ডিএসএলআরকে ছাড়িয়ে মিররলেসের উত্থান

জুবাইর আল হাদী
প্রকাশ : ২৭ অক্টোবর ২০২৫, ১৭: ৪৮
আপডেট : ২৭ অক্টোবর ২০২৫, ১৭: ৫২

ফটোগ্রাফি বর্তমানে আমাদের দেশের একটি অন্যতম সম্ভাবনাময় বিষয় হয়ে উঠেছে। এ বিষয়ে হয়তো কারো দ্বিমত নেই, থাকার কথাও না। কারণ বাংলাদেশের যে অতুলনীয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আছে, তা হয়তো হাজার হাজার ছবি তুলেও ফ্রেমে বন্দি করে রাখা যাবে না।

একসময় পেশাদার কিংবা শৌখিন আলোকচিত্রীদের হাতে হাতে DSLR (ডিজিটাল সিঙ্গেল-লেন্স রিফ্লেক্স) ক্যামেরা থাকলেও এখন সবার হাতে দেখা যাচ্ছে মিররলেস ক্যামেরা। কী এমন আছে মিররলেস ক্যামেরায়, যা তাকে এই যুগের ফটোগ্রাফির নতুন রাজা বানিয়েছে? অন্যদিকে কেনই বা ক্যানন, নিকন, সনিসহ বড় কোম্পানিগুলো ডিএসএলআর ক্যামেরা তৈরি বন্ধ করে মিররলেস বানাচ্ছে?

বিজ্ঞাপন

প্রযুক্তির অগ্রগতি

ডিএসএলআর ক্যামেরার মূল ভিত্তি ছিল তার ‘মিরর’ বা আয়না ব্যবস্থা। লেন্স দিয়ে আসা আলো প্রথমে আয়নায় প্রতিফলিত হয়ে পৌঁছাত ভিউফাইন্ডারে। ফলে ফটোগ্রাফার বাস্তব দৃশ্যটাই দেখতে পেতেন। সেই সঙ্গে DSLR ক্যামেরার ওজনটাও ছিল মিররলেস ক্যামেরার চেয়ে বেশি। মিররলেস ক্যামেরা এই পুরো ব্যবস্থাটিই সরিয়ে দিয়েছে। এখন লেন্স দিয়ে আসা আলো সরাসরি সেন্সরে পড়ে এবং সেই সেন্সরের ডিজিটাল ইমেজই দেখা যায় ইলেকট্রনিক ভিউফাইন্ডার বা স্ক্রিনে। ক্যামেরা হালকা হওয়ায় যাতায়াত এবং ছবি তোলার ক্ষেত্রেও সুবিধা হয়। এ জন্যই মিররলেস ক্যামেরার বডি অনেক ছোট ও হালকা। সেই সঙ্গে কাজ করে দ্রুতগতিতে। ধারণা করা হয়, এসব সুবিধার কারণেই মিররলেস ক্যামেরাকে করেছে আজকের যুগের জনপ্রিয়।

আরো কিছু পার্থক্য

ডিএসএলআরের সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতা ছিল ‘শাটার ডিলে’ ও ‘লাইভ ভিউ’ সমস্যায়। মিরর ওঠানামার সময় সামান্য বিলম্ব হতো, যা দ্রুতগতির স্পোর্টস বা বন্যপ্রাণীর ছবি তুলতে বাধা দিত। মিররলেস এই যান্ত্রিক সীমাবদ্ধতাগুলো দূর করেছে সম্পূর্ণভাবে। প্রফেশনাল ডিএসএলআর ক্যামেরায় স্পোর্টস মোডে সেকেন্ডে ১৪টি ছবি ওঠাতে পারে। অন্যদিকে প্রফেশনাল মিররলেস ক্যামেরায় স্পোর্টস মোডে সেকেন্ডে ৬০টি ছবি ওঠাতে পারে কোনো শব্দ বা কম্পন ছাড়াই। সঙ্গে এসেছে অটোফোকাসের—‘আই ট্র্যাকিং’ বা ‘সাবজেক্ট ট্র্যাকিং’-এর মতো ফিচার এখন মুহূর্তেই চোখ চিনে নেয়, নড়ে ওঠা বিষয়বস্তুকেও নিখুঁতভাবে ফোকাসে রাখে।

ভিডিওর ক্ষেত্রে মিররলেস

বর্তমান সময়ে ‘কনটেন্ট যুগে’ ভিডিও এক বিশাল ক্ষেত্র। ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম কিংবা ফেসবুকে রিলস—সবখানে হাই-কোয়ালিটি ভিডিওর চাহিদা বেড়েছে ব্যাপকভাবে। মিররলেস ক্যামেরা এখানেও ডিএসএলআরকে ছাড়িয়ে গেছে। ফুল-ফ্রেম সেন্সর, ৪কে বা ৮কে ভিডিও, উন্নত কালার সায়েন্স; সব মিলিয়ে ভিডিওগ্রাফির জন্যও এখন মিররলেস গ্রাহকদের প্রথম পছন্দ।

কোম্পানিগুলোর কৌশল

ক্যানন ও নিকনের মতো কোম্পানিগুলো এখন প্রায় সম্পূর্ণভাবে মিররলেসে ফোকাস করছে। কারণ তারা জানে, ধীরে ধীরে প্রযুক্তির অগ্রগতিই হবে, অবনতি নয়। তাই নতুন আর-সিরিজ বা জেড-সিরিজের লেন্সগুলো মিররলেসের জন্যই তৈরি হচ্ছে। ফলে ভবিষ্যতের আপগ্রেড, সফটওয়্যার সাপোর্ট, এমনকি আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতিও এই নতুন প্রযুক্তিকেই কেন্দ্র করে গড়ে উঠছে।

ডিএসএলআর কি হারিয়েই যাবে?

যদিও নতুন ডিএসএলআর তৈরি কমে গেছে, কিন্তু এই ক্যামেরাগুলোর ব্যবহার এখনো শেষ হয়ে যায়নি। অনেক পেশাদার ফটোগ্রাফার এখনো নির্ভর করেন ডিএসএলআরের ওপর। আপনার জন্য ব্যাটারি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলে DSLR ক্যামেরা নির্বাচন করুন। কেননা এ ক্যামেরায় লম্বা সময় ধরে চার্জ থাকে। সাধারণত MIRRORLESS ক্যামেরায় ব্যাটারির সাইজ ছোট হয়ে থাকে। প্রযুক্তি কখনো থেমে থাকে না। যেমন অ্যানালগ থেকে ডিজিটালে এসেছিল এক যুগান্তকারী রূপান্তর, তেমনি এখন চলছে মিররলেস উত্থান। ডিএসএলআরের ভারী বডিকে পেছনে ফেলে মিররলেসের হালকা শরীরে আজ ধরা দিচ্ছে ফটোগ্রাফির দুনিয়া।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত