কাগমারী সাংস্কৃতিক সম্মেলন
আজাদ খান ভাসানী
‘নাকের বদলে নরুন পাইলাম টাক ডুমাডুম ডুম
আর জান দিয়ে জানোয়ার পাইলাম লাগল দেশে ধুম।
আমার ভিটেয় চড়ল ঘুঘু ডিম দিল তোমাকে
সেই আজব ডিমের আজব শিশু খাস দিল্লিতে থাকে।’
মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী আহূত ১৯৫৭ সালের কাগমারী সম্মেলনে সুনামগঞ্জের গণসংগীতশিল্পী শ্রীকান্ত দাস সলিল চৌধুরীর এই গানটি গেয়ে শ্রোতাদের মন জয় করেছিলেন। সম্মেলনে আরও গান গেয়েছিলেন—রমেশ শীল, তসের আলী, মোছলেম, রাম সিং, মজিদ মিয়া, সুখেন্দু চক্রবর্তী, আব্বাস উদ্দিন, বেদারুদ্দিন, সোহরাব হোসেন, আসদ্দর আলী, মফিজ আলি, শাহ আব্দুল করিম, রাখাল সেন, পরিমল দাশগুপ্ত প্রমুখ। এছাড়া লাঠি, তরবারি, রামদার খেলা, নৃত্য, কবিগান, যাত্রাপালা, নাটক, কুটিরশিল্পজাত পণ্য দ্রব্যের প্রদর্শনী ও গ্রামীণ মেলার আয়োজন ছিল সম্মেলনজুড়ে। সাংস্কৃতিক সম্মেলনের ভেতর দিয়ে মওলানা ভাসানী সামাজিক, জাতিগত ও শ্রেণি-নিপীড়নের বিরুদ্ধে কৃষক জনগণের পক্ষে পূর্ব বাংলার শিল্পীদের সংগটিত করতে চেয়েছিলেন। মওলানার ইচ্ছা অনুযায়ী বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকেও দাওয়াত পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ‘কবির শারীরিক অবস্থার কারণে ভ্রমণ করা সম্ভব নয়’ বলে অনুমতি দেননি।
ঐতিহাসিক এই সম্মেলনের অফিশিয়াল নাম ছিল ‘পাকিস্তান সাংস্কৃতিক সম্মেলন’। আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনের রাজনৈতিক ডামাডোলের মাঝে সাংস্কৃতিক সম্মেলনের এই অধ্যায়টি অনেকটা চাপা পড়ে গেছে। ফেব্রুয়ারির ৭ ও ৮ তারিখ আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হলেও ৮, ৯ ও ১০ তারিখ ছিল সাংস্কৃতিক সম্মেলন পর্ব। ৮ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৩টায় কাগমারী সাংস্কৃতিক সম্মেলনের মূল পর্বের উদ্বোধন করা হয়। তৎকালীন প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগ প্রধান হিসেবে নয়, বরং সম্পূর্ণভাবে ব্যক্তি উদ্যোগে নিজেকে ‘জনগণের নগণ্য খাদেম’ উল্লেখ করে তিনি এই আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন।
সেখানে ভাষা, শিক্ষা, শিল্প, সাহিত্য, অর্থনীতি, ভূমিব্যবস্থা, কৃষি, রাসায়নিক শিক্ষা, নারীসহ বিশদ বিষয় ছিল আলোচনার বিষয়বস্তু। বিষয়ভিত্তক বক্তৃতা করেছেন দেশ-বিদেশের প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব। যেমন ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ (পাকিস্তানের ভাষা), ড. কুদরাত-এ-খুদা (পূর্ব পাকিস্তানের রাসায়নিক শিল্পের ভবিষ্যৎ উন্নতি), ড. মাহমুদ হোসেন (অন দ্য কনসেপ্ট অব ইসলামিক কালচার), ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেব (পূর্ব পাকিস্তানে বৌদ্ধ ধর্মের প্রভাব), ড. আখলাকুর রহমান (থটস্ অন দ্য ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাসপেক্ট অব দ্য ডেভেলপমেন্ট অব এগ্রিকালচার), শওকত ওসমান (আধুনিক বাংলা সাহিত্য), ড. মুহাম্মদ ওসমান গনি (বিকল্প খাদ্য উৎপাদনের সম্ভাবনা ও পন্থা), আবদুল হাকিম (পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষাব্যবস্থা), অধ্যক্ষ ওসমান গনি (পাকিস্তানে শিক্ষার মাধ্যম), ড. নুরুল ইসলাম (পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়ন), বিএম আব্বাস (সেচ ব্যবস্থা ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ), ড. সামসুদ্দিন আহমদ (অন হার্ট ডিজেস), ডা. এমএন নন্দী (পূর্ব পাকিস্তানের স্বাস্থ্যব্যবস্থা উন্নয়নে মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের ভূমিকা), মিসেস কুলসুম হুদা (পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের সাংস্কৃতিক যোগাযোগ) প্রভৃতি। বিদেশিদের মধ্যে অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন মিশর থেকে ড. হাসান হাবাসী (অন ইবন আল আসকালানী), কানাডা থেকে ড. চার্লস জে. অ্যাডামস (অন ইকবাল), ব্রিটেন থেকে ড. এফ এইচ কওসন (অন দ্য কালচারাল লাইফ অব গ্রেট ব্রিটেন), মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডেভিট গার্থ (অন দ্য কালচারাল লাইফ অব ইউএসএ), জনৈক জাপানি প্রতিনিধি (অন দ্য কালচারাল লাইফ অব জাপান), পশ্চিম পাকিস্তানের পুস্ত একাডেমির চেয়ারম্যান মওলানা আব্দুল কাদের (অন পুস্ত লিটারেচার), মাদাম আজুরি (অন আর্ট অব ডান্স), ভারতের হুমায়ুন কবীর (ভারতের সংস্কৃতিক জীবন)।
এছাড়া ভারত থেকে অন্যদের মধ্যে আলোচনা করেন কাজী আবদুল ওদুদ, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, নরেন্দ্র দেব, প্রবোধকুমার সান্ন্যাল, রাধারানী দেবী ও মিসেস সোফিয়া ওয়াদিয়া। সভাপতি ছিলেন ড. কাজী মোতাহার হোসেন।
ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের তৎকালীন প্রায় সব বয়সের প্রগতিবাদী লেখক, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, নাট্যকার, সংগীতজ্ঞ, সাংবাদিকসহ দেশের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেছিলেন এই সম্মেলনে। সাধারণ মানুষ মিলিয়ে সম্মেলনে উপস্থিত হয়েছিলেন কয়েক লাখ মানুষ। এই সম্মেলন থেকেই তিনি বাংলাদেশের মানুষকে প্রত্যক্ষভাবে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ও স্বায়ত্তশাসনের রাজনৈতিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেছিলেন, দিয়েছিলেন নতুন এক স্বদেশ-ভাবনা।
কাগমারী সাংস্কৃতিক সম্মেলনের ডেকোরেশনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল শিল্পী শফিকুল আমিন, জয়নুল আবেদিন, কামরুল হাসান প্রমুখের ওপর। জয়নুল আবেদিনের স্মৃতিভাষ্য অনুযায়ী, ‘খাওয়ার ব্যবস্থা সেখানেই—খিচুড়ি, লাউ-বেগুন প্রভৃতি সবজির তরকারি ও ডাল। সবার জন্য একই খাদ্য। বিখ্যাতদের জন্য আলাদা কোনো ব্যবস্থা হয়নি। মওলানা চাইতেন দেশের দরিদ্র কৃষক শ্রমিক সাধারণ মানুষের সঙ্গে বিখ্যাত কবি, গায়ক, কণ্ঠশিল্পী, লেখক ও চিত্রশিল্পীদের যোগাযোগ ঘটুক।’
যাতায়াতের সুবিধার্থে ঢাকার পল্টন থেকে টাঙ্গাইলের কাগমারী পর্যন্ত তিন টাকা ভাড়ায় বিশেষ বাস সার্ভিস নামানো হয়েছিল। সঙ্গে বিছানা ও মশারি নিয়ে যাওয়া আবশ্যক ছিল।
সম্মেলন উপলক্ষে টাঙ্গাইল শহর থেকে সন্তোষের কাগমারী পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার রাস্তায় বহু তোরণ নির্মিত হয়েছিল। তোরণগুলোর নামকরণ করা হয়েছিল বিশ্বমানবতার মুক্তির দূত বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) থেকে শুরু করে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় এবং ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী নেতাদের নামে। যেমন হজরত মুহাম্মদ (সা.), শাহ নাসিরুদ্দিন বোগদাদী (রহ.), মাওলানা হাসরত মোহানী, মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী, মাওলানা আজাদ সোবহানী, মহাত্মা গান্ধী, মাওলানা মোহাম্মদ আলী, মাওলানা শওকত আলী, কাজী নজরুল ইসলাম, মহাকবি আল্লামা ইকবাল, নেতাজী সুভাস বোস, হাজী শরিয়তউল্লাহ, শহীদ তিতুমীর, পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু, হাজী মোহাম্মদ মহসীন, চিত্তরঞ্জন দাস, লেনিন, স্ট্যালিন, মাও সেতুং, ওয়ার্ডস ওয়ার্থ, বায়রন, শেলি, কিটস্, মাওলানা রুমী, হজরত ঈমাম আবু হানিফা (রহ.), হজরত ঈমাম গাজ্জালী (রহ.), আবুজর গিফারি (রহ.), আলফেসানি (রহ.) প্রভৃতি। এভাবে ১০১টি (অনেকের মতে ৫১টি) তোরণের নামকরণ করেছিলেন মওলানা ভাসানী। সর্বশেষ তোরণটি ছিল কায়েদ-ই-আযম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ তোরণ।
কাগমারী সম্মেলন মওলানা ভাসানীর সাংস্কৃতিক বৈপ্লবিক চিন্তাধারার এক উজ্জ্বল ও অনন্য উদাহরণ। এই সম্মেলনের কাউন্সিল পর্বে তিনি পাকিস্তানের শোষকগোষ্ঠীকে উদ্দেশ করে ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক পর্বে শিক্ষা সংস্কৃতির নতুন জাগরণ ও গঠনের সূচনা করেছিলেন। আমাদের নিজস্ব ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে বিশ্ববাসীকে পরিচয় করিয়ে দিতে টাঙ্গাইলের সন্তোষ ও কাগমারীতে আয়োজন করেছিলেন এক মহাযজ্ঞের। দেশি-বিদেশি ভদ্রলোকদের টেনে এনেছিলেন চিরায়ত গ্রামবাংলার নিভৃত এই পল্লিতে। আবহমান বাংলার মাটি, মানুষ, জলবায়ু, আবহাওয়া, ইতিহাস, ঐতিহ্য, কৃষ্টি, সভ্যতা ও সংস্কৃতির শেকড় কত গভীর ও সমৃদ্ধ, তাই তিনি উপলব্ধি করাতে চেয়েছেন সবাইকে। গ্রামের খেটে খাওয়া মেহনতি মানুষের ওপর থেকে শোষণের জগদ্দল পাথর সরাতে একত্র করেছিলেন কবি, সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তি, রাজনীতিকসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষের জাগ্রত কণ্ঠস্বরকে।
সাংস্কৃতিক সম্মেলনে তিনি ব্রাহ্মণ্যবাদী ও আধিপত্যবাদী সংস্কৃতির বিপরীতে বাংলার নিজস্ব শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও শিক্ষা-ভাবনা দ্বারা নতুন এক চৈতন্যোদয়ের ডাক দিয়েছিলেন। রাজনীতি আর সংস্কৃতির চিরায়ত স্রোতধারাকে এক মোহনায় টেনে এনেছিলেন। যে পথ ধরে হেঁটে হেঁটেই আমরা স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা পেয়েছি। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর বেহাত সেই পথের সন্ধানে চব্বিশের তরুণেরা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে নতুন সাংস্কৃতিক সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থান আমাদের সামনে নতুন বাংলাদেশি সংস্কৃতি গড়ার হাতছানি দিচ্ছে।
‘নাকের বদলে নরুন পাইলাম টাক ডুমাডুম ডুম
আর জান দিয়ে জানোয়ার পাইলাম লাগল দেশে ধুম।
আমার ভিটেয় চড়ল ঘুঘু ডিম দিল তোমাকে
সেই আজব ডিমের আজব শিশু খাস দিল্লিতে থাকে।’
মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী আহূত ১৯৫৭ সালের কাগমারী সম্মেলনে সুনামগঞ্জের গণসংগীতশিল্পী শ্রীকান্ত দাস সলিল চৌধুরীর এই গানটি গেয়ে শ্রোতাদের মন জয় করেছিলেন। সম্মেলনে আরও গান গেয়েছিলেন—রমেশ শীল, তসের আলী, মোছলেম, রাম সিং, মজিদ মিয়া, সুখেন্দু চক্রবর্তী, আব্বাস উদ্দিন, বেদারুদ্দিন, সোহরাব হোসেন, আসদ্দর আলী, মফিজ আলি, শাহ আব্দুল করিম, রাখাল সেন, পরিমল দাশগুপ্ত প্রমুখ। এছাড়া লাঠি, তরবারি, রামদার খেলা, নৃত্য, কবিগান, যাত্রাপালা, নাটক, কুটিরশিল্পজাত পণ্য দ্রব্যের প্রদর্শনী ও গ্রামীণ মেলার আয়োজন ছিল সম্মেলনজুড়ে। সাংস্কৃতিক সম্মেলনের ভেতর দিয়ে মওলানা ভাসানী সামাজিক, জাতিগত ও শ্রেণি-নিপীড়নের বিরুদ্ধে কৃষক জনগণের পক্ষে পূর্ব বাংলার শিল্পীদের সংগটিত করতে চেয়েছিলেন। মওলানার ইচ্ছা অনুযায়ী বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকেও দাওয়াত পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ‘কবির শারীরিক অবস্থার কারণে ভ্রমণ করা সম্ভব নয়’ বলে অনুমতি দেননি।
ঐতিহাসিক এই সম্মেলনের অফিশিয়াল নাম ছিল ‘পাকিস্তান সাংস্কৃতিক সম্মেলন’। আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনের রাজনৈতিক ডামাডোলের মাঝে সাংস্কৃতিক সম্মেলনের এই অধ্যায়টি অনেকটা চাপা পড়ে গেছে। ফেব্রুয়ারির ৭ ও ৮ তারিখ আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হলেও ৮, ৯ ও ১০ তারিখ ছিল সাংস্কৃতিক সম্মেলন পর্ব। ৮ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৩টায় কাগমারী সাংস্কৃতিক সম্মেলনের মূল পর্বের উদ্বোধন করা হয়। তৎকালীন প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগ প্রধান হিসেবে নয়, বরং সম্পূর্ণভাবে ব্যক্তি উদ্যোগে নিজেকে ‘জনগণের নগণ্য খাদেম’ উল্লেখ করে তিনি এই আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন।
সেখানে ভাষা, শিক্ষা, শিল্প, সাহিত্য, অর্থনীতি, ভূমিব্যবস্থা, কৃষি, রাসায়নিক শিক্ষা, নারীসহ বিশদ বিষয় ছিল আলোচনার বিষয়বস্তু। বিষয়ভিত্তক বক্তৃতা করেছেন দেশ-বিদেশের প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব। যেমন ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ (পাকিস্তানের ভাষা), ড. কুদরাত-এ-খুদা (পূর্ব পাকিস্তানের রাসায়নিক শিল্পের ভবিষ্যৎ উন্নতি), ড. মাহমুদ হোসেন (অন দ্য কনসেপ্ট অব ইসলামিক কালচার), ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেব (পূর্ব পাকিস্তানে বৌদ্ধ ধর্মের প্রভাব), ড. আখলাকুর রহমান (থটস্ অন দ্য ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাসপেক্ট অব দ্য ডেভেলপমেন্ট অব এগ্রিকালচার), শওকত ওসমান (আধুনিক বাংলা সাহিত্য), ড. মুহাম্মদ ওসমান গনি (বিকল্প খাদ্য উৎপাদনের সম্ভাবনা ও পন্থা), আবদুল হাকিম (পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষাব্যবস্থা), অধ্যক্ষ ওসমান গনি (পাকিস্তানে শিক্ষার মাধ্যম), ড. নুরুল ইসলাম (পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়ন), বিএম আব্বাস (সেচ ব্যবস্থা ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ), ড. সামসুদ্দিন আহমদ (অন হার্ট ডিজেস), ডা. এমএন নন্দী (পূর্ব পাকিস্তানের স্বাস্থ্যব্যবস্থা উন্নয়নে মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের ভূমিকা), মিসেস কুলসুম হুদা (পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের সাংস্কৃতিক যোগাযোগ) প্রভৃতি। বিদেশিদের মধ্যে অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন মিশর থেকে ড. হাসান হাবাসী (অন ইবন আল আসকালানী), কানাডা থেকে ড. চার্লস জে. অ্যাডামস (অন ইকবাল), ব্রিটেন থেকে ড. এফ এইচ কওসন (অন দ্য কালচারাল লাইফ অব গ্রেট ব্রিটেন), মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডেভিট গার্থ (অন দ্য কালচারাল লাইফ অব ইউএসএ), জনৈক জাপানি প্রতিনিধি (অন দ্য কালচারাল লাইফ অব জাপান), পশ্চিম পাকিস্তানের পুস্ত একাডেমির চেয়ারম্যান মওলানা আব্দুল কাদের (অন পুস্ত লিটারেচার), মাদাম আজুরি (অন আর্ট অব ডান্স), ভারতের হুমায়ুন কবীর (ভারতের সংস্কৃতিক জীবন)।
এছাড়া ভারত থেকে অন্যদের মধ্যে আলোচনা করেন কাজী আবদুল ওদুদ, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, নরেন্দ্র দেব, প্রবোধকুমার সান্ন্যাল, রাধারানী দেবী ও মিসেস সোফিয়া ওয়াদিয়া। সভাপতি ছিলেন ড. কাজী মোতাহার হোসেন।
ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের তৎকালীন প্রায় সব বয়সের প্রগতিবাদী লেখক, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, নাট্যকার, সংগীতজ্ঞ, সাংবাদিকসহ দেশের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেছিলেন এই সম্মেলনে। সাধারণ মানুষ মিলিয়ে সম্মেলনে উপস্থিত হয়েছিলেন কয়েক লাখ মানুষ। এই সম্মেলন থেকেই তিনি বাংলাদেশের মানুষকে প্রত্যক্ষভাবে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ও স্বায়ত্তশাসনের রাজনৈতিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেছিলেন, দিয়েছিলেন নতুন এক স্বদেশ-ভাবনা।
কাগমারী সাংস্কৃতিক সম্মেলনের ডেকোরেশনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল শিল্পী শফিকুল আমিন, জয়নুল আবেদিন, কামরুল হাসান প্রমুখের ওপর। জয়নুল আবেদিনের স্মৃতিভাষ্য অনুযায়ী, ‘খাওয়ার ব্যবস্থা সেখানেই—খিচুড়ি, লাউ-বেগুন প্রভৃতি সবজির তরকারি ও ডাল। সবার জন্য একই খাদ্য। বিখ্যাতদের জন্য আলাদা কোনো ব্যবস্থা হয়নি। মওলানা চাইতেন দেশের দরিদ্র কৃষক শ্রমিক সাধারণ মানুষের সঙ্গে বিখ্যাত কবি, গায়ক, কণ্ঠশিল্পী, লেখক ও চিত্রশিল্পীদের যোগাযোগ ঘটুক।’
যাতায়াতের সুবিধার্থে ঢাকার পল্টন থেকে টাঙ্গাইলের কাগমারী পর্যন্ত তিন টাকা ভাড়ায় বিশেষ বাস সার্ভিস নামানো হয়েছিল। সঙ্গে বিছানা ও মশারি নিয়ে যাওয়া আবশ্যক ছিল।
সম্মেলন উপলক্ষে টাঙ্গাইল শহর থেকে সন্তোষের কাগমারী পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার রাস্তায় বহু তোরণ নির্মিত হয়েছিল। তোরণগুলোর নামকরণ করা হয়েছিল বিশ্বমানবতার মুক্তির দূত বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) থেকে শুরু করে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় এবং ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী নেতাদের নামে। যেমন হজরত মুহাম্মদ (সা.), শাহ নাসিরুদ্দিন বোগদাদী (রহ.), মাওলানা হাসরত মোহানী, মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী, মাওলানা আজাদ সোবহানী, মহাত্মা গান্ধী, মাওলানা মোহাম্মদ আলী, মাওলানা শওকত আলী, কাজী নজরুল ইসলাম, মহাকবি আল্লামা ইকবাল, নেতাজী সুভাস বোস, হাজী শরিয়তউল্লাহ, শহীদ তিতুমীর, পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু, হাজী মোহাম্মদ মহসীন, চিত্তরঞ্জন দাস, লেনিন, স্ট্যালিন, মাও সেতুং, ওয়ার্ডস ওয়ার্থ, বায়রন, শেলি, কিটস্, মাওলানা রুমী, হজরত ঈমাম আবু হানিফা (রহ.), হজরত ঈমাম গাজ্জালী (রহ.), আবুজর গিফারি (রহ.), আলফেসানি (রহ.) প্রভৃতি। এভাবে ১০১টি (অনেকের মতে ৫১টি) তোরণের নামকরণ করেছিলেন মওলানা ভাসানী। সর্বশেষ তোরণটি ছিল কায়েদ-ই-আযম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ তোরণ।
কাগমারী সম্মেলন মওলানা ভাসানীর সাংস্কৃতিক বৈপ্লবিক চিন্তাধারার এক উজ্জ্বল ও অনন্য উদাহরণ। এই সম্মেলনের কাউন্সিল পর্বে তিনি পাকিস্তানের শোষকগোষ্ঠীকে উদ্দেশ করে ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক পর্বে শিক্ষা সংস্কৃতির নতুন জাগরণ ও গঠনের সূচনা করেছিলেন। আমাদের নিজস্ব ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে বিশ্ববাসীকে পরিচয় করিয়ে দিতে টাঙ্গাইলের সন্তোষ ও কাগমারীতে আয়োজন করেছিলেন এক মহাযজ্ঞের। দেশি-বিদেশি ভদ্রলোকদের টেনে এনেছিলেন চিরায়ত গ্রামবাংলার নিভৃত এই পল্লিতে। আবহমান বাংলার মাটি, মানুষ, জলবায়ু, আবহাওয়া, ইতিহাস, ঐতিহ্য, কৃষ্টি, সভ্যতা ও সংস্কৃতির শেকড় কত গভীর ও সমৃদ্ধ, তাই তিনি উপলব্ধি করাতে চেয়েছেন সবাইকে। গ্রামের খেটে খাওয়া মেহনতি মানুষের ওপর থেকে শোষণের জগদ্দল পাথর সরাতে একত্র করেছিলেন কবি, সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তি, রাজনীতিকসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষের জাগ্রত কণ্ঠস্বরকে।
সাংস্কৃতিক সম্মেলনে তিনি ব্রাহ্মণ্যবাদী ও আধিপত্যবাদী সংস্কৃতির বিপরীতে বাংলার নিজস্ব শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও শিক্ষা-ভাবনা দ্বারা নতুন এক চৈতন্যোদয়ের ডাক দিয়েছিলেন। রাজনীতি আর সংস্কৃতির চিরায়ত স্রোতধারাকে এক মোহনায় টেনে এনেছিলেন। যে পথ ধরে হেঁটে হেঁটেই আমরা স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা পেয়েছি। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর বেহাত সেই পথের সন্ধানে চব্বিশের তরুণেরা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে নতুন সাংস্কৃতিক সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থান আমাদের সামনে নতুন বাংলাদেশি সংস্কৃতি গড়ার হাতছানি দিচ্ছে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইছ উদ্দীন বলেছেন, ছাত্রদল নেতা ও পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী জোবায়েদ হোসাইন হত্যাকাণ্ডে প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে—কেউ যেন আইনের ফাঁক দিয়ে কেউ বেরিয়ে না যায়।
৭ মিনিট আগেঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী রিয়াদ হাসানের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বোরকা ও পর্দাশীল নারীদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করার অভিযোগ উঠেছে। এই মন্তব্যের নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রীসংস্থা।
১ ঘণ্টা আগেসমাবেশে জোবায়েদের সহপাঠী সজল খান বলেন, “পুলিশ এখনো বর্ষার পরিবারের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করেনি। শুধু বর্ষা ও মাহির নয়, এই ঘটনায় বর্ষার পরিবারও জড়িত। গতকাল আদালতে আমাদের সঙ্গে পুলিশের আচরণ ছিল অমানবিক। আমাদের এক বান্ধবী ভিডিও করতে গেলে তার ফোন কেড়ে নেওয়া হয়। আমরা পুলিশের এই আচরণের তীব্র নিন্দা জানাই।”
১ ঘণ্টা আগেসামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ আইনের মামলায় বুয়েটের ২১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী শ্রীশান্ত রায়কে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে মামলার তদন্ত কর্মকর্তার উপস্থিতিতে জামিনের বিষয়ে অধিকতর শুনানির জন্য আগামীকাল বৃহস্পতিবার দিন ধার্য করেন বিচার
১ ঘণ্টা আগে