ই-কমার্সের জন্মকথা

জুবাইর আল হাদী
প্রকাশ : ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ১৬: ৫৬

বর্তমান সময়ে চাল, ডাল, কিংবা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসও অনলাইনে কেনা সম্ভব, তা এখন অনেকেই জানেন। আজকাল অধিকাংশ মানুষ অনলাইনের মাধ্যমেই কাঁচাবাজার করছেন, প্রয়োজনীয় ওষুধ সংগ্রহ করছেন। ঘর সাজানোর সামগ্রী থেকে শুরু করে পোশাক কিংবা ইলেকট্রনিকস—সবই মিলছে এক ক্লিকে।

এমনকি যারা দীর্ঘদিন ধরে গরুর হাটে গিয়ে শিং দেখে, দাঁত পরীক্ষা করে কিংবা গরুর গুঁতো খেয়ে কোরবানির গরু কেনার অভিজ্ঞতায় অভ্যস্ত ছিলেন, তাদেরও অনেকেই এখন খামারের গরু অনলাইনে দেখে পছন্দ করছেন ঘরে বসেই।

বিজ্ঞাপন

মানুষের এই নতুন অভ্যাস প্রতিনিয়তই অনলাইনের দিকে ঝুঁকছে। একই সঙ্গে নির্ভরশীল করে তুলছে। কেনাকাটা আর লেনদেনের যে সহজতা তৈরি হয়েছে, তা আসলে ই-কমার্স বিপ্লবেরই ফল। এখনকার ব্যবসায়ী চাইলে নিজের দোকান বা শপিং মল থাকলেও অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমেই গ্রাহকের হাতে পণ্য পৌঁছে দিচ্ছেন। এবার চলুন, যেকোনো পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের কাজটিকে যে ই-কমার্স বা ইলেকট্রনিক কমার্স সহজ করে দিল, তার ইতিহাস সম্পর্কে জেনে আসি।

জজজজ

আজকের দিনের ই-কমার্সকে আমরা সম্পূর্ণ ইন্টারনেটনির্ভর ব্যবসা হিসেবে জানলেও, এর যাত্রা শুরু হয়েছিল ইন্টারনেট আসার বহু আগে। গত শতাব্দীর ষাটের দশকে (১৯৬০ সালে) চালু হয় EDI বা ইলেকট্রনিক ডেটা ইন্টারচেঞ্জ সিস্টেম। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রথমবারের মতো ব্যবসায়িক তথ্য একটি নির্দিষ্ট ইলেকট্রনিক ফরম্যাটে সংরক্ষণ ও বিনিময়ের সুযোগ তৈরি হয়। মূলত সেখান থেকেই ই-কমার্সের কাঠামোগত ভিত গড়ে ওঠে। সে সময় ব্যবসা পরিচালনার প্রক্রিয়ায় ফোনে অর্ডার গ্রহণ এবং ডাকযোগে পণ্য সরবরাহের প্রচলন ছিল।

ঙেঙঙঙ

পরে ১৯৭৯ সালে ইংল্যান্ডের সাসেক্সে মাইকেল অল্ডরিচ অনলাইন শপিং পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। এর মাধ্যমে ক্রেতা ঘরে বসেই যেকোনো পণ্য পছন্দ ও কিনতে এবং একই সঙ্গে ঘরে বসেই ওই ক্রয়কৃত পণ্যের মূল্য পরিশোধ করতে সক্ষম হন। ফলে ক্রেতাকে শারীরিকভাবে যাতায়াতের পরিশ্রম করতে হতো না। তাছাড়া অর্থ পরিবহনে অনিরাপদ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হতো না। তবে ইন্টারনেটের ব্যাপক ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত ই-কমার্সের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৯০ থেকে ২০০০ সালে এর ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটে।

বিশেষ করে ১৯৯৪ সালে amazon.com এবং ১৯৯৫ e-bay.com ই-কমার্স ওয়েবসাইটের যাত্রা শুরুর মাধ্যমে ই-কমার্সের এক নতুন অধ্যায় শুরু হয়। ২০১০ সালের পরে মোবাইলের ব্যাপক প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে ই-কমার্সের নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো (বিশেষ করে ফেসবুক) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফলে ২০১৩ সালে ১ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য ই-কমার্সের মাধ্যমে ক্রয়-বিক্রয় হয়, যার ৩৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মোবাইলের মাধ্যমে আমেরিকার বাজারে কেনাবেচা হয়েছিল।

এছাড়া অনলাইন ট্রানজেকশন প্রসেসিং ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার চালুর ফলে অর্থ লেনদেনের কিছু কিছু ক্ষেত্রে ই-কমার্সের ওপর লোকজন অনেকটাই নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। ঘরে বসেই পণ্য ক্রয়-বিক্রয়, নিরাপদে তার মূল্য পরিশোধ করার সুবিধা এবং পণ্য বিপণন ও ক্রয়-বিক্রয়ের কাজটি সহজ হওয়ার কারণে আজকাল ঘরে বসে ই-কমার্স বা অনলাইন শপিংয়ের মাধ্যমে কেনাকাটা অধিকতর সুবিধাজনক হয়ে উঠেছে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত