প্রযুক্তি বিশ্বে সাম্প্রতিক সময়ে যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি আলোচনায়, তা হলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই)। তবে এআইয়ের বিস্তৃত জগতের ভেতরে বর্তমানে যে প্রবণতাটি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে, তা হলো জেনারেটিভ এআই বা জেন-এআই। এই প্রযুক্তি শুধু তথ্যবিশ্লেষণেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং মানুষের মতো সৃজনশীল কনটেন্ট তৈরি করার সক্ষমতার মাধ্যমে প্রযুক্তি খাতে এক নতুন যুগের সূচনা করেছে।
দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহৃত হয়ে আসছে মূলত বিশ্লেষণী কাজে। বিশাল ডেটা সেট বিশ্লেষণ করে কোনো নির্দিষ্ট ধারা চিহ্নিত করা, ভবিষ্যৎ প্রবণতা অনুমান করা কিংবা স্বয়ংক্রিয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করাই ছিল এর প্রধান উদ্দেশ্য। ব্যাংকিং, স্বাস্থ্য, গবেষণা কিংবা ব্যবসায়িক বিশ্লেষণে এ ধরনের এআই উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে।
তবে প্রযুক্তির অগ্রগতির ধারাবাহিকতায় এআইয়ের সক্ষমতা এখন আর শুধু বিশ্লেষণের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এই পরিবর্তনের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে জেনারেটিভ এআই। এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এমন একটি রূপ, যা নতুন কিছু তৈরি করতে পারে। হোক তা লেখা, ছবি, ভিডিও, অডিও কিংবা ডিজাইন। মানুষের সৃজনশীল চিন্তা ও কল্পনার ধরনকে অনুকরণ করার ক্ষমতার কারণেই এই প্রযুক্তি দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করছে।
জিপিটি (Generative Pre-trained Transformer) ও মাল্টিমোডাল সিস্টেমের মতো আধুনিক জেনারেটিভ মডেলগুলো কনটেন্ট তৈরির প্রক্রিয়াকে সহজ এবং দ্রুত করে তুলেছে। সংবাদ লেখা, বিপণন কনটেন্ট, গ্রাফিক ডিজাইন কিংবা ভিডিও প্রোডাকশন—সব ক্ষেত্রেই এই প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। একই সঙ্গে ইন্টারঅ্যাকটিভ ডিজিটাল অভিজ্ঞতা তৈরিতে জেনারেটিভ এআই নতুন নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, জেনারেটিভ এআই উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর পাশাপাশি সমস্যা সমাধানে কার্যকর ভূমিকা রাখছে। গ্রাহকের সঙ্গে যোগাযোগ উন্নত করা, ব্যক্তিগতকৃত সেবা দেওয়া কিংবা সৃজনশীল কাজে সময় ও খরচ কমানো—প্রায় সবখানেই এই প্রযুক্তির প্রভাব স্পষ্ট। ফলে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কর্মক্ষেত্রে জেনারেটিভ এআই যুক্ত করার উদ্যোগ আরো বিস্তৃত করছে।
তবে সম্ভাবনার পাশাপাশি কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। তথ্যের সঠিকতা, নৈতিক ব্যবহার এবং কর্মক্ষেত্রে মানুষের ভূমিকার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা ও সচেতনতা জরুরি। তবু এটুকু নিশ্চিতভাবে বলা যায়, জেনারেটিভ এআই শুধু একটি সাময়িক ট্রেন্ড নয়; বরং ভবিষ্যতের প্রযুক্তি ব্যবস্থার অন্যতম প্রধান ভিত্তি হয়ে উঠছে।
সবমিলিয়ে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এই নতুন অধ্যায় প্রযুক্তি জগৎকে আরো গতিশীল ও সৃজনশীল করে তুলছে। প্রযুক্তি বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মানুষের চিন্তা ও প্রযুক্তির মেলবন্ধনে গড়ে ওঠা এই জেনারেটিভ এআই আগামী দিনে আমাদের কাজ, জীবনযাপন ও যোগাযোগের ধরনকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করবে।
আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

