মানুষ মূলত ট্রেন

ইয়াছিন ইবনে ফিরোজ
প্রকাশ : ২৮ জুন ২০২৫, ১৩: ২৯

শেষ ট্রেনটা আজও আসেনি। রাত্রি ১০টা বেজে ৩৩। ট্রেনটা আসার কথা ছিল ন’টায়। তবুও কেওড়া বাজার ইস্টিশানটা নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে আছে—কোনো অভিযোগ নেই, কোনো ব্যস্ততা নেই। একটু দূরে একটি চায়ের দোকানে সিগারেট ফুঁকতে ফুঁকতে বসে আছে সেই ছেলেটি, নাম সায়েম। বয়স ত্রিশের কাছাকাছি, চেহারায় অভিমানী ধৈর্যের ছাপ। চার বছর ধরে সে এই ইস্টিশানেই পড়ে আছে, কিন্তু কেউ জানে না সে কার জন্য অপেক্ষা করছে। চায়ের দোকানি ফজলু কাকা প্রথম দিনেই বলেছিলেন, ‘বাবা, ট্রেন তো প্রতিদিনই আসে, মানুষও আসে, আপনি কি কাউকে খুঁজছেন?’

সায়েম শুধু হেসেছিল। একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলেছিল, ‘যে চলে যায়, সে কি আর ফিরে আসে, কাকা?’

বিজ্ঞাপন

ফজলু কাকা চুপ করে গিয়েছিলেন। ইস্টিশানে যারা অপেক্ষা করে, তাদের অতিরিক্ত প্রশ্ন করা উচিত নয়, এমন একটা অদৃশ্য নিয়ম যেন আছে এখানে। চার বছর আগে সায়েম আর নীরার একটি ট্রেনের গল্প শুরু হয়েছিল এই স্টেশনে।

নীরা ছিল সাহসী, শহরের মেয়ে। আর সায়েম নির্জন গ্রামের রেলগেট কেবিনে ডিউটি করা একান্ত নির্লিপ্ত তরুণ। দুজনের দেখা হয়েছিল এক সন্ধ্যায়, ট্রেন বদল করতে গিয়ে যখন নীরা হারিয়ে গিয়েছিল । সায়েম তার জন্য পথ খুঁজে দিয়েছিল, আর নীরা রেখে গিয়েছিল একটি চিঠি—‘যদি একদিন এই ট্রেন মিস করি, তুমি কি অপেক্ষা করবে?’ সে দিনটি এসেছিল। নীরা একদিন সত্যিই ট্রেন মিস করেছিল, কিন্তু ফিরে আসেনি।

বর্তমানে সায়েম জানে, তার জীবনের ট্রেনটা অনেক আগেই প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে গেছে। তবুও সে এতদিন ধরে এখানেই আছে একটা আশা নিয়ে—যদি কখনো আসে। সেই নির্দিষ্ট বেঞ্চিতে বসে। তার হাতে একটা পুরোনো নীল খাম, যেখানে সেই চিঠিটা এখনো সযত্নে রাখা। আজ হঠাৎ আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামল। লোকজন দৌড়ে পালাল, স্টেশন হয়ে পড়ল ফাঁকা। সায়েম শুধু মাথার ওপর খামটা ধরে রেখে বসে রইল, হঠাৎ একটা মৃদু কণ্ঠস্বর শুনল পেছন থেকে—‘এই জায়গাটা কি এখনো ফাঁকা আছে?’

সে ধীরে ধীরে পেছনে ফিরে তাকাল। চোখে-মুখে ও শরীরে জলের ছাপ; কিন্তু চেনা, শুধু চেনা নয়, ভয়ানক চেনা সেই চোখ, সেই মেঘমন্দ্র কণ্ঠস্বর—নীরা!

মেয়েটি চার বছর পরে ফিরে এলো। সায়েম চোখ কচলে দেখে, ভুল দেখছে না তো? বৃষ্টির ছাঁদ ভেদ করে দাঁড়িয়ে আছে নীরা—চোখে কালি, কাঁধে একটি ছোট ব্যাগ, আর মুখে একরাশ অনিশ্চয়তা। সে কিছু বলার আগেই নীরাই বলল, ‘তুমি! তুমি কি এখনো অপেক্ষা করো?’ সায়েম কিছু বলল না। মাথা নিচু করে শুধু খামটা নিজের পকেটে গুঁজে রাখল। চায়ের দোকানি ফজলু কাকা তখন দূর থেকে তাকিয়ে—চোখে বিস্ময় আর অশ্রু। চার বছর, এটা কোনো সময়ের মাপকাঠি নয়, এটা অনেকটা প্রেমে হারিয়ে যাওয়া একটা মহাদেশ। নীরা বসে পড়ল সায়েমের পাশে। দুজনের মাঝে এক ফাঁকা হাত ব্যবধান। চুপচাপ বসে থাকে দুজন। শুধু ট্রেন আসার ঘোষণা আর বৃষ্টির শব্দে ভিজে ওঠে পুরো স্টেশন। হঠাৎ নীরা বলে, ‘আমি ভুল করেছিলাম, খুব বড় ভুল।’

তুমি চলে গিয়েছিলে, সায়েম ধীরে বলে, আমার জীবনটা আটকে গিয়েছিল এই স্টেশনে।

নীরার গলা ধরে আসে। ‘আমি ফিরিনি কারণ আমি তোমাকে ভালোবাসতাম, কিন্তু আমার বাবা চাননি তুমি তার মেয়ের জীবনে থাকো; বলেছিলেন, রেলগেট কিপারের ঘরে নাকি ভালোবাসা টিকবে না। তোমার ইচ্ছে? ভালোবেসেছিলাম, তাই যুদ্ধ করেছিলাম; কিন্তু হেরে গিয়েছিলাম।’

সায়েম মাথা ঘুরিয়ে তাকায়, চোখে জল নেই, আছে গভীরতা।

তাহলে এখন? এখন তুমি যদি বলো ‘চলে যাও’, আমি যাব। যদি বলো, ‘থেমে যাও’, আমি থাকব।’ চার বছর আগে, যে প্রশ্নটা লেখা ছিল চিঠিতে। তুমি কি অপেক্ষা করবে? আজ তার উত্তর খুঁজে নিচ্ছে নীরা।

ঠিক তখন স্টেশনে ঘোষণা দেওয়া হয়—পূর্বাঞ্চল এক্সপ্রেস ১০ নম্বর প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ করছে। নীরা চোখ মেলে চায় সায়েমের দিকে। এই সেই মুহূর্ত, একটা ট্রেন আসবে। কেউ উঠবে, কেউ থেকে যাবে। এবার সিদ্ধান্ত সায়েমের। সে ধীরে পকেট থেকে সেই পুরোনো খামটা বের করে, খোলার চেষ্টা না করেই দিয়ে দেয় নীরার হাতে—‘যাও। যদি মন চায়, আবার এসো। আমার এই ইস্টিশানে এখনো কিছু গল্প অসমাপ্ত পড়ে আছে।’

নীরা ট্রেনের দিকে এগোয়। হঠাৎ সে থেমে যায়। পেছনে ফিরে বলে, ‘এবার এসো তুমিও। ইস্টিশানের সব গল্প একা লিখলে কষ্ট হবে। ট্রেনের দরজা খোলা।’

একটা নতুন অধ্যায়ের শুরু আর ইস্টিশানের সাদা বেঞ্চে পড়ে থাকে খালি এক কাপ চায়ের গন্ধ।

ট্রেন এসে থামল ঠিক সময়েই। নীরা দাঁড়িয়ে আছে দরজার মুখে। সায়েম যেন এখনো দ্বিধায়। সে তাকিয়ে আছে ট্রেনের দিকে, তারপর নীরার দিকে। এই মেয়েটি তাকে শূন্য করে দিয়ে ফিরে এসেছে, আবার তার হৃদয়ের সমস্ত সুরটাও বেজে উঠেছে আজ। ঠিক সেই সময়, পেছন থেকে একটি কণ্ঠ ভেসে এলো, ‘ভাই, একটা সিগারেট দিন তো।’

সায়েম ঘুরে তাকিয়ে দেখে, ১৮-১৯ বছরের এক ছেলে, পরনে ময়লা জিন্স, গলায় গিট্টু দেওয়া গামছা; চোখে ক্লান্তি, মুখে কৌতূহল। ফজলু কাকার দোকানে দাঁড়িয়ে চেয়ে আছে ছেলেটা। সায়েম ওর চোখে নিজের পুরোনো ছায়া দেখতে পায়।

কখনো কি ওর মতো করেও কেউ কাউকে ভালোবেসেছিল? অপেক্ষা করেছিল? ট্রেনের বাঁশি বাজে। নীরা ধীরে ধীরে দরজায় পা রাখে। আর ঠিক তখন সায়েম তার হাত ধরে বলে, ‘চলো।’

নীরা বিস্ময়ে চায় তার দিকে—‘তুমি নিশ্চিত?’

সায়েম হাসে। ‘ইস্টিশানের গল্প একা লেখা যায় না, বলেছিলে না? আজ থেকে আমরা দুজনে মিলে লিখি।’

দুজনেই ট্রেনে ওঠে। ট্রেন ধীরে ধীরে চলতে শুরু করে। ফজলু কাকা দূর থেকে হাত নাড়ে। বৃষ্টির মধ্যে সেই ছোট ছেলেটা চোখে বিস্ময় নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।

ট্রেনটা যেন রাতভর গল্প বলতে বলতে চলছিল।

নীরা আর সায়েম পাশাপাশি বসে। কেউ কিছু বলে না, তবু যেন অনেক কিছু বলা হয়ে যাচ্ছে নিঃশব্দে। নতুন শহরের নাম চন্দ্রনগর। একটি ছোট্ট জেলা শহর, অথচ এখানে আছে জীবনের এক নতুন প্ল্যাটফর্ম। স্টেশন থেকে নেমেই দুজনে দেখে, শহরের কোলাহল এখানে কম, কিন্তু মানুষের মুখে আছে অন্যরকম ব্যস্ততা।

সায়েম ব্যাগ হাতে এগোয়, নীরা তাকে অনুসরণ করে।

তারা কোনো হোটেলে ওঠেনি, গিয়েছে একজন বিশেষ মানুষের বাড়ি। সায়েমের ছোটবেলার বন্ধু ইফতেখার। একটা এনজিওতে চাকরি করে, মানুষের জীবন বদলে দেওয়ার স্বপ্ন দেখে। ইফতেখারের বাড়ি চন্দ্রনগর। ইফতেখার হাঁ করে তাকিয়ে নীরাকে দেখে। ‘এই সেই নীরা? যে চার বছর আগে ট্রেন মিস করেছিল?’

নীরা মুচকি হাসে। ‘এবার ঠিক সময়েই ট্রেনে উঠেছি। কেউ একজন ধরে রেখেছিল।’

তিনজন মিলে শুরু করে গল্প। ইফতেখার বলে, ‘এই শহরে তোমরা থাকো। এখানে একটা স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে, আর এনজিওতেও ভালো কাজ পাওয়া যাবে।’

সায়েম চুপ করে। শহর, চাকরি, স্থায়িত্ব—সবকিছু তার কাছে অপরিচিত। তবে তার সবচেয়ে বড় ভয় এই শহরে তো কোনো স্টেশন নেই! এখানে কেউ অপেক্ষা করে না, কেউ থেমে থাকে না। সবাই চলতে থাকে অদম্য গতিতে। পরদিন সকালে নীরা ব্যাগ হাতে স্কুলে যায় ইন্টারভিউ দিতে। সায়েম হাঁটতে হাঁটতে চলে যায় শহরের এক কোণে, সেখানে একটা পুরোনো রেললাইন দেখা যায়, যা বহুদিন ব্যবহার করা হয়নি। ঘাসে ঢেকে গেছে ট্র্যাক, সিগন্যাল ভাঙা। সে বসে পড়ে লাইন ধরে চোখ বন্ধ করে শুনতে চায় একটা পুরোনো বাঁশির শব্দ। হঠাৎ কারো কণ্ঠ ভেসে আসে পেছন থেকে—‘আপনি কি রেলওয়ে থেকে এসেছেন?’

সে ফিরে দেখে এক বৃদ্ধ লোক, হাতে ক্যামেরা। লোকটা বলেন, ‘আমি এই পরিত্যক্ত লাইন নিয়ে ডকুমেন্টারি বানাচ্ছি। আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে আপনার ভেতরে একটা ট্রেন লুকিয়ে আছে। সায়েম হেসে ফেলে। সে বুঝতে পারে, স্টেশন শুধু একটা জায়গা নয়, স্টেশন হলো মন—যেখানে দাঁড়িয়ে মানুষ অপেক্ষা করে, স্বপ্ন দেখে, হারায় আবার খুঁজে পায়। সায়েম চুপ করে বসে থাকে পরিত্যক্ত রেললাইনের ধারে। চারদিকে কেবল ঘাস, আগাছা আর ইতিহাসের নৈঃশব্দ্য। কিন্তু সেই ক্যামেরা-ধরা বৃদ্ধ লোকটা আবারও ফিরে আসেন হাতভর্তি ছবি, পুরোনো রেল স্লিপার, রুক্ষ নোটবুকসহ; আর লোকটার নাম শওকত হোসেন। তিনি একসময় রেলের ইতিহাস লিখতেন পত্রিকায়। এখন পুরোনো স্টেশন, পরিত্যক্ত ট্র্যাক আর লোককাহিনি নিয়ে একটি বই লিখছেন—‘হারিয়ে যাওয়া স্টেশনের ডায়েরি’। তিনি বলেন, ‘এই যে রেললাইন, একসময় এখানে থামত ‘মেঘবর্ণ এক্সপ্রেস’। লোকজন ভোরে উঠে আসত—কেউ কাউকে বিদায় দিত, কেউ কাউকে আবার দেখার অপেক্ষায় থাকত। এখন শুধু অপেক্ষার স্মৃতি পড়ে আছে।’

সায়েম নীরব। সে জানে, এই লাইন আর কোনোদিন সচল হবে না, তবু এর বুকেই তো আছে অসংখ্য মানুষের ভালোবাসা আর বিদায়ের কান্না।

নীরা স্কুলে ইন্টারভিউ দিতে গেছে। প্রধান শিক্ষক কিছুটা অবাক হয় শোনে, ‘আপনি ঢাকার মেয়ে হয়ে চন্দ্রনগরে থাকতে চান?’

নীরা হাসে, ‘কখনো কখনো শহর নয়, মানুষই আমাদের ঠিকানা হয়ে যায়।’

চাকরি হয়। একটা ছোট্ট স্কুল, গ্রামের পাশেই। বাচ্চারা প্রথম দিনেই জড়িয়ে ধরে। নীরার চোখে জল চলে আসে। সে বুঝতে পারে, সে শুধু ফিরে আসেনি, সে খুঁজে পেয়েছে নতুন রেললাইন।

রাতে সায়েম ফিরে আসে ইফতেখারের বাসায়। নীরা তার চোখে দেখে একটা অদ্ভুত প্রশান্তি। ‘কি ভাবছ?’ একজন মানুষ দেখলাম আজ, যার জীবন পুরোনো স্টেশন নিয়ে কাটে। তিনি বলেন, ‘রেললাইন কখনো সত্যিই মরে না, শুধু ঘুমিয়ে পড়ে; ঠিক আমাদের ভালোবাসার মতো।’

নীরা ধীরে সায়েমের কাঁধে মাথা রাখে—‘আমরা কি তবে ঘুমিয়ে থাকা একটা স্টেশন?’ সায়েম বলে, ‘না, আমরা সেই যাত্রীর মতো, যে জানে সে কোথায় নামবে; কিন্তু অপেক্ষা করে ঠিক সেই স্টেশনের জন্য।’

চন্দ্রনগরে বর্ষার বৃষ্টি কখনো নিঃশব্দ, কখনও বজ্রসহ।

আজকের বৃষ্টিটা যেন অতীতের কোনো দুঃস্বপ্ন ঝরিয়ে দিতে চাইছে। নীরা বসে আছে জানালার পাশে। স্কুলে ক্লাস নেওয়ার ফাঁকে তার চোখ চলে যায় দূরের সবুজ মাঠ আর রেললাইনের দিকে। তার মনে হয়, এই শহরে তার উপস্থিতি যেন একটি পুরোনো পৃষ্ঠার ওপর লেখা নতুন কবিতা। কিন্তু কবিতার প্রতিটি লাইনে এখনও সায়েমের নিঃশব্দ প্রশ্নগুলো জমে আছে। সায়েম আজকে রেললাইনের ধারে নেই। সে গেছে শহরের এক পুরোনো আর্কাইভ অফিসে। সেখানে ধুলোমাখা রেজিস্টারে সে খুঁজছে সেই স্টেশনের ইতিহাস, যেটার অস্তিত্ব সরকারি খাতায় ‘অকার্যকর’ ঘোষণা করা হয়েছে ১০ বছর আগে। পরের দিনের সকালটা কেমন যেন শান্ত হয়ে আছে। চন্দ্রনগরের সেই পুরোনো রেলস্টেশনে আজ ব্যতিক্রমী ব্যস্ততা। একটা ছোট ব্যানার ঝুলছে ছেঁড়া ছাউনির গায়ে—প্রতীক্ষার স্মৃতিস্তম্ভ: ভালোবাসা যেখানে থামে না, শুধু অপেক্ষা করে। সায়েম দাঁড়িয়ে আছে একপাশে। পাশে শওকত হোসেন, হাতে ধরা নতুন ছাপা বই—‘হারিয়ে যাওয়া স্টেশনের ডায়েরি’। পৃষ্ঠার পৃষ্ঠায় উঠে এসেছে চন্দ্রনগরের উপেক্ষিত ট্র্যাকের গল্প—সেইসব যাত্রীর মুখ, যারা কখনো গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেনি, কিংবা ফিরতে পারেনি নিজের স্টেশনে। আজ এই জায়গাটায় একটা ছোট্ট লাইব্রেরি হচ্ছে, যেখানে থাকবে সেই ট্রেনের ইতিহাস, অপেক্ষার কবিতা, প্রিয়জনের চিঠি আর একটি বিশেষ ঘর, যার নাম—‘নীরা কর্নার’। নীরা আজ শিক্ষার্থী ও কিছু স্থানীয় নারীকে নিয়ে এসেছে স্টেশনে। তারা সবাই মিলে রঙ তুলছে দেয়ালে। একটা বিশাল ট্রেনের ছবি, কিন্তু এই ট্রেনে কোনো যাত্রী নেই।

শুধু জানালায় লেগে আছে হাতের ছায়া, চুল উড়ছে হাওয়ায়, আর মুখে লেখা একটা বাক্য—‘ভালোবাসা কখনো সময়ের সঙ্গে থেমে যায় না। সে অপেক্ষা করে, যতক্ষণ না কেউ তাকে ছুঁয়ে বলে আমি এসেছি।’ একটি ছোট্ট মুহূর্তও মূল্যবান। সায়েম ধীরে নীরার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। তার হাতে একটা পুরোনো ট্রেনের টিকিট। এইটা দেখো, ২০১৯ সালের, ঢাকা থেকে চন্দ্রনগরের একমাত্র লোকাল ট্রেনের শেষ টিকিট।

‘এই ট্রেনেই তুমি গিয়েছিলে।’ নীরার চোখ ছলছল করে ওঠে। সে জানত না সায়েম এত যত্ন করে ধরে রেখেছে সেই দিনটাকে। সায়েম বলে, ‘আজ আমরা এখানে নতুন একটা স্টেশন শুরু করলাম, যেখানে প্রতিটি মানুষ—যার অপেক্ষা অসম্পূর্ণ, সে এসে একটু বসতে পারবে, একটু কাঁদতে পারবে। আর কেউ যদি চায়, তবে শুরু করতে পারবে আবার।’

নীরা বলে, ‘তোমার সঙ্গে জীবনটা যেন একটা নীরব যাত্রা। গন্তব্য জানা নেই, শুধু জানি তুমি আছ পাশে।’

সায়েম হেসে বলে, ‘আমরা স্টেশন নই, আমরা ট্রেন। সবসময় চলতে থাকব, কিন্তু ঠিক জানি কোথায় থামব, তোমার পাশে, শেষ স্টেশনে যেটার নাম ভালোবাসা।’

কবি ও গল্পকার

বিষয়:

ট্রেনচা
এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত