকারের ব্যবস্থা করে, তা দেখার অপেক্ষায় দেশবাসী।
লেখক : চেয়ারম্যান, জনস্বাস্থ্য বিজ্ঞান বিভাগ
ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা জোবায়েদ হোসাইন হত্যাকাণ্ডের পর স্থগিত হওয়া বিশ্ববিদ্যালয় দিবস আগামী ২৭ অক্টোবর পালিত হবে। বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. রেজাউল করিম।
৪ ঘণ্টা আগে১৮৪৬ সালের ১৬ অক্টোবর চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী দিন। বোস্টনের ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতালে প্রথমবারের মতো এক রোগীর শরীরে ব্যথাহীন অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়। দাঁতের চিকিৎসক ডা. উইলিয়াম মর্টন রোগী গিলবার্ট অ্যাবটের মুখে ইথার গ্যাস শ্বাসের মাধ্যমে প্রয়োগ করেন। কয়েক মিনিটের মধ্যেই রোগী
৪ ঘণ্টা আগেকরোনা ভ্যাকসিনের দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা নিয়ে বাংলাদেশের মানুষদের মধ্যে রয়েছে নানা ভুল ধারণা এবং অন্ধবিশ্বাস। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে স্ক্যাবিসসহ কিছু সংক্রামক চর্মরোগ মহামারির আকার ধারণ করেছে। বেশির ভাগ মানুষ বিশ্বাস করে, করোনা ভ্যাকসিন গ্রহণ করার ফলে তাদের বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ হচ্ছে। আবার
৪ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ। আবহাওয়া পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন রোগবালাই আবির্ভাব হয়। বাংলাদেশে হেমন্তকালের শেষের দিকে শীতকাল খুব কাছাকাছি চলে আসে। ঋতু পরিবর্তনের এ সময় তাপমাত্রার ওঠানামা ও শুষ্ক বাতাসের কারণে সর্দি-কাশি, জ্বরসহ অন্যান্য রোগব্যাধি দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। শিশুদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা
৫ ঘণ্টা আগে