আমার দেশ জনপ্রিয় বাংলা নিউজ পেপার

নবী কবিতা

সাহিত্য ডেস্ক
নবী কবিতা

মহাপৃথিবীমানব

আল মুজাহিদী

বিজ্ঞাপন

জিব্রিল এলেন।

তুমিই প্রথম উচ্চারণ করলে, ‘পাঠ করো তোমার প্রভুর নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন।’

আর আমরা অমনি পাঠ করতে শুরু করলাম। পাঠ করলাম

পৃথিবীকে। পৃথিবীমণ্ডলকে। পাঠ করলাম নীলিমা নক্ষত্র।

নীহারিকা, নীহারিকাপুঞ্জ। গোটা সৌরবলয়কে। পাঠ করলাম

সমুদ্র, আগুন, বাতাস, মৃত্তিকা এবং জলজ নিচয়কে। আমি পাঠ করলাম

মানব ও মানবীকে। মানবমণ্ডলীকে। আমি পাঠ করলাম আমারই

প্রভুর ভাষায়। আমি তোমাকেও পাঠ করি সে ভাষায়...

‘কোনো মানুষ-ই কোনো মানুষের ক্রীতদাস নয়’—তুমিই প্রথম বললে।

‘কেউ কারোরই আজ্ঞাবহ নয়—একমাত্র আমাদের প্রভুর ছাড়া।’

 মানুষ তো মানুষের জ্ঞাতি।

তুমি অন্ধকার ছিঁড়ে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করলে কেবল আলোর জন্যে।

পৃথিবীতে আলো এলো। আলোকে একাত্ম করে দিলে

জীবনের সোনালি তোরণে। আর তুমি মানুষের জন্যে উচ্চারণ করলে—

রুটি ও গোলাপের অঙ্গীকার। মানুষও তার শ্রমের শরীরে খুঁজে পেল

দুর্লভ ঐশ্বর্য। পৃথিবীবাসীর পেশিবন্ত হাত ভালোবাসা পেল। কোনো

নর-নারী মালিকের পণ্য ও পসরা হয়ে রইল না আর। এক শাশ্বত, সন্নিষ্ঠ

উচ্চারণে তুমি আলিঙ্গন করলে নারী, নিসর্গ এবং প্রতিটি মানুষকে।

এ পৃথিবী ও বস্তুর অস্তিত্ব কী? পৃথিবীর বাইরেই বা কী? তুমি

জানতে চাইলে। মানুষের চিন্তা ও শব্দ কী করে সম্পর্ক খোঁজে বস্তুর ভেতর?

মানব অস্তিত্ব? সে একই কথা তুমি ভাবলে। সচেতনতা ও

স্বাধীন সত্তার কথা। তোমার স্মৃতির অনুপম আলোকচ্ছটা

বিদীর্ণ করল অন্ধকার। সমগ্র তমসা।

তুমি জীবনের সত্তা ও সময়ের বিচলন ছন্দ খুঁজে পেয়েছিলে

তোমার নিজের জীবনের কাছেই। তুমি ক্রমশ

রচনা করলে ইতিহাসের জীবন্ত অভিধান; আর পৃথিবীর মুক্তির নিয়তি।

যে ডাইনিটা তোমার পথের মধ্যে পুঁতে রাখত কাঁটা—

তীব্র লেলিহানে সেই ডাইনির চোখ, মুখ, মাথার খুলি ও বিষাক্ত কলজে

দরদর করে গলে পড়ল। ওই মুহূর্তগুলো খুবই অভিশপ্ত

সভ্যতার জন্যে, আমাদের সময়ের জন্যে।

হে মহাপৃথিবীমানব

আমি তোমার হেরার পর্বতের ‘মহাবাণী’ কান পেতে শ্রবণ করছি।

আর অপেক্ষা করছি মানবজাতির মানবিক পৃথিবীর জন্যে।

মুহম্মদ সা.

জহির হাসান

আমরা উম্মত

তাঁর উটের পায়ের ধূলি যতক্ষণ!

আমরা উম্মত

অত্যাচারিতের বাজু হই যতক্ষণ!

আমরা উম্মত

কিয়ামতের রহস্য নিয়া চুপ রই যতক্ষণ!

আমরা উম্মত

হজরত আসি গভীর রাতে দরজায় ঠোকা দিলে

আবু বকরের অপেক্ষায় কণা হই যতক্ষণ!

আমরা উম্মত

খালাক্বাল ইনসানা মিন আলাক-চিন্তায়

কাঁপি উঠি যতক্ষণ!

আমরা উম্মত

ইব্রাহিমের আগুনের ফুলবাগানে

পাখি ডাকার অপেক্ষায় রই যতক্ষণ!

আমরা উম্মত

শূন্য হইতে একত্বে চির লটকি রই যতক্ষণ!

আমরা উম্মত

ঈমানের স্বাদ নিতে তারার মতো অস্থির যতক্ষণ!

আমরা উম্মত

তিনি যখন আমাদের কাল

আমরা তাঁর মুহূর্ত হই সাঁতার খেলাই যতক্ষণ!

রইলাম বেখবর

কার মহীমা কীর্তনে

অদৃশ্যে গোলাপ ফুটার শব্দ বাক লয়!

অমিয়তম

আবদুল হাই শিকদার

আমাদের চোখ ছিল আলোর জন্য পিপাসিত

আঁকুপাঁকু করে উঠেছিল কলজে

তখনই সূর্য আকাশে এলেন উঠে

আমরা মুগ্ধতার জন্য শরীর ছড়ানোর কথা ভাবতেই

আকাশে এলেন চাঁদ

প্রসন্নতার কথা বলতেই

ফুটলো বিচিত্র ফুল

আমরা ভালোবাসার পথে হাঁটতে হাঁটতে

শিশিরে ভিজিয়েছিলাম পা

আমাদের বিরামবিহীন সংগীত উপহার দিয়েছিল

হাজার হাজার পাখি

তারপর যখন মৃত্তিকার কথা এলো

অমনি সবুজ হয়ে উঠল পৃথিবী

আর তার তৃষ্ণা মেটাতে পর্বত থেকে নেমে এলেন পানি

সূর্যের উত্তাপে দাঁড়িয়ে

জোছনার স্নিগ্ধতায় ফুলের মতো

প্রাণভরে হাসতে চাইলাম আমরা

পাখির সংগীত আর মৃত্তিকার লাবণ্যে

উদ্ভাসিত হতে চাইল আত্মা

কিন্তু আনন্দ শুকিয়ে গেল

আর আমাদের দুচোখ থেকে

ঝরতে থাকল শিশিরের মতো অশ্রুবিন্দু

মানুষ কোথায় মানুষের উদ্ধার

অপেক্ষার প্রহর কাটে

মানুষ কোথায় মানুষ

মানুষ তোমার মানুষ কোথায় মানুষ

মানুষের আর্তনাদ স্পর্শ করে আকাশ

সেই সময়

হেরার গুহায় ঝলসে উঠল জ্যোতি

আকাশ, পৃথিবী, সমুদ্র, পর্বত, পাখি, ফুল, নক্ষত্র,

এবং মানুষের সামনে দাঁড়ালেন

একজন মানুষ

তাঁর শির পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতের চেয়ে উঁচু

তাঁর শরীরে নক্ষত্রের চাদর

আকাশের চেয়ে বড় সমুদ্রের চেয়ে গভীর

তাঁর কণ্ঠে অমিয়গীতি

বৃক্ষের সহিষ্ণুতা আর অন্তহীন প্রেম

তাঁর মহিমান্বিত হৃদয়

দাঁড়ালেন তিনি মানুষের মুখোমুখি

আকাশ বাতাস চন্দ্র সূর্য

সমুদ্র পর্বত এবং গভীর বনানি

পাখি ফুল ও মানুষ

কোরাসে ঝংকার দিয়ে উদ্বেলিত হলো

মুহম্মদ তিনি আহমদ

সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম

সেইদিন থেকে মানুষ আবার

সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ প্রাণীর আসনে সমাসীন

মানবসত্তা

জামালউদ্দিন বারী

ক্রোমোজমের ডায়েরিতে লেখা আছে

তোমার জন্মের ইতিহাস

তুমি ভুলে গেছ

ভুলেই যাওয়াই নিয়তি মানুষের।

তুমি ভুলে গেছ কোনো এক নিশুতি রজনীতে কিংবা কামার্ত প্রদোষে হঠাৎ ঝড় উঠেছিল মানব-মানবীর ধমনিতে

এরপর কোটি কোটি নিষিক্ত ভ্রূণ যেন অলিম্পিক অ্যাথলেট

একমাত্র বিজয়ী হয়ে তুমি বেড়ে ওঠো মাতৃজঠরে।

তুমি ভুলে গেছ আদমের কান্না, ইভের প্রলোভন

ইডেন থেকে বিতাড়িত হওয়ার ইতিহাস

কসমিক বিশ্বে তুমি ঈশ্বরের প্রতিনিধি

নবীদের উত্তরাধিকার।

ব্রহ্মাণ্ডের ভেতর আরেক ব্রহ্মাণ্ড তুমি

কুহক অন্ধকারে হারিয়েছ সবকিছু, ভুলেছ ইতিহাস

হারিয়েছ আলোকিত সত্তার আনন্দের পথ,

মুসা, ঈসা, শাক্যমুনি, রাসুল মুহাম্মদের উম্মত।

নফসের দাসত্বশৃঙ্খল ভেঙে এই নিঃশব্দ অন্ধকারে কুল-কুণ্ডলিনী মোরাকাবায় খুঁজে নাও হারানো আলোকের পথ, নতুন পৃথিবীর জন্য পুরোনো সমাচার।

আমাদের সম্মিলিত ধ্যান, শ্রমের ঘাম, রক্ত আর অমর শহীদের স্বপ্নে রচিত হবে নতুন পৃথিবীর বুনিয়াদ।

তুমি স্থিত হও

সমাধিস্থ হও আলোকিত মানুষ হও

অমর গ্রন্থ হও

আগামীর পৃথিবী

তোমাকেই পাঠ করবে মুক্তির অন্বেষায়।

সব জঞ্জাল সব অন্ধকার দূর করতে

তুমি প্রস্তুত হও পবিত্র হেরার আলোর সূর্যহাতে নবী মুহাম্মদের (সা.) কলেমার পতাকার সৈনিক।

তুমি প্রস্তুত হও

নতুন জমানার নকিব।

নবী মোহাম্মদ (সা.)

মো. সাখাওয়াৎ হোসেন

যুগে যুগে অন্ধকারে, যখন ছায়া বৃদ্ধি পেত

হৃদয় যা জানত তার দ্বারা শৃঙ্খলিত হতো—

একটি কণ্ঠস্বর উঠেছিল—শান্ত এবং সাহসী—

একটি সত্যের গল্প, চিরকাল বলার।

তিনি রেশমি সুতোয় পোশাক পরে হাঁটেননি—

কিন্তু সাধারণ পদচারণায় ধুলো বহন করতে পারেন;

তার কথা আগুন আবার বৃষ্টির মতো নরম—

অহংকার ভেদ এবং ব্যথা নরম করতে পারে।

সোনা বা পার্থিব শক্তি দ্বারা মুকুটযুক্ত নয়—

নীরব রাতে তারার মুকুটশোভিত—

তিনি পৃথিবীকে প্রশস্ত চোখ দিয়ে দেখেছিলেন—

দুঃখ, আশা, স্ফীত জোয়ার।

তিনি প্রেমের কথা বলেছিলেন যেখানে ঘৃণা বাস করে—

করুণার কথা যেখানে নিষ্ঠুররা পথ বন্ধ রাখে;

তিনি মন ও আত্মার শৃঙ্খল ভেঙে ফেলেন

এবং ছিন্নভিন্ন আত্মাকে পূর্ণ করে তোলেন।

তিনি নিষ্প্রোয়োজনে তরবারি তোলেননি, সাম্রাজ্য করেননি—

সিংহাসন খোদাই করা হয়নি—হয়নি রক্তপাত;

তবু রাজারা মাথা নত করবে এবং অত্যাচারীরা ভীত হবে—

সকলের কাছে যে সত্য পৌঁছেছে তার সামনে।

তিনি নম্রদের শিখিয়েছিলেন তাদের শক্তি আগুন—

তিনি হারিয়ে যাওয়াদের পবিত্র নাম দিয়েছিলেন

এবং সন্দেহ ও ভয়ের ঝড়ের মধ্য দিয়ে—

তার কণ্ঠস্বর ভোরের মতো দৃঢ় এবং স্পষ্টভাবে বেজে ওঠে।

এখনো বেঁচে থাকে; যদিও যুগ যুগ ধরে থাকে—

পাহাড়ের কাচে আটকে থাকা চাঁদের আলোর মতো;

সময় বা ধর্মের নয় এমন একজন নবী

যিনি আত্মাকে মনোযোগ দিতে শিখিয়েছিলেন।

তাই অন্ধকারে তার আলো ঘুরতে দিন—

যে নবী পৃথিবীকে আলোকিত করেছিলেন।

Google News Icon

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন