আমার দেশ জনপ্রিয় বাংলা নিউজ পেপার

৮ জানুয়ারি থেকে ৭ ফেব্রুয়ারিতে মেলা আয়োজনের বিকল্প প্রস্তাব

ডিসেম্বরে একুশে বইমেলা: ক্ষোভ ও শঙ্কায় প্রকাশকরা

স্টাফ রিপোর্টার
ডিসেম্বরে একুশে বইমেলা: ক্ষোভ ও শঙ্কায় প্রকাশকরা

জাতীয় নির্বাচন ও পবিত্র রমজানের কারণে অমর একুশে বইমেলা এ বছরের ১৭ ডিসেম্বর থেকে আগামী বছর ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। গত বৃহস্পতিবার বাংলা একাডেমিতে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মফিদুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

তবে বইমেলার স্থায়ী ও কার্যকর কোনো নীতি প্রণয়ন না করে এবং সৃজনশীল ও বৈষম্যবিরোধী প্রকাশকদের মতামত না নিয়েই দেড় মাস এগিয়ে এই তারিখ নির্ধারণে সংশ্লিষ্ট মহলে চরম ক্ষোভ ও শঙ্কা বিরাজ করছে। অভিযোগ উঠেছে, সিদ্ধান্ত গ্রহণে পতিত ফ্যাসিবাদের দোসর প্রকাশকদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এদিকে নির্বাচন ও রমজানের কারণে প্রকাশকদের মধ্য থেকে এই মেলা ৮ জানুয়ারি থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত করারও প্রস্তাব করা হয়েছে।

এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী সৃজনশীল গ্রন্থ প্রকাশক সমিতির সভাপতি সাঈদ বারী আমার দেশকে বলেন, আমাদের প্রস্তাব স্পষ্ট, অমর একুশে গ্রন্থমেলা ৮ জানুয়ারি থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাসব্যাপী আয়োজন করা হোক। এতে লেখক-প্রকাশক পর্যাপ্ত সময় ও প্রস্তুতি পাবেন, মানসম্মত বই প্রকাশ হবে, আর পাঠক পাবেন এক প্রাণবন্ত উৎসবের আমেজ।

তিনি বলেন, অমর একুশে বইমেলা একুশের চেতনায় জীবন্ত থাকে। তাই একে তড়িঘড়ি করে নয়, বরং পরিকল্পিত ও মর্যাদাপূর্ণভাবে আয়োজন করা আমাদের সবার দায়িত্ব। একুশের আত্মত্যাগকে সম্মান জানাতে হলে আমাদের সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও সত্য, শৃঙ্খলা ও মান বজায় রাখতে হবে আপসহীনভাবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০২৫ সালের মেলা শেষে প্রতিশ্রুতি ছিল, অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে একটি পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। সেই সভার আলোচনার ভিত্তিতে ২০২৬ সালের নীতি তৈরি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাস্তবে হলো উল্টো চিত্র—কোনো পর্যালোচনা সভাই হয়নি। অভিজ্ঞতা ও ত্রুটি বিশ্লেষণ না করেই বাংলা একাডেমি ২০২৬ সালের কার্যক্রম শুরু করেছে।

নতুন সময়সূচিতে লেখকদের সংকট প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, বছরের শেষ প্রান্তে লেখকরা সাধারণত তাদের নতুন বইয়ের কাজ শেষ করেন। ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতেও অনেকে পাণ্ডুলিপি লিখেন, সম্পাদনা করে চলেন। হঠাৎ সময় এগিয়ে দিলে বেশির ভাগ বই অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। যারা কোনোভাবে শেষ করবেন, তাদের বইও তাড়াহুড়ো করে প্রকাশকের হাতে যাবে। ফলে প্রুফরিডিং, সম্পাদনা, কভার ডিজাইনÑসবই হবে অগোছালো ও মানহীন।

অন্যদিকে প্রকাশকদের দুরবস্থা প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলেন, মেলা দেড় মাস আগে হলে প্রকাশকরা চরম চাপের মুখে পড়বেন। সীমিত সময়ে বিপুল পরিমাণ বই ছাপাতে গিয়ে ছাপাখানায় অস্বাভাবিক ভিড় হবে, ছাপার ভুল বাড়বে। এর সঙ্গে যুক্ত হবে প্রচারের সীমাবদ্ধতা। এসব কারণে পাঠকরাও বই কিনে বড় ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে সংশ্লিষ্টদের অভিমত।

বাংলাদেশ সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ইকবাল হোসেন সানু বলেন, ফেব্রুয়ারির সঙ্গে একুশের চেতনার অবিচ্ছেদ্য যোগ রয়েছে। ডিসেম্বর মাসে মেলা করলে সেই ঐতিহ্য ও মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হওয়ার আশঙ্কা প্রবল। বেশির ভাগ প্রকাশকদের মতে ৮ জানুয়ারি থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি সময়সীমা বইমেলার জন্য একেবারেই উপযুক্ত। এ সময় রোজা নেই, বড় কোনো ধর্মীয় উৎসবও নেই। জাতীয় নির্বাচন নেই।

বৈষম্যবিরোধী সৃজনশীল গ্রন্থ প্রকাশক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হাসান আমার দেশকে জানান, বাংলা একাডেমি সৃজনশীল প্রকাশকদের দুটি সংগঠন ‘বৈষম্যবিরোধী সৃজনশীল গ্রন্থ প্রকাশক সমিতি’ ও ‘বাংলাদেশ সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি’র সঙ্গে কোনো আলোচনা না করেই আগামী একুশে বইমেলার তারিখ ঘোষণা করেছে। অথচ গত বইমেলায়ও এই দুই সংগঠনের নেতারা প্রতিনিধিত্ব করেছেন।

বাংলাদেশ সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. গফুর হোসেন বলেন, জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতেই অমর একুশে বইমেলা হওয়া উচিত। এটি শুধু একটি মেলা নয়—ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি, শহীদদের আত্মত্যাগের প্রতীক, সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র এবং জাতিসত্তার গর্ব। তাই এই আয়োজনের যথার্থতা, মর্যাদা ও শৃঙ্খলা রক্ষা করা আমাদের সবার দায়িত্ব। বাংলা একাডেমি আবারও প্রমাণ করল—তাদের কাছে এই বইমেলা কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা।

তিনি বলেন, প্রকাশকরাই বইমেলার প্রাণ, যারা তাদের মূলধন, শ্রম ও মেধা ঢেলে বই প্রকাশ করেন। তাদের বাদ দিয়ে শুধু কিছু নির্বাচিত লোকের মাধ্যমে মেলা পরিচালনা করার চেষ্টা হচ্ছে, যা প্রকাশকদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়াচ্ছে।

মহাকাল প্রকাশক মৃধা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, বাংলা একাডেমির এই আচরণে আমরা হতাশ। যে বাংলাদেশ পুস্তক সমিতির (বাপুস) সভাপতি স্বৈরাচারের দোসর হওয়ার কারণে জুলাই বিপ্লবের পরে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন সেই সভাপতির সার্বক্ষণিক দোসরদের সঙ্গে নিয়ে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মেলার যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।

তিনি বলেন, বাপুস মূলত অবৈধ নোট বই, গাইড বই ও লাইব্রেরি ব্যবসায়ীদের সংগঠন। আর বাংলা একাডেমির মেলা হচ্ছে সৃজনশীল পুস্তকের মেলা। এ মেলার ভালো-মন্দ বিষয়গুলো সৃজনশীল প্রকাশকরাই ভালো বুঝবেন। সৃজনশীল প্রকাশকদের তিন সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনাসাপেক্ষে একটি সার্থক ও সুন্দর মেলা আয়োজন করার আহবান জানান তিনি।

Google News Icon

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন